গরুর বাদলা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

বাদলা রোগ

গবাদিপশুর মারাত্মক রোগগুলোর মধ্যে বাদলা বা ব্লাক কোয়াটার (Black Quarter) একটি অন্যতম। এ রোগে পশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ মৃত্যুর হার ১০০ ভাগই। প্রতি বছর বিশেষত বর্ষার পরে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় অনেকাংশে। বাংলাদেশের অনেক গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ।

কারণ ঘাতক এ রোগটির জন্য দায়ী ক্লোস্টোডিয়াম চোউভি (Clostridium chauvoei) নামক ব্যাকটেরিয়া। এটা গ্রাম পজিটিভ, অবায়ুরোধী, স্পোর সৃষ্টিকারী দ-াকৃতির ব্যাকটেরিয়া। এ জীবাণু সহজেই সংক্রামিত হতে পারে।

রোগতত্ত্ব-এপিডেমিওলজি : মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা প্রায় সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে। তবে কিছু কিছু দেশে তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে  কম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ রোগের প্রকোপ বেশি। বিশেষত বর্ষাকালে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর পরই এর প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায়।
এটি এমন রোগ যা সাধারণত হৃষ্টপুষ্ট পশুতেই বেশি হয়ে থাকে। যাদের বয়স ৬ মাস থেকে ১/২ বছরের মধ্যে। এ সময় গরুর মাংস পেশি অনেক ভালো থাকে। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলেই খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে রোগের পরিণাম ঘটিয়ে থাকে।   

ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এ রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে এর সংখ্যা তুলনামূলক খুবই কম থাকে। চিকন পশুর চেয়ে মোটা পশুতেই এর প্রকপ বেশি লক্ষণীয়।
গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ১০ বছর পর এ রোগের সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।  

বাদলা রোগ যেসব ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে তা হলো বয়স বাদলা রোগের ক্ষেত্রে বয়সের হিসাব নিকাশ খুবই বেশি। সাধারণত এ রোগে গরুর ক্ষেত্রে ৩ মাস থেকে ২ বছরেই বেশি হয়।

খাদ্য : বেশি পুষ্টি সম্পন্ন পশুর ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি হয় ।

যেসব প্রাণী আক্রান্ত হয় : বাদলা বা ব্লাক কোয়াটার সাধারণত গরু, ছাগল, ভেড়া মহিষসহ অন্যান্য প্রাণীতেও হয়ে থাকে।

যেভাবে রোগের বিস্তার ঘটে : দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে।
ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এ রোগের জীবাণু বিভিন্ন ধরনের ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে যেমনÑ শিং কাটার সময়, খাসি করার সময়, বাচ্চা প্রসবের সময় এবং অন্যান্য অপারেশনের সময় বা অপারেশনের পরে।
স্পোরযুক্ত ঘাস বা অন্যান্য লতাপাতা গ্রহণের ফলে।

রোগ জননতত্ত্ব : স্পোর অবস্থায় এ রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। অন্ত্রের অবায়বীয় স্থানে স্পোর ভেজিটেটিভ জীবাণুতে রূপান্তরিত হয়। পরে পচনশীল পদার্থের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ জীবাণু রক্তে প্রবেশ করে। আর বৈশিষ্ট্য গত কারণেই এ ব্যাকটেরিয়া পুরু মাংসপেশির প্রতি আসক্ত। তাই প্রধানত গ্লুটিয়াল, ঘাড়ের পেশিতে অবস্থান গ্রহণ করে। পরে সারকোল্যাকটিক এসিড বৃদ্ধির ফলে জীবাণুর বংশ বৃদ্ধির হার বেড়ে যায় অনেকাংশে।
এ জীবাণুর দ্বারা সৃষ্ট বিষ বা টকসিন (Hemolysis) আক্রান্ত পেশির মৃত্যু ঘটায়। এতে পেশির কোয়াগুলেশনসহ সিরোহেমোরেজিক প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ফলে গ্লুকোজ ফার্মান্টেড (Fermented) হয়ে এসিড ও গ্যাস উৎপন্ন হয়।

লক্ষণ
বাদলা রোগের লক্ষণ কয়েকটি অংশে ভাগ করা যায়। যথাÑ
১. অতি তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পশু মারা যায়। এমনকি ১-২ ঘণ্টার মধ্যে পশু কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই মারা যায়।
২. তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে-

  • প্রথমত পশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • পশুর আক্রান্ত পায়ের ফলে সে খোঁড়াতে থাকে এবং মারাত্মকভাবে বিষণœ দেখায়;
  • আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে, মাংসপেশিতে গরম অনুভূতি হয়;
  • ফুলে উঠা যায়গায় হাত দিয়ে চাপ দিলে পুরপুর শব্দ করে। প্রথমে অল্প জায়গা ফুলে উঠে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত তা ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিছু সময় চামড়ার ওপর ঠাণ্ডা অনুভূত হয় রক্ত চলাচল বন্ধ থাকার জন্য।
  • আক্রান্ত স্থানে ফুটা করলে প্রচ- দুর্ঘন্ধযুক্ত কালো রক্ত দেখা যায়;
  • শরীরের যে কোনো অংশের মাংসপেশিতে আক্রান্ত হতে পারে, তবে ঘাড় ও চোয়ালের পেশিতে বেশি দেখা যায়।
  • অনেক সময় দেখা যায় আক্রান্ত জায়গার পেশিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে কালো রঙের রক্ত ঝরতে থাকে।
  • বাদলা রোগের জীবাণু চামড়ার নিচে গ্যাস উৎপন্ন করে থাকে;
  • গলার কাছে ফুলা অধিক হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়;
  • পেটে গ্যাস জমা হয় এবং মাজেল শুকিয়ে যেতে থাকে;
  • পশুর খাওয়া দাওয়া ও জাবর কাটতে বেশ সমস্যা হয়।

রোগ নির্ণয় : বাদলা রোগ নির্ণয় করা সহজ হয় যদি এর ইতিহাস নেয়া যায় । যেমন পশুর বয়স যদি ৬ মাস থেকে ২ বছর হয় তাহলে বাদলা হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি থাকে। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপসর্গ যেমনÑ জ্বর, খোঁড়ানো এবং আক্রান্ত মাংসপেশি টিপলে পুর পুর শব্দ হয়। পশুকে বাদলা টিকা দেয়া না হয়ে থাকলে এবং পশু স্বাস্থ্যবান হলে। এসব লক্ষণ দেখে অনেকটাই বাদলার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। মৃত পশুর ময়নাতদন্তে প্রাপ্ত ফল দেখে- আক্রান্ত পেশির টিপলে পুর পুর শব্দ হয়, ক্ষতের পাশে কোনো লিম্ফনোড থাকলে তা ফুলে যায়, দেহের স্বাভাবিক ছিদ্র পথ দিয়ে রক্ত নির্গত হয়।  
গবেষণাগারে প্রাপ্ত ফল : ক্ষতস্থান থেকে ফ্লুইড নিয়ে স্মিয়ার করে গ্রামস স্টেইনিং করলে পজিটিভ দ-াকৃতির ব্যাকটেরিয়া দেখা যাবে।

চিকিৎসা
রোগের লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হয় না হলে পরে প্রাণীকে বাঁচানো যায় না। বিলম্ব না করে উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। অ্যান্টিব্লাকলেগ সিরাম আক্রান্ত পশুর সিয়ার ১০০-২০০ মিলিলিটার ইনজেকশন দিতে হবে।
অ্যান্টিসিয়াম পাওয়া না গেলে অ্যান্টিবায়েটিক দিয়ে  চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে-
১. পেনিসিলিন গ্রুপের ওষুধ বেশ ভালো কাজ করে থাকে। প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ হাজার ইউনিট হিসেবে পেনিসিলিন ইনজেকশন দিতে হবে। প্রথমে ক্রিস্টালাইন পেনিসিলিন শিরায় ইনজেকশন দিয়ে পরবর্তি মাত্রায় প্রোকেইন অর্ধেক মাত্রায় আক্রান্ত পেশীতে এবং বাকি অর্ধেক মাংসপেশিতে দিনে দুই বার করে ৫-৭ দিন দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

২. এ রোগের চিকিৎসায় ক্রিস্টাপেন, প্রণাপেন, এক্সিসেন্টিন, ট্রিব্রিশেন ও টেরামাইসিন যথাক্রমে ৮৭৫, ৮৫৫, ৪০৩৩,৮০০ এবং ৭১৪৩ কার্যকর হয়েছে। তাছাড়াও অক্সিটেট্রাসাইক্লিন দিয়েও চিকিৎসা করা যায় ৫-৮ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে মাংসে ২৪ ঘণ্টা পরপর ৪-৫ দিন দিতে হবে।

৩. পশু খুব দুর্বল হলে ৫ অথবা ১০ বা ২৫ ডেক্সট্রোজ/গ্লুকোজ দিলে যকৃতে গ্লাইকোজেনের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে যা বিষক্রিয়া খুব সহজেই দূর করা সম্ভব।

৪. হিস্টামিনের প্রভাব কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন দেয়া যেতে পারে।

৫. আক্রান্ত পেশি কেটে মৃত টিস্যু কেটে ফেলে দিয়ে তাতে জীবাণু মুক্ত দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

যেমন: পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট দ্রবণ অথবা হাইড্রোজেন পারকসাইড দ্বারা দিনে দুইবার ধোয়া।

৬. ৮ নেগুবন সঙ্গে সমপরিমাণ নারিকেল তেল এবং ৫০ গ্রাম সালফানিলামাইড পাউডার মিশিয়ে প্রত্যহ দুই বার করে ভালো না হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাণীর খাবার পাত্র ও খাবার উপাদান ঠিকমতো পরিষ্কার করে এবং দেখে শুনে খাওয়াতে হবে।
ময়লা স্থানের ঘাস না খাওয়ানো ভালো।
প্রতি বছর নিয়মিতভাবে প্রাণীকে ঠিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

গরুর ক্ষেত্রে তিন মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাকে ৫ মিলি বাদলা ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে দিতে হবে ছয় মাস পরপর। ছাগল ভেড়ার ক্ষেত্রে ২ মিলি চামড়ার নিচে ৬ মাস পরপর (প্রথম ডোজ দেয়ার ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে তার কার্যকারিতা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।)

সদা পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে খামারের ভেতরে এবং বাইরে। এগুলো সঠিকভাবে খেয়াল করলে বাদলার প্রভাব থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থেকে  দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নতি সম্ভব হবে। দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

30 thoughts on “গরুর বাদলা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

  1. Самые свежие и интересные новости из мира туризма, а также полезные туристические статьи – https://www.tourdis.ru.
    Наша миссия это помощь путешественникам правильно сделать выбор, где можно классно отдохнуть.

  2. Jogo do Bicho Lottery é um tipo de loteria famosa no Brasil. Literalmente pode ser traduzido do português como ‘loteria de animais’. jogo foi criado no início do século XX e atualmente é um dos jogos de azar conhecidos do Brasil.

    Na loteria Jogo do Bicho resultado do jogo do bicho deu no poste , os jogadores apostam em vários criaturas em destaque representados por números de 1 a 25. Cada criatura tem seu próprio único número. Um número aleatório é então selecionado diariamente para representar o número vencedor . Se o número do jogador corresponder ao número da sorte, o jogador receberá um vitorioso.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *