মরিচ নিয়ে কিছু কথা : কাঁচা মরিচ, পাকা মরিচ ও শুকনা মরিচের ভাল ও মন্দ দিক।

হৃদ্‌রোগীদের সাধারণভাবে বলা হয় ঝাল মসলাযুক্ত খাবার কম খেতে। আসলেই কি মসলা বা ঝাল তাদের জন্য খারাপ? তেল–চর্বিযুক্ত খাবার বা রিচ ফুড খারাপ তো বটেই। কেননা, এগুলো রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়, যা রক্তনালিতে ব্লক বা বাধা তৈরি করে। কিন্তু ঝাল তো আর চর্বি বা তেল নয়। ২০১৫ সালে হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একটি গবেষণায় দেখান যে যাঁরা মোটেও ঝাল খান না, তাঁদের তুলনায় যাঁরা প্রতিদিন বা সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ঝাল খান, তাঁদের হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস ও ক্যানসারজনিত রোগে মৃত্যুহার কম।

ঝালের মূল উপাদান হলো ক্যাপসেইসিন। এর নানামুখী উপকারিতা আছে। যেমন-

এক. এটি পরিপাকতন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ও বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে।

দুই.  ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ক্যাপসেইসিনের ভূমিকা আছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভালো।

তিন. ক্যাপসেইসিন একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তনালিতে চর্বি জমতে বাধা দেয়।

চার. হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির স্নায়ুগুলো ক্যাপসেইসিনে সংবেদনশীল। এই স্নায়ুগুলোর সুস্থতায় ভূমিকা রাখে এই উপাদান।

কী ধরনের ঝাল ভালো?

শুকনো বা গুঁড়া মরিচের তুলনায় কাঁচা মরিচে ক্যাপসেইসিনের পরিমাণ বেশি। কাঁচা মরিচে ভিটামিন সি অনেক। তাই রান্নায় বা সালাদে কাঁচা মরিচ থাকলে ভালো। আবার দেখা গেছে, সবুজ কাঁচা মরিচের চেয়ে লাল রঙের তাজা কাঁচা মরিচ আরও ভালো। এই গুণ পাওয়া যাবে ক্যাপসিকামেও।

মরিচের প্রধান রাসায়নিক উপাদানের নাম ক্যাপসিসিন,যা  তীব্র ঝাল লাগার অনুভুতি সৃষ্টি করে থাকে।ক্যাপসিসিন নামক এই উপাদানটি  রক্তে সুগারের মাত্রা কমায়।

স্থূলতা (Obesity)

ক্যাপসিসিন হলো এক ধরনের থার্মোজেনিক উপাদান যা বিপাক ক্রিয়াকে বৃদ্ধি করে এবং চর্বি ভাঙ্গন প্রক্রিয়াতে বিশেষ উপকরন হিসাবে কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি

মরিচে যে ফাইটোকেমিকেল থাকে তা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি হিসেবে কাজ করে ডায়বেটিস নিউরোপ্যাথি সম্পর্কিত ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

ক্যান্সার

এতে ফাইটোকেমিকেল প্রচুর পরিমানে আছে।ফাইটোকেমিকেল নামক এনজাইমের বিরূদ্ধে কাজ করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে,জ্যান্থিন অক্সিডেজ এমন একটি এনজাইম যা ফ্রি-র‍্যাডিকেল তৈরি করে ডিএনএ (DNA) এবং সেলুলার টিস্যু নষ্ট করে দেয়।

পাকস্থলির ক্ষত

মরিচ পাকস্থলির অভ্যন্তরীণ দেয়াল কে উদ্দীপিত করে এক ধরনের রস নিঃসন করতে সাহায্য করে এর মাধ্যমে পাকস্থলি ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।হজম এবং অন্ত্রের মাংস পেশির ক্রিয়াশীলতা স্বাভাবিক রাখে, যার ফলে হজমে সহায়ক এনজাইম নিঃসৃত হয় এবং খাবারের পুষ্টি সহজেই শোষিত হয়।

ঝালে ভরা শুকনা মরিচ

নানা সুস্বাদু খাবারে ব্যবহার করা হয় এই মরিচ। এমন কি অনেকের তো ভাত- ভর্তার সাথে এটি না হলে চলেই না। আবার কেউ কেউ ঝালের ভয়েই ধরেন না এই মরিচ। কিন্তু শুকনা মরিচে শুধু ঝালই নয়, আছে অন্য অনেক গুণ জেনে নিন।

শুকনা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে। তাই নিয়মিত এই মরিচ খেলে শরীরে ভিটামিন সি ও এ-র অভাব দূর হয়।

ঠাণ্ডা-সর্দি হলে শুকনা মরিচ খেয়ে দেখতে পারেন। কারণ ঠাণ্ডায় আপনার নাক বন্ধ থাকলে বেশ উপকার পাবেন।

এই মরিচে থাকে ভিটামিন এ। যা চোখের জন্যও বেশ উপকারী। চোখের যে কোনো সমস্যা থাকলে নিয়মিত খাবারে শুকনা মরিচ দিয়ে রান্না করতে শুরু করতে পারেন।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকলে আজ থেকেই শুকনা মরিচ খাওয়া শুরু করতে পারেন।

এমন কি হাই প্রেশারের সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের জন্যও শুকনা মরিচ অনেক উপকারী।

শরীরের বাতের ব্যথায় নানা বয়সের মানুষ কষ্ট পায়। এই ধরণের ব্যথা দূর করতে করতে শুকনা মরিচ খেয়ে দেখতে পারেন।

তবে বলে রাখা ভাল যে, যাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা আছে বা ঝাল খেলেই পেট জ্বলে তাদের খুব বেশি পরিমাণ শুকনা মরিচ না খাওয়াটাই সঠিক সিধান্ত হবে।

শুকনা মরিচের অপকারিতা :

গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ / বুকজ্বালা (Gastroesophageal reflux disease)

শুকনা মরিচ অধিক পরিমাণে গ্রহণের ফলে গ্যাস্ট্রো-ফাগিয়েল রিফ্লাক্স (GER) হতে পারে।

লিভার ক্যান্সার (Liver cancer)

শুকনা মরিচে অ্যাফ্লাটোক্সিন নামক ক্ষতিকর যৌগ রয়েছে যা যকৃত বা লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।    

পাকস্থলীর ক্যান্সার (Stomach cancer)

শুকনা মরিচে অ্যাফ্লাটোক্সিন নামক ক্ষতিকর যৌগ রয়েছে যা পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।    

ওরাল ক্যাভেটি, গলা পেটের সমস্যা

যারা ওরাল ক্যাভেটি, গলা ও পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা অধিক পরিমাণে শুকনা মরিচ গ্রহণ করলে শরীরে বিভিন্নধরণের প্রদাহ ও জ্বালা পোড়া দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ঠাণ্ডা দই গ্রহণ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে  পারে।     

কোলন ক্যান্সার

শুকনা মরিচে অ্যাফ্লাটোক্সিন নামক ক্ষতিকর যৌগ রয়েছে যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।  

তাই ঝাল মানেই খারাপ, এ ধারণা ভুল। তেলবিহীন বা ভাজাপোড়া ছাড়া খাবার যেমন চটপটি, কাঁচা ছোলা, সালাদ, ফল ইত্যাদিতে কাঁচা মরিচের টুকরা দিয়ে খাওয়া হৃদ্‌রোগীদের জন্য বেশ ভালো একটি নাশতা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *