যেসব প্রজাতির পাখি গৃহে মানুষের তত্ত্বাবধানে লালন – পালন করে বংশবিস্তারের মাধ্যমে ডিম ও মাংস উৎপাদন করা হয় এবং মানুষের আর্থ – সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে সেগুলোকে পোল্ট্রি বলে। যেমন- হাঁস – মুরগি, টার্কি , তিতির, কবুতর, কোয়েল ইত্যাদি।
বর্তমানে বাংলাদেশে পল্লি এলাকায় হাঁস – মুরগির খামার এবং পালন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্র (যেমন- হাঁস – মুরগির জাত , খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি , রপ্তানি এবং আরো অনেক কিছু) অনেক বেড়ে গেছে। পোল্ট্রি খামারের মধ্যে রয়েছে পারিবারিক খামার , ব্রয়লার ও লেয়ার উৎপাদন খামার , ব্রিডিং ও মাতৃখামার, চেইন খামার ইত্যাদি।
দেশের অর্থনীতি , খাদ্য , পুষ্টি ও কর্মসংস্থানে পোল্ট্রির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু জিনিস আহরণ ছাড়াও ভূমিহীন দুস্থ গ্রামীণ মহিলাদের নগদ আয় – উপার্জনের একটি সহজ উপায় হলো পোল্ট্রি বা গৃহপালিত পাখি পালন। নিচে পোল্ট্রির প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-
১. খাদ্য ও পুষ্টির উৎস: গৃহপালিত পাখি থেকে অত্যন্ত মূল্যবান প্রাণিজ খাদ্য যেমন- মাংস ও ডিম পাওয়া যায়। পুষ্টির অভাব দূরীকরণ ও সুস্বাস্থ্যের জন্যে ডিম ও মাংস খুবই প্রয়োজনীয়।
২. আয়ের উৎস : গৃহপালিত পাখি, এদের মাংস ও ডিম বিক্রি করে আয় বৃদ্ধি করা যায়। উল্লেখ্য ২০২০-২১ সালে দেশে উৎপাদিত মোট ডিম ও মাংসের পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ২০৫৭৬ মিলিয়ন টি ও ৮.৪৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন ( তথ্যসূত্র : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর , ২০২১ )।
৩. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : পশুসম্পদ অধিদপ্তরের ২০২০-২১ সালের তথ্য অনুযায়ী , দেশের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের ২০ % আসে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে। এ খাতে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৫০ % লোকের (তথ্যসূত্র: কৃষি ডাইরি , ২০২১)।
৪. জৈবসার : মুরগির পঁচানো বিষ্ঠা সার হিসেবে ব্যবহার করলে জমিতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন কম হয় বিধায় এতে আর্থিক সাশ্রয় হয়। হাঁস – মুরগির বিষ্ঠা অত্যন্ত উন্নতমানের জৈবসার। গোবর সারের তুলনায় এ সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ প্রায় ৩ গুণ বেশি ( গোবর- ০.৫ % , বিষ্ঠা- ১.৬ % ) [ তথ্যসূত্র : কৃষি ডাইরি , ২০২১]
৫. শিল্প উন্নয়ন : বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বড় আকারের খামার করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে এটি শিল্প হিসেবে বিবেচিত, যা দেশের শিল্প ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে।
৬. উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার: পাখির পালক, হাড়, রক্ত ও নাড়িভুঁড়ি প্রক্রিয়াজাত করে পাখি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পালক দিয়ে বালিশ, ঝাড়ু ও খেলার সরঞ্জাম তৈরি করা হয়।
৭. বিনোদন: গৃহপালিত পাখি আমোদ ও বিনোদনের জন্যও ব্যবহৃত হয়, যেমন- মোরগের লড়াই। অনেকে শখের বসে শোভা বর্ধনকারী পাখি যেমন- তিতির রাজহাঁস, মাস্কোভি হাঁস পালন করে।
৮. পরিবেশ-উন্নয়ন: গৃহপালিত পাখি পরিবেশের উৎকৃষ্ট খাদ্য খেয়ে পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখে।