জন্ম-মৃত্যু কবরে

জন্ম-মৃত্যু কবরে
(গল্পটি কাল্পনিক এবং মৌলিক তাই সিনেমা তৈরীর উপকরণ হতে পারে)

কোটি কোটি টাকার মালিক শিল্পপতি আমিনুল ইসলাম। তার একমাত্র মেয়ে ফরিদা ইসলাম ভালবাসে বাড়ীর লজিং মাষ্টার সিরাজকে। অর্থের দাপটে দাম্ভিক পিতা আমিনুল ইসলাম কন্যর এ খাম খেয়ালী ছেলে মানুষী মেনে নিতে পারে না। টাকায় টাকা চেনে আর মনে চেনে মন। তাই জনাব আমিনুল ইসলাম কন্যা ফরিদা ইসলামের বিবাহ ঠিক করে তার এক বন্ধু ধনী শিল্পপতি ও বিজনেস পাঠনার সেকেন্দার হায়াতের একমাত্র পুত্র বরকত এর সহিত। বরকত পিতা সেকেন্দার হায়াতের মত দুর্ধর্ষ। বাপ বেটা এক সাথে বসে মদ পান করে। বরকত ও সেকেন্দার চায় আমিনুল ইসলামের স্বয়-সম্পত্তি যা কিছু আছে, ছলে বলে কলে কৌশলে আয়াত্ত¡ করতে। স্বনামধন্য আমিনুল ইসলামের দূর্বলতার সুযোগে সেকেন্দার অবৈধ ও চুরা কারবারের সহিত জড়িত হয়ে অনেক টাকা পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে। ফরিদা ইসলাম বরকতকে ভাল চোখে দেখেনি। তারপর পিতার সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে, কোন উপায় খুজে পায়না। মোহ অন্ধ পিতাকে নানা ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং ফল উলটা হয়ে যায়। সিরাজকে বাড়ী থেকে লাঞ্ছিত করে বের করে দেয়।

ফরিদা ইসলাম পিতার বিরুদ্ধাচারন করে। পিতার সব অর্থ সম্পত্তি, প্রতি-পত্তি ত্যাগ করে চলে গিয়ে সিরাজকে বিয়ে করে। এতে আমিনুল ইসলাম মনে খুব কষ্ট পায় মেয়েকে পূনরায় বাড়ীতে ফিরেয়ে আনবার জন্য কোর্টে মামলা দায়ের করে। কোর্টে দাড়িয়ে ফরিদা শুধু একটি কথাই বলে, আমার পিতা যদি আমার বিয়েকে ও আমার স্বামীকে মেনে নেয় তাহলে ফিরে যাব। তা নাহলে আমার স্বামী আমাকে যেখানে রাখবে, আমি সেখানে আমার স্বামীর সাথে থাকব। মেয়ের জবান বন্দীতে আদালত থেকে মাথা নিচু করে আমিনুল ইসলাম ফিরে যায়। শুধু একটি কথা বলে-মা আমি ভুল করেনি। তোমার কাছে হেরে গেলাম। তবে জেনে রাখ, তোমার জন্য আমার বাড়ীর গেট সারাক্ষন খোলা থাকল।

আমিনুল ইসলাম যখন মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত তখন সেকেন্দার ব্যস্ত চুরাকারবারী নিয়ে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সেকেন্দারের লোক। তাতে সব দোষ গিয়ে পড়ে আমিনুল ইসলামের ওপর। তার সারা জীবনের সঞ্চিত সুনাম যশ খ্যাতি ধুলিসাৎ হইয়া যায়। পত্রিকাতে পর দিন বড় বড় অক্ষরে প্রথম পৃষ্টায় ছাপা হয় সোনা, হিরোইন ও নারী পাচারকারী হিসাবে পুলিশ আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। পত্রিকাতে জানতে পেরে ফরিদা ইসলাম ও সিরাজ ছুটে আসে থানায়। বুঝতে পারে পিতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে সেকেন্দার। মেয়ে জামাইর কাছে লজ্জিত মনে করে আমিনুল ইসলাম মেয়ে জামাইকে মেনে নেয়। সিরাজ শ্বশুরের পক্ষে কোর্টে উকিল নিযুক্তি করে এবং আমিনুল ইসলাম জামিনে বের হয়ে আসে। আমিনুল ইসলামের মনে মনে রয়ে যায় তার জিদ। সে কারো কাছে মাথা নিচু করতে শেখেনি। এর মধ্যে কারখানায় শ্রমিক গ্যাঞ্জাম হয়। তখন আমিনুল ইসলাম আহত হয়। তাকে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুর। সেখান থেকে মিথ্যা সংবাদ পাঠানো হয়, যে সে মারা গেছে।

পিতার এ নির্মম মৃত্যুতে ভেংগে পড়ে ফরিদা ইসলাম। ইসলাম গ্র“পের সকল সম্পত্তির দেখাশুনার দায়িত্ব এখন ফরিদা ইসলামের। সিরাজ শ্বশুরের হত্যাকান্ড ও কলকারখানা অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সেকেন্দারের চক্রান্তে কারখানার সকল শ্রমিক ও এলাকাবাসী সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মিছিল, মিটিং শুরু করে। সেই সাথে আমিনুল ইসলামের উপর হামলার দোষ সিরাজের উপর পড়ে। সিরাজ শ্বশুরের মৃত্যর সকল প্রমান সংগ্রহ করতে থাকে। সেকেন্দার ও বরকত পুলিশের কাছে ধরা পড়বে ঠিক তখনি আমিনুল ইসলামের সাথে পরামর্শ করে সেকেন্দার আর এক ফন্দি করে। সিরাজ ও ফরিদা ইসলামকে রাতের আধারে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় খুন করার জন্য। গোয়ালখালি কবরস্থানের পাশে নিয়ে সিরাজকে গুলি করে। সিরাজ মারা যায়। তারপর সিরাজের জন্য কবর খুড়ে, তার ভিতর সিরাজকে ফেলে দেয়। ওদের টারগেট থাকে সিরাজকে হত্যা করা. ফরিদাকে নয়। কারন আমিনুল ইসলাম সকল সম্পত্তি ফরিদা ইসলামের নামে উইল করা থাকে। তাই ওকে বাঁচিয়ে রেখে ওর সকল সম্পত্তি আয়াত্ত করতে হবে। কিন্তু তা আর হল না, সিরাজের সহিত ফরিদা ইসলাম কবরের ভিতর লাফিয়ে পড়ে, তারপর ফরিদাকে উঠানোর জন্য সকল চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ফরিদাকে গুলি করে কবর দিয়ে চলে যায়।

কবর স্থানের এ সকল ঘটনা দেখে পাশে অবস্থানরত মনির। এই মনির হচ্ছে কবর স্থানের দেখা শুনার দায়িত্বশীল। কবর খুড়ে, কবরে মুর্দা নামায়। অর্থাৎ কবর খুড়া, মুর্দা নামানো, এই হচ্ছে তার কাজ। মনির এদের সবাইকে চিনতে পারে। কিন্তু পরিনাম ভেবে কোন কিছু বলে না।

কয়েক ঘন্টা পর কবর স্থানে একটা শিশুর চিৎকার শোনা গেল। ঐ স্থানের পাশ দিয়ে লোকজনে ভয়ে যেতে পারছেনা। পুরা এলাকাটায় একটা ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি হল। কোথাও কোন লোক জন নেই। অথচ সারাক্ষন বাচ্চা শিশুর চিৎকার তার ক্রন্দন ধ্বনী। এই ধ্বনী আকাশ বাতাস সব কিছুকে ভয় প্রদর্শন করছে। কাহারো সাহস নেই, কবর স্থানে গিয়ে ঘটনাটি অনুধাবন করবে। রাতে মনির ও ওর স্ত্রী এ বিষয়ে পরামর্শ করছে। দুজনেই অত্যন্ত সাহসী। ওরা ঘটনাটা কি জানতে আগ্রহী হল। তারপর ঐ কবরের কাছে গেল। দুজন শুনতে পেল। কবরের ভিতর থেকেই চিৎকার আসছে। তখন মনির এই কবর টিকে আবার খুড়া শুরু করল। স্ত্রীর অনুরোধ বাঁধা প্রত্যাখান করে। তারপর দেখতে পেল সিরাজ-ফরিদা ও একটি নবজাতক ফুট ফুটে বাচ্চা শিশুকে। তখন তুলে আনল শিশুটিকে। দেখে শিশুটি জীবিত। তখনও ফরিদা ইসলামের শরীর কিছুটা গরম আছে। কিন্তু না ফরিদা ইসলাম আর জীবিত নেই। অল্প কিছুক্ষন আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। দ্রুত মনির শিশুটিকে নিয়ে কবরের মাটি ঠিকঠাক করে চলে আসে। নিঃসন্তান মনির এ সন্তানটিকে পেয়ে খুব খুশী হয়। সাথে মনিরের স্ত্রীও। এই ছেলেটার নাম রাখা হয় ইনজামুল হাসান ডাক নাম কবর।

আমিনুল ইসলাম ব্যর্থ হয়ে নিজের ভুলে সমাজে মুখ দেখাতে পারছে না। একদিন কোর্টে মাথা নিচু করে চলে এসেছে মেয়ের জন্য। ওদিকে সেকেন্দার ও বরকত বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। তাদের দুই নাম্বার মালমাল পাচার করতে যেয়ে ধরা পড়েছে লোক। সেজন্য ভাবছে সিরাজ হয়ত পুলিশের কাছে ইনফরমেশন করেছে। কারন সিরাজ, আমিনুল ইসলাম ও সেকেন্দারের সকল ব্যবসা বানিজ্যের সংবাদ জানত, ওপেন ইন সকল আস্তানা সিরাজ চিনত। ওদিকে আমিনুল ইসলামের সকল বিষয় আশায় শিল্প কারখানা সব কিছু ফরিদা ইসলামের নামে উইল করা। অনেক দিকের ভয় কেটে যাবে পথের কাটা সিরাজকে সরাতে পারলে। যেই ভাবনা সেই কাজ। আমিনুল ইসলামের হুকুমে সেকেন্দার ও বরকত লোকজন নিয়ে রাতের আধাঁরে সিরাজ ও ফরিদা ইসলামকে নিয়ে যায় খুন করার জন্য। আমিনুল ইসলামের এক বৎসরের চিন্তা চেতনা পরিকল্পনা স্বপ্ন আজ পূরন হচ্ছে। সিরাজ ওকে অনেক ছোট করে ফেলেছে এ সমাজের চোখে। সামান্য একজন লজিং মাষ্টার হয়ে ধনীর দুলালীর দিকে হাত বাড়িয়ে পটাইয়ে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করা। দুদিন বাদে আমিনুল ইসলামের সকল সম্পত্তির মালিক হওয়া। সব হিসাব নিবে আমিনুল ইসলাম সিরাজের কাছ থেকে।
পরের দিন আমিনুল ইসলাম দেশে ফিরে এসে শোনে ফরিদা ও বেঁচে নেই তাকেসহ কবর দিয়ে আসে। তখন মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। এটি অপরের গায় সুজ দিতে গেলে নিজের গায়ে সাবল যায়। ঠিক হল তাই। আমিনুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলল এবং সেকেন্দারকে মারতে উদ্ধাত্ত হলো তারপর নিজেই রিভালভারের গুলি খেয়ে আত্তহত্যা করল। আমিনুল ইসলামের এক ভুলের জন্য পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল

কবর নামের এ ছেলেটি দিনে দিনে বড় হতে থাকে। লেখা-পড়া শেষে একদিন ও জর্জ কোর্টের বিচার প্রতি নিযুক্ত হয়। সততার সহিত চাকরী করছে কবর। কিন্তু ওর ও চাকরীতে মন বসছে না, কারন অনেক সময় বিনা অপরাধী সাজা খাটছে, আর প্রকৃত অপরাধীরা মুক্তি পাচ্ছে, সঠিক সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে। আর এ সব কার্যক্রম কবরের হাত দিয়ে লিখতে হচেছ।

কবর যার নাম তার কি করা উচিৎ? এ সব নানাবিদ প্রশ্ন আজ ওর মনে। কখনো ভাবতে ভাবতে এত বেশী ভেবে ফেলে যে পাগলের মত শুধু হা হা করে হাসে। আবার কখনো চোখের পানি দিয়ে বুক ভাসিয়ে নেয়। ও একদিন পিতা মনিরের কাছে প্রশ্ন করে ওর নাম কবর কেন রাখা হয়েছে? অনেক কথার পর এ কথাটা আসে ওর জন্ম হয়েছিল কবরের মাঝে তাই ওকে কবর নামে ডাকে।

কেন জন্ম হলো ওর কবরের মাঝে? কি কারনে ওর মাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হল? কি অপরাধ করে ছিল ওর পিতা? যে তাকে মরতে হল! কেন আজ ও এতিম? কেন আজ ও পিতা মাতার আদর সোহাগ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত! নানাবিদ প্রশ্ন ওর মনের মাঝে দানা বাধে।

ফরিদা ইসলামের মৃত্যুর পর তার সকল অর্থ সম্পত্তির মালিক এখন সেকেন্দার হায়াত ও বরকত। বরকতের কন্যা রিতু। রিতু খুব উচ্ছৃংখল ও দুষ্টু প্রকৃতির, সারাক্ষন মানুষের ক্ষয় সাধন ভাংচুর, মারামারী হাসাহাসী, আনন্দ ফুর্তি করে সময় কাটায়। কখনো নেচে, কখনো গেয়ে, আবার কখনো অন্যের দুঃখে আনন্দ পায়। ওর এক বন্ধু যার নাম মেহেদী হাসান মধু। মধুকে রিতু খুব পছন্দ করে। তাই একই সাথে ঘোরা ফেরা ও আড্ডা দেয়। মধু আবার বধ চরিত্রের। কাছে সুন্দরী থাকলে দু চারটা কিস দেবার জন্য হাত না ধরে থাকতে পারে না। রিতু মাতাল হলেও তালে কিন্ত ঠিক। মধুকে কখনো এ বিষয়ে পাত্তা দেয় না। ও মনে করে মধু আমার একজন ভাল বন্ধু, ঘোরা ফেরা আড্ডা দেওয়ার জন্যই। মধু প্রাথমিক ভাবে অনেক চেষ্টা করে করে ব্যর্থ হয়। তারপর ছলনার আশ্রয় নিয়ে একদিন রিতুকে গহিন জংগলের মাঝে নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ী থেকে নামিয়ে রিতুর শালিনতা হানির চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। ভুতুড়ে এ পথ দিয়ে ইনজামুল হাসান কবর যাচ্ছিল। রিতুর চিৎকারে এসে উদ্ধার করে। তখন ঠিক সিনেমার মত একটু ডিসুম ডিসুম হলো এবং মধু দৌড়ে পালাল। রিতু অনেক সিনেমায় এ দৃশ্য দেখেছে আজ তার জীবনে এ দৃশ্য হয়ে গেল। কবর দেখতে শুনতে খুব হ্যান্ডসাম যে কোন মেয়ে ওর প্রেমে পড়তে পারে এক পলকে। এখানে দু-জনের পরিচয় হল। রিতু মনে মনে কবরকে পছন্দ ও ভালবেসে ফেলল। তারপর রিতু কবরকে বলেছে আমি এই গহিন অরণ্য থেকে কিভাবে বাড়ী ফিরব। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে একটু বাসায় পৌছে দিয়ে আসেন না। তারপর কবর রিতুকে মটর সাইকেলের পিছনে বসিয়ে বাসায় এনে পৌছে দিয়ে গেল। রিতু কিন্তু একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করল কবরকে নিয়ে। এর জন্য কবরের মাঝেও কিছুটা প্রতিক্রিয়া দেখা দিল কারন রিতু এক অতুলনীয় সুন্দরীও শিক্ষিতা। তারপর যে ভাবে কবরের দিকে হেলে পড়েছে তাতে কবর কেন, যে কোন পুরুষের মনের মাঝে আলোড়ন স্বাভাবিক। সুন্দরী নারীর সান্নিধ্য পেলে যে কোন পুরুষের গলে যাওয়া স্বাভাবিক।

দিনে দিনে দু জনের সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। তারপর এক দিন দুজন দুজনের মনের কথাও বিনিময় করে শুরু হয় প্রেম ভালবাসা। আর ঘটনা সকলের জানাজানি হয়ে যায়। ভালবাসে ইনজামুল হাসান নামের এক গরীব ছেলেকে। যা সেকেন্দার হয়াত ও বরকত এর পরিবার কখনো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাতে ও জজ হলেও কিছু যায় আসে না। কারন ধনে চেনে ধন, আর মনে চেনে মন। কবর এই কয়েক দিন হল বিসিএস করে জজ কোর্টের জজ হয়েছে। কিন্তু তাতে কি হবে কবরের পিতার তো কোটিপতি কিংবা শিল্পপতি নাম নেই। আর একজন জজ কোর্টের জজ কত টাকাই বেতন পায়? প্রথম শ্রেনীর অফিসার হিসাবে মাসে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মত। তারপর কথা হল রিতুর এমন পছন্দ করা আদৌ উচিৎ হয় নি। কারন র বিয়ে হবে সেকেন্দার ও বরকত সাহেবের পছন্দের ছেলের সাথে।

বরকত সাহেবের ছেলে আশিকুর রহমান আশিক একজন বিখ্যাত পপ সিংগার। সারাদেশ জুড়ে ওর খ্যাতি। ও কখনো কারো বাধা মানে না। ছোটবেলা থেকে একটু ডানপিঠে বলে সেকেন্দারও খুব ভালবেসে। ওর সকল আবদার চাওয়া পূরন করত বলে আজও এত বড় নাম যশ অর্জন করেছে। ওর সাথে ব্রেক ড্যান্স করে রিটা নামের এক রুপসী। রিটা আশিককে খুব ভালবাসে। রিটা ও আশিকের সম্পর্কটা পিতা-মাতা স্বীকার করে নেয় এবং তাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে বরকত ও ফারুক হোসেনের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো প্রগাঢ় হবে।

ও দিকে রিতু কবরকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছে না। রিতু তখন চার দেওয়ালের মাঝে বন্ধিনী। রিতু কবরের কথামত পিতার সব কিছু ছেড়ে ওর কাছে চলে যেতে একমত। রিতু এখন আর সেই উচ্ছশৃংখল নেই। রাস্তায় বের হলে আর কোন কিছু ভাংচুর করে না। কারো ক্ষতি সাধন করে তৃপ্তি খোজে না। ও এখন শান্ত শিষ্ট নম্ন ভদ্র এক বিনয়ী যুবতী হয়ে গেছে। সারা অঙ্গ থেকে সেই দামী বেশ ভুষন খুলে ফেলেছে। এখন মুখে একটু ক্রীম পর্যন্ত লাগাচ্ছে না। সারাক্ষন ঘরে বন্দিনী থেকে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। রিতু এর সাথে আশিকের সম্পর্ক প্রায় বন্ধুতের মত। ভাই বোনের সম্পর্ক দেখলে কথা বার্তা শুনলে, চাল চলনে মনে হয়ে ওরা দুজন ভাই বোন নয় বন্ধু বান্ধবী।

আশিক বোনের এ নিরাবতা দেখে বুঝতে পেরেছে। তাই ও কবরের উদ্দেশ্যে ছুটেছে বোনের জন্য। একদিন কবরের বাসায় ওকে খুজতে যেয়ে না পেয়ে, পেল আর এক জনের সন্ধান। সে হলো কবরের বোন রিপা। রিপা বয়রাস্থ সরকারী মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দেখতে শুনতে খুব সুন্দরী, কথা-বার্তা খবুই এক্সপার্ট। মুখের হাসিতে ম্ক্তুা ঝরে। আশিক এসে ছিল বোনের কথা জানাতে কবরকে। কিন্ত সব ভুলে গিয়ে রিপার রুপে মোহিত হয়ে পড়ল। আশিকের উক্তিতে রিপার রুপের বর্ণনা ঠিক এভাবে করা যায়। যে রিপার চোখে চোখ রাখি নি, তার মেয়েদের দিকে তাকানোর মত চোখ নেই। যে রিপার রুপে মুগ্ধ না হবে সে পূরুষের পৌরুষাত্ব নেই।

আশিক ফিরে এলে রিতু কবরের কথা জানতে চাইলে ও শুধু এই কথাই বলছে, আপা আমি খুন। আমি শেষ, আমি নেই, আমি পাগল, আমি তাকে ছাড়া বাচঁব না। আমি তাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারব না। আমাকে বাঁচা আপা, তোর দুটি পায়ে পড়ি। তুই কবর ভাইকে আমার কথা বলে, আমাকে রক্ষা কর। ওর জন্য আমি মরতে রাজি, ওর জন্য সাত সুমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিতে পারব। ওর জন্য আমি র্চাঁদতো দুরে থাক, মঙ্গল গ্রহেও যেতে রাজী। আমি শুধু ওকে চাই, শুধু ওকে চাই, আপা। রিতু আশিকের এ উক্তির কিছুই বুঝতে পারল না । তারপর খুলে বলল কবরের একটা বোন আছে আমি ওর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমি অনেক ষ্টেজ, অনেক পার্টিতে গান গেয়েছি, ড্যান্স করেছি কিন্ত এমন রূপসি আমি দেখি নাই।

তারপর রিতু ও আশিক দুভাই বোন মিলে কবর ও রিপা দুভাই বোনের মধ্যে প্রেম সৃষ্টি হয়। চুপি চুপি তারা দেখা করে, কথা বলে। কবর জেনেও কিছু বলে না। শুধু রিতুকে বলে-রিতু তোমার ও আমার অবস্থানের কথা একটু চিন্তা কর। তারপর তোমার ভাই আশিক ও আমার সহজ সরল বোন রিপার কথা, এদের অবস্থানটা একটু চিন্তা কর। দেখ প্রেমের আনন্দ ক্ষনেকের। কিন্ত দুঃখ দীর্ঘ দিনের। আমার সাথে আমার বোনটিকেও দুঃখে ফেলতে চাই না। হয় তোমার আমার সম্পর্ক ভুলে যেতে হবে। নয়ত রিপার সম্পর্ক ভুলতে হবে। আমি বড় ভাই হয়ে রিপাকে ভুলে যেতে বলতে পারব না। তাই আমি নিজে সব ভুলে যাব। প্রতি উত্তরে রিতু বলে, কবর তুমি যে সম্পর্কটা বলছ, ভাবছ, এরকম সম্পর্ক পৃথিবীতে অগনিত আছে। তাই আমরা কেউ কাউকে ভুলে যেতে পারব না। আমরা সবাই এক হয়ে যেতে চাই। তারপর কবর বলছে তাহলেতো তোমার পিতা ও পিতামহ কখনোই মেনে নিবেনা। এ কথার প্রতি উত্তর রিতু বলে, তাহলে আমরা দু ভাই বোন ড্যাডি ও দাদুকে ছেড়ে চলে আসব ।
বুঝালাম চলে আসবে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছ। তোমরা থাকবে কোথায়? তোমাদের রাখতে পারব না।
তুমি যেখানে রাখবে, আমি সেখানেই থাকব। ভাংগা কুড়ে ঘরে রাখ, নয় গাছ তলায় রাখ। শুধু তোমার বুকে আমাকে ঠাই দাও।

এদের যখন একথা চলছে, ওদিকে আশিক ও রিপা কোট থেকে বিয়ে করে আসছে। কবর ভিষন চিন্তায় পড়ে গেল। মনির হাড় ভাংগা খাটুনি খেটে আজ কবরকে বড় করেছে। মানুষের মত মানুষ করেছে। সে কিভাবে আজ মনিরের সব দুঃখ জ্বালা যন্ত্রনা লাগব করবে। তাই বোনের এ নির্বুদ্ধিতাকে মেনে নিয়ে সেকেন্দার হায়াতের বাড়ীতে যায় বোনকে প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু সেখানে লাঞ্চিত হয়ে, জুতার বাড়ী খেয়ে, কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসে। বরকত সাহেব দাবার চাল কখনো খারাপ দেয় না। সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রিপাকে বৌ বলে মেনে নেয়। না হলে একমাত্র পুত্র বউকে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে পারে। এত দিনের প্রচেষ্টা শ্রম সব ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ কথা ভেবে ছেলের খাম খেয়ালী ও ছেলে মানুষী মেনে নেয়।

চাকরানীর মত ব্যবহার করে রিপার সাথে। রিপা সকল লাঞ্ছনা গঞ্ছনা সহ্য করে স্বামীর বাড়ীর মাটি আকড়ে ধরে থাকে। সেকেন্দার হায়াত ও বরকত আজ লজ্জিত ফারুক হোসেন এর কাছে। কারন ফারুকের মেয়ে তামান্নার সাথে আশিকের বিয়ে হবার কথা ছিল। এরপর রিতুর সাথে ফারুক হোসেনের পুত্র মধুর বিবাহ ঠিক করল। রিতু কোন উপায় না দেখে পিতার কাছে কিছু দিন সময় নিল। এম এ পরীক্ষার দিবার জন্য।

মাঝে মাঝে ওরা রিপাকে খুব ভালবাসে যতœ করে। যখনি ওদের লোক পুলিশের কাছে ধরা পড়ে কোর্টে আসে। ওদের চুরা কারবারীর মালামাল পুলিশের কাছে আটকা পড়ে, কোর্টে আসে তখন। কখনো সাক্ষী প্রমাণ দিয়ে, আবার কখনো সাক্ষী প্রমান না দিয়েও কোর্ট থেকে মুক্তি নিয়ে যায়। কবর এসব কিছু জেনেও রায় ঘোষনা করে কারন আইন সব সময় তার নিজস্ব গতিতে চলে। একজন খুন করে কোর্টে এসেছে কিন্তুু তার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষ্য প্রমান নেই, তাই সে বে-কশুল খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আবার একজন অপরাধী নয়, নিরাপরাধী। অথচ সঠিক সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে ফেষে যাচেছ, সাজা খাটছে। বছর বছর, যুগ যুগ, যাবতজীবন। এসব জেনেও কবর কিছু বলতে ও করতে পারছে না। কারন তার হাত পা আইনের গন্ডিতে বাঁধা। সে নিজে কিছু বলতে পারে না করতেও পারে না। কোর্টে যা প্রমান হবে তার উপর ভিত্তি করে তাকে রায় দিতে হয়।

বরকতের ছোট ভাই সাফকাত বাংলাদেশ থেকে শিশু ও নারী বিদেশে পাচার করতে যেয়ে পুলিশের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়েছে। পুলিশের সাথে এক পর্যায়ে গোলাগুলি বিনিময় হয়। এতে কয়েক জন পুলিশ মারা পড়ে। কোর্টে এসব কিছু প্রমান হলে সাফকাতের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষনা করে। সাফকাতের এ ফাঁসি থেকে মুক্ত করার জন্য রিপাকে ওরা চাপ প্রয়োগ করে। কাজ না হলে প্রহার করে। রিপার উপর এসব অন্যায় অত্যাচার অবিচার ও নির্যাতনের সংবাদ কবর জানতে পেরে আশিকের সাথে রিপাকে বিদেশে পাঠাতে সাহায্য করে। এতে সেকেন্দার আরে ক্রুদ্ধ হয়।

হাকিম পাল্টে যায় কিন্তু হাকিমের হুকুম পাল্টে যায় না। তাই কোর্টে থেকে যাহা হয়েছে তা আর উল্টানো সম্ভব নয়। সেকেন্দার হায়াতের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় তাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওদের থাবা নিক্ষেপ করে কবরের উপর। প্রথমত কবরের পিতা মনির ও মাতাকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের উপর নির্যাতন করে তারপর ওদের খুন করে ফেলে কবরের সামনে। কবর ওদের নামে অভিযোগ করে কোর্টে। কোর্ট থেকে সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে বে-কশুল খালাস পায় ওরা।

তখন কবরের বুক ফেটে যায় নিজের চোখের সামনে সে পিতা-মাতাকে খুন হতে দেখেছে অথচ নিজে কোর্টের জজ। নিজে বিচারপতি হওয়া সত্তে¡ও আসামি মুক্তি পেয়ে যায় এসব কি করে সম্ভব? এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।

উচ্চ আদালতে তাই আবার ওদের নামে অভিযোগ করে। এতে মানী লোকের মান হানির কেচে পড়ে কবর। কোর্টে সবার সামনে অপমান হয় লজ্জিত হয় কবর। কোর্টের চাকরী থেকে সাময়িক বরখাস্থের আদেশ আসে। মনির আগে শুধু এতটুকু বলেছে যে কবরের জন্ম কবরের ভিতর কিন্ত ফরিদা ইসলামের পরিচয় কোন দিন দেয়নি। মানুষ মৃত্য কালে কখনো মিথ্য কথা বলে না। মিথ্যর আশ্রয় গ্রহন করেনা। তাই মনিরও করল না। কবরের সঠিক পরিচয় আজ জানতে পরল। ওর মাতার নাম ফরিদা ইসলাম, শিল্পপতি আমিনুল ইসলামের কন্যা। বর্তমান এই ইসলাম গ্র“প অব কোম্পানীর মালিক কবর। সেকেন্দারের যেখানে যা কিছু আছে তার সব কিছুর একমাত্র মালিক কবর ।

জর্জ কোর্টের বিচার প্রতি ইনজামূল হাসান কবর আবারও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিল। সেকেন্দারের বিরুদ্ধে আবার মামলা মোকদ্দমা শুরু করল ইসলাম গ্র“প অব কোম্পানি মালিকানা নিয়ে। কিন্তু কিভাবে কোর্টে প্রমান করবে ও ফরিদা ইসলামের ছেলে। সবাই জানে ফরিদা ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম এক সাথে মারা গেছে। তারপর আমিনুল ইসলামের আর কোন বংশ ধর কোথাও নেই। আছে শুধু তার বন্ধু সেকেন্দার ও তার পরিবার পরিজন।

কোর্ট কবরকে আমিনুল ইসলামের ওয়ারিশ হিসাবে স্বীকৃতি দিল না। কিন্তু সেকেন্দার ঠিকই স্বীকৃতি দিল। তাই রাতের আধাঁরে লোক পাঠাল কবরকে ধরে আনার জন্য। যাহা হুকুম তাহা কাজ। যথারীতি কবরকে ধরে চোখ বেধে সেই কবর স্থানে নিয়ে এল। ওর জন্য আবার কবর খুড়া হল। একদিন এই কবরের মাঝে পুতে রেখেছিল ওর পিতা-মাতাকে আজ ওকে। কবরের হাত পা বেঁধে কবরের ভিতর ফেলে মাটি চাপা দিয়ে চলে গেল। কবর কোন মতে জানে বেঁচে গেল। কবর থেকে বেরিয়ে কবর পালিয়ে গেল।

পরদিন সকালে পত্রিকাতে বড় বড় আকারে প্রথম পাতায় হেড লাইনে লেখা হল। জজ ইনজামূল হাসান কবরকে কিছু সন্ত্রাসী ধরে নিয়ে যায় ও বাড়ীর রক্ষিকে গুলি করে। তবে জর্জ সাহেবের লাশ বা কোন রকম চিহ্ন কোথাও পাওয়া যায়নি।

পত্রিকাতে এ সংবাদ পাঠের সাথে সাথে রিতুর মাথার ভিতর কেমন যেন একটা পাক খেল এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ল। আর ভাবছে সংবাদ পড়ার আগে মৃত্যু কেন হল না! ওর চোখ কেন অন্ধ হল না! নানা বিলাপ করতে করতে কেমন যেন একটি ভাব হয়ে গেল। ও কখনো হাসে কখনো কাঁদে। কখনো গান করে, আবার কখনো গান শোনে। কখনো বা সামনে যা কিছু পায় তাই ভাংচুর করে আনন্দ পায়। কখনো মাথার চুল টেনে ছিড়ে, আবার কখনো পরা কাপড় চোপড় টেনে ছিড়ে ফেলে। ও জানে এসব কাজ ওর পিতা বরকত উল­াহ ও পিতামহ সেকেন্দার হায়াতের। রিতু আর ঘর থেকে বের হয় না। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করে না। সারাক্ষন একা একা বসে কাঁদে। বরকত আর দেরি করিবে না। সে রিতু বিয়ে দিবে যদিও রিতুর অবস্থা খারাপ দেখে, সেকেন্দার দেরি করতে বলে।

কবরের চোখে এখন প্রতিশোধের আগুন। তাই জ্বলে উঠছে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। ওর তালিকায় আসামীর সংখ্যা ১১ জন। একে একে শেষ করবে এ এগার জনকে। ঐ কবর স্থানের পাশে বিরাট এক ভুতুড়ে জঙ্গল। এই জঙ্গলে ভিতর আছে কিছু ভাঙ্গাচুরা ভুতুড়ে বাড়ী বহুদিন হয়েছে এ বাড়ীতে কোন জন-মানবের পদ চিহ্ন পড়েনি। এ বাড়ীর বাসিন্দা সাপ, শিয়াল, বন বিড়াল, বেজি, ইদুঁর ও চিকা। এদের সাথে যোগ দিল কবর। বেশ কয়েকটা রুম আছে। পাশে এটা বিরাট রুম যার মধ্যে একটি বট গাছ আছে। অনেক ভাবনার পর কবর পরিকল্পিত ভাবে একে একে সবাইকে শাস্তি দেবে বলে রাতে বের হল। কবর নিখোঁজ হওয়ার পর আফিল করে সাফকাত বে-কশুর খালাস পায়। তাই প্রথমে সাফকাতকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে আসে এবং হত্যা করে ঐ গোরস্তানে কবর দিয়ে রাখে। তারপর ভাবল, এভাবে কাউকে সতর্ক না করে ধরে আনলে, বা হত্যা করে কবর দিলে, সে অপ্রস্তুত থাকে। কোন প্রতিরোধ করে না। এতে কোন মজা নেই। একে একে অনেকেই খুন হয়ে গেল। এক সময় বাকী রইলো সেকেন্দার, বরকত, মধু, জব্বার ও ফারুক এই পাঁচ জন। প্রতিদিন একজন করে লোক হারিয়ে যাচ্ছে আর ঐ গোরস্তানে একটি করে নতুন কবর সৃষ্টি হচ্ছে এর হদিস কেউ বুঝতে পারে না। সংবাদ পত্র-পত্রিকাগুলো চারদিকে তন্য তন্য করে খুঝছে কিন্তু কোন খবর সংগ্রহ করতে পারছে না। শুধু পারছে আজ ওমুক হারিয়ে গেছে, ওমুক গোরস্থানে একটি নতুন কবর খোড়া হয়েছে। কে বা কারা এ কাজ করছে। কেউ জানতে পারছে না। পুলিশ বিভাগ বর্তমান নিরব কারন তারও অভিযান চালিয়ে কোন রেজাল্ট তৈরি করতে পারছেনা।

কবর সবার চোখে বালি ছিটিয়ে এই হত্যাকান্ড করে চলেছে। হঠাৎ একদিন চিঠি এল জব্বারের কাছে। জব্বার তুমি মানুষ খানা খুব জব্বর একখানা। আজ রাতে বারটার সময় আমার কাছে তোমাকে আসতে হবে। তুমি আমার ভিতর আসার জন্য তৈরী হও। ইতি কবর।

রাত দশটার সময় চিঠি পেল। এতদিন কেউ কোন কিছু পায় নি, আজ পেল একজন। জব্বার চিঠি পাওয়া মাত্রই সেকেন্দারকে জানাল সব। পরিকল্পনা করে জব্বারকে ঘরের ভিতরে রেখে সবাই সারা রাত পাহারা দিল। সবাই নিশ্চিত হল যে এ চিঠিটা ভুয়া কিন্তু ভোর হলে ঘরের দরজা খুলে দেখে জব্বার নেই। তৎক্ষনে ছুটে গেল গোরস্তানে দেখে আর একটি নতুন কবর খুড়া। সবাই হতবাক পুলিশসহ সাংবাদিকরাও।

বেশ কয়েদিন হল আর কোন চিঠি আসেনা কোন খুন খারাবি হয়না । পুলিশ গোরস্থানের পাশে ক্যাম্প করল। সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে বসে আছে কখন লোক আসে কবর খুড়ে ধরার জন্য। দেখার জন্য ছবি তোলার জন্য। এ সময় কবর ভিষন চিন্তায় পড়ে কিভাবে তার অপারেশন চালাবে। একবার ধরা পড়লে তার সব প্লান পরিকল্পনা বাঞ্চাল হয়ে যাবে। যেভাবে হোক সাংবাদিকদের তাড়াতে হবে। তাই নতুন পরিকল্পনা করল কবরের ভিতর লাউড স্পিকার সেট করে। বিভিন্ন কবরের মধ্যে নারীদের আর্তনাদ, বাচ্চাদের কান্না, বজ্রের হুংকার, আবার প্রেমের সংলাপ। কবরের ভিতর এই কখনো হাসি, কখনো কান্না, আবার কখনো চিৎকার। সাংবাদিক, পুলিশ সবাই ভুত ভয় পালাইল। ভুতের ভয়ে আর কেউ এদিকে আসে না। কিছু দিন হল খুন খারাবী নেই। কেউ আর হারিয়ে যাছেনা। এ সুযোগে সেকেন্দার ও ফারুক হোসেন মিলে রিতুর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করল। চারদিকে বিয়ের উৎসব সানাই বাজছে। সারা বাড়ী লোকে লোকারন্য কয়েক দিন ধরে। হঠাৎ চিঠি এল ফারুক হোসেনের কাছে। ফারুক জীবনে পাপের পাল­া এতই ভারী করেছো যে আর বইতে পারবা না। তোমার মাথা ভেংগে ফেলতে হবে। তোমার সময় শেষ, তুমি আজ রাত ১২টার সময় আমার কাছে এসো। ইতি আমি কবর।
চিঠিতে সবাই আতংকিত। ফারুকের পূর্বের সকলের কথা মনে মনে স্মরন করছে। আবার ভাবছে বাড়ী ভর্তি আমার মানুষ। এত মানুষের মাঝে আমার কি হবে! আমার কিছুই হবে না। এটা একটা হুমকি। তারপরও বাড়ীতে পুলিশ এনে চারি পাশে ঘিরে রাখল।

ফারুক বার বার ঘড়ি দেখছে কখন ১২.০০টা বাজে। দেখতে দেখতে ১১.৪৫, ১১.৫০, ১১.৫৫, ১১.৫৯, এমন সময় খুশিতে ও ঘুমাতে যায়। আজ ওর বেড রুমে ও একাই ঘুমাবে। ওর স্ত্রীকেও রাখেনি যে কেউ ওকে মারতে পারে বলে এ জন্য। তারপর বড় বাক্স খুলে অন্ত্র বের করতে গেলে দেখা গেল ওর ভিতর থেকে কবর বেরিয়ে এসে ফারুককে ধরে বসল এবং হাত পা ও মুখ বেঁধে বাথরুমের পাশ দিয়ে পানির টাংকি ও বাথরুমের পাইপের সাথে রশিতে ঝুলিয়ে নিয়ে চলে গেল। সবাই ভাবল চিঠিটা ধোকা ও কিছু না। রাত শেষ দরজা খুলে দেখে যেমনি ঘর তেমনি আছে কিন্তু ফারুক নেই। ও নিখোজ হয়ে গেছে। তৎক্ষনাৎ খোজ করে দেখা গেল আর একটি নতুন কবর খোড়া হয়েছে ঐ গোরস্থানে। বিয়ের দিন আর বিয়ে হলো না চারিদিকে শোকে শোকাহত।

পুলিশ বিভাগের এটা একটা দুর্বলতা প্রকাশ পেল। পুলিশ গার্ডে থাকা সত্বেও আজ ফারুক হোসেন নিহত। তাকে বাঁচাতে পারল না কেউ। কবর বিয়ে বাড়ীর আমন্ত্রিত অতীথি হয়ে প্লান করে তা বাস্তবায়ন করে গেল।

চারিদিকে আতœঙ্ক। পুলিশ বিভাগ খুবই তৎপর। এলাকায় কোন অপরিচিত লোক দেখলে, তাকে জবাব দিহি করছে। আবার অনেককে এ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যাছে। তার মধ্য থেকে সেকেন্দার ভিষন ভয় পেয়ে গেল। ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। পবিত্র মক্কা নগরীতে যাবে পাপের প্রায়শ্চিত্য করে হজ্বব্রত পালন করার জন্য। সব আয়োজন শুধু এটুকু বাকী রিতুকে বিয়ে দেওয়া। পুনরায় চিঠি এলো রিতুর কাছে।

রিতু,
তুমি মধুকে বিয়ে করলে বিধবা হবে। তাই বিবেচনা করে কাজ কর। এখন আমার টারগেট মধু। ঐ লম্পটকে নিজের হাতে কবরে শোয়াবো।
ইতি কবর।

চিঠিতে রিতু বিয়ে ভেংগে দিবার জন্য দাদাকে বুুজিয়ে সব বলল। সেকেন্দার কোন কথাই শুনতে রাজী নয়। বিয়ে হবেই হবে। ওদিকে আশিক ও রিপা এসব সংবাদ জানতে পেরে বাড়ী চলে এল। সাথে সাথে একটা চিঠি এল সেকেন্দার কাছে ঠিক ঐ রকম হুশিয়ারী চিঠি। সেকেন্দার কিন্তু ঘাবড়ালোনা। চারিদিকে সানাই বাজছে। মধু বরযাত্রী নিয়ে রওনা করবে। হঠাৎ পেট ব্যাথা করে ঊঠলো বলে একটু বাথরুমে গেল। কিন্তু এক ঘন্টা হয়ে গেল আর ফিরে আসেনা। পরে বাথরুমের দরজা ভেংগে দেখে ওর ভিতর আর কোন লোক নেই। তখন সবাই বুঝতে পারলো মধুকে ধরে নিয়ে গেছে। চারিদিকে খোজ খবর নিতে থাকে। সকালে দেখতে পায় ঐ গোরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছে মধুকে। মধুকে কবর থেকে তুলল পোষ্ট মর্টেম করা হল। ডাক্তারি চিকিৎসায় একে শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।

এবার কিন্তু আর কথা নয় পুলিশ ক্যাম্পই করে ফেলল। সাংবাদিকরা গোরস্থান ছেড়ে আর যায় না। ও দিকে সেকেন্দারের বাড়ীর চার পাশ দিয়ে পুলিশ ঘিরে রাখছে। তারপর বাড়ীর চার পাশে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে রেখেছে। যদি কেউ এর ভিতর আসে তাহলে সট খেয়ে মারা যাবে বলে। এত কিছুর পর ও কবর এল রাতে সেকেন্দারকে ধরতে এবার কিন্তু চিঠি দিই নাই। কারন চিঠির জন্য ওর বিরাট বেগ পেতে হচ্ছে। তারপর গোরস্তানটা ফাঁকা পাওয়া যাবে না। ওখানে সারাক্ষন পাহারা থাকবে। সেকেন্দারকে না পেয়ে রিতুকে পেল।

ঐ সময় রিতু কবরের একটা ছবি নিয়ে চুমু দিচ্ছে, আবার বুকের সাথে মিশিয়ে রাখছে। সেই সাথে রিতুর দু চোখ দিয়ে অশ্র“ গড়িয়ে বুকের বসন ভিজে যাচ্ছে। এ দৃশ্য জানালা পাশে দাড়িয়ে দেখে কবর নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারল না। তাই রিতুর দরজায় নক করে ভিতরে ঢুকল। রিতু চমকে উঠল চিৎকার করতে গেলে নাক মুখ বন্ধ করে ধরে এবং কবরের মুখের কালো কাপড় খুলে ওর নিজের পরিচয় দিল। দুজনের মিলন হল। কিন্তু এভাবে রিতুকে ফেলে রেখে যাওয়া উচিৎ হবে না বলে রিতুকে নিয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু সকলে টের পেয়ে গেল এবং পুলিশ ওর পিছু নিল। কোন মতে রিতুকে নিয়ে পালিয়ে গেলেও পুলিশ ওকে চিনতে পারল, ও জজ ইনজামূল হাসান কবর। ও নিখোজ হয়নি। আর এই সব খুন খারাবী, ও কবর খুড়ছে, ঐ কবরই।

কবর মনে মনে ভাবলো ওকে কেউ চিনতে পারেনি। ও রিতুর কাছে সব ঘটনা খুলে বলে। রিতু সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়ে কবরকে বুকে টেনে নেয়। চন্দ্র, সূর্য, আকাশ, বাতাস, মাটি, সাগর, সমুদ্র, পশু, পাখি গাছ-পালাকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করল এবং মিলন হল। বাসর শেষ হতে না হতেই ওর মনে জাগল প্রতিশোধের আগুন। ওদিকে কবর ও রিতুর ছবি পত্রিকায় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। রিতুকে জজ ইনজামুল হাসান কবর কিডনাপ করে নিয়ে গেছে। তাই কবরকে জীবিত অথবা মৃত ধরে দিতে পারলে দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার, এও ঘোষনা হয়েছে। কবর বুঝতে পেরেছে তার ধরা পড়ার সময় হয়েছে তার আগেই সব পরিকল্পনা শেষ করবে। যেভাবে হোক, গোরস্থান থেকে ঐ পুলিশের বাচ্চাদের তাড়াতে হবে। ক্যাসেট সেট অন করার পর নতুন চাকুরী নিয়ে আসা ব্রিলিয়ান্ট পুলিশ অফিসার এই চিৎকার কান্না হাসীর রহস্য উৎঘাটনে মাথা খাটাতে লাগল। তার পর মাটি খুড়ে খুড়ে ঐ লাউড স্পিকার গুলোর সন্ধান করল। তার বেয়ে বেয়ে সন্ধান করে ফেলল পাশের ঐ পোড়া বাড়ীটাকে এবং উদ্ধার করতে পারল সব রহস্য। তারপর চারিদিকে থেকে ঘিরে হামলা চালাল ঐ বাড়ীতে কবর রিতুকে নিয়ে পালাতে গিয়ে রিতুর গায়ে গুলি লাগে। রিতু মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়ে। তখন কবরও ধরা পড়ল।

যথারীতি কবরকে কোর্টে চালান দেওয়া হল। সেদিন কোর্ট থেকে শুরু করে সারা রাস্তা ঘাটে লোকে গিজ গিজ করতে লাগলো। সবাই কবরকে দেখতে আসছে, কবরের বিচারের রায় শুনতে এসেছে, কবরকে কাটগড়ায় দাড় করানো হলো। কবর সব কথা খুলে বলল। আরো বলল, ও প্রতিশোধ নিতে যেয়ে ৯ জনকে কবর দিয়েছে আর বাকী আছে দুজন। তাদের দেওয়া না পর্যন্ত ও কবরে যাবে না। যে কোর্টের বিচারক হয়েও প্রকৃত অপরাধীদের সাজা দিতে পারিনি। ও কোর্টের জজ হয়েও চোখের সামনে পিতা মাতাকে খুন হতে দেখে, তার বিচার করতে পারিনি। একদিন ওর পিতা মাতাকে মেরে কবর দিয়ে ছিল। ওর কবরের মাঝে জন্ম গ্রহন করতে হল, তারও বিচার করতে পারিনি। আজ ওর কোর্টের কাছে, আইনের কাছে একটি দাবী, সত্যিকারের অপরাধীর উপযুক্ত সাজা হওয়া উচিৎ। যাতে দেশে আর কোন অপরাধী জন্মগ্রহন করতে না পারে।

কোর্ট থেকে কবরের ফাঁসির হুকুম হয়। আগামী ২২ তারিখ সোমবার রাত তিনটার সময় ইনজামূল হাসান কবরের ফাঁসী কার্যকর করা হবে। এ আনন্দের সংবাদ শুনে খুশী মনে সেকেন্দার হায়াত ও বরকত মক্কা শরীফ যাচ্ছে হজ্জ পালন করতে। কাঠগড়া থেকে ও কারাগারের মুখে যাওয়ার সময় পুলিশের হাত থেকে ও পালিয়ে যায়। পুলিশ ওর পিছু নেওয়া সত্তে¡ও ওকে ধরতে পারে না।

সেকেন্দার হায়াত ও বরকত বাড়ী থেকে রওনা করেছে হজ্জের উদ্দ্যেশ্যে। ঠিক এমন সময় কবর হাজির। পিতা পুত্রকে ধরে, রশি গলায় পেচিয়ে গাড়ীর পিছনে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যায় ঐ কবরস্থানে। পথের মাঝে কখন যে ওরা মারা গেছে তা কেউ জানে না। পুলিশ ওর পিছু নেওয়া সত্তে¡ও রক্ষা করতে পারেনি। কবরস্থানে নিয়ে ওদের কবরে রেখে যখন মাটি টেনে কবরের উপর দিছিল। তখন পুলিশের একটি গুলি এসে কবরের বুকের ভিতর ঢুকে যায় এবং ও পড়ে যায়। তখন ও চিৎকার করে শুধু এ কথাগুলি বলছিল-আমি কবর। আমার ঠিকানা কবরে। আমার জন্ম কবরে। আমার মৃত্যুও কবরে। আস্তে আস্তে কবরের শরীর শীতল হয়ে গেল। আশিক রিপা ও পুলিশসহ হাজার হাজার মানুষ ততক্ষনে কবরের পড়ে যাওয়া কবরের কাছে এসে উপস্থিত হয়।

**********

157 thoughts on “জন্ম-মৃত্যু কবরে

  1. Undeniably believe that that you stated. Your favourite justification appeared to be at the net the simplest thing to keep in mind of. I say to you, I definitely get irked even as folks consider worries that they plainly do not recognize about. You controlled to hit the nail upon the top as smartlyand also defined out the whole thing with no need side effect , other folks can take a signal. Will likely be back to get more. Thank you

  2. I’m not sure why but this web site is loading extremely slow for me. Is anyone else having this issue or is it a problem on my end? I’ll check back later and see if the problem still exists.

  3. Hi! I’m at work browsing your blog from my new iphone 3gs! Just wanted to say I love reading your blog and look forward to all your posts! Keep up the excellent work!

  4. Hey I know this is off topic but I was wondering if you knew of any widgets I could add to my blog that automatically tweet my newest twitter updates. I’ve been looking for a plug-in like this for quite some time and was hoping maybe you would have some experience with something like this. Please let me know if you run into anything. I truly enjoy reading your blog and I look forward to your new updates.

  5. I simply could not depart your site prior to suggesting that I extremely enjoyed the standard information a person supply on your visitors? Is going to be back regularly in order to inspect new posts

  6. Thanks for the marvelous posting! I really enjoyed reading it, you are a great author. I will always bookmark your blog and will eventually come back down the road. I want to encourage you to ultimately continue your great job, have a nice weekend!

  7. Hey there! Someone in my Myspace group shared this site with us so I came to look it over. I’m definitely enjoying the information. I’m book-marking and will be tweeting this to my followers! Terrific blog and excellent style and design.

  8. When I originally commented I seem to have clicked the -Notify me when new comments are added- checkbox and now each time a comment is added I recieve four emails with the same comment. Perhaps there is a way you can remove me from that service? Many thanks!

  9. I’m not sure where you are getting your info, however good topic. I needs to spend a while studying more or working out more. Thank you for fantastic information I used to be in search of this information for my mission.

  10. Howdy just wanted to give you a quick heads up. The text in your post seem to be running off the screen in Chrome. I’m not sure if this is a format issue or something to do with web browser compatibility but I thought I’d post to let you know. The style and design look great though! Hope you get the problem solved soon. Cheers

  11. Having read this I thought it was really informative. I appreciate you finding the time and effort to put this article together. I once again find myself spending way too much time both reading and leaving comments. But so what, it was still worth it!

  12. I’m not positive where you are getting your info, however good topic. I needs to spend a while learning more or understanding more. Thank you for great information I used to be looking for this information for my mission.

  13. I am curious to find out what blog system you have been working with? I’m experiencing some minor security problems with my latest site and I would like to find something more safe. Do you have any solutions?

  14. Please let me know if you’re looking for a article author for your weblog. You have some really great posts and I think I would be a good asset. If you ever want to take some of the load off, I’d really like to write some material for your blog in exchange for a link back to mine. Please send me an e-mail if interested. Thank you!

  15. Нужна стяжка пола в Москве, но вы не знаете, как выбрать подрядчика? Обратитесь к нам на сайт styazhka-pola24.ru! Мы предлагаем услуги по устройству стяжки пола любой площади и сложности, а также гарантируем быстрое и качественное выполнение работ.

  16. I know this if off topic but I’m looking into starting my own blog and was wondering what all is required to get set up? I’m assuming having a blog like yours would cost a pretty penny? I’m not very internet savvy so I’m not 100% positive. Any tips or advice would be greatly appreciated. Kudos

  17. Совершите свой ремонт без лишних усилий. Штукатурка по маякам стен с mehanizirovannaya-shtukaturka-moscow.ru обеспечит вам идеально ровные стены.

  18. I used to be recommended this website through my cousin. I am not positive whether this publish is written by way of him as no one else realize such special approximately my difficulty. You are amazing! Thank you!

  19. What i do not realize is in reality how you’re now not really a lot more well-appreciated than you may be right now. You are so intelligent. You realize therefore significantly in relation to this matter, produced me for my part consider it from so many numerous angles. Its like men and women aren’t fascinated until it’s something to accomplish with Lady gaga! Your personal stuffs nice. Always maintain it up!

  20. Have you ever considered about including a little bit more than just your articles? I mean, what you say is valuable and all. Nevertheless think about if you added some great visuals or video clips to give your posts more, “pop”! Your content is excellent but with images and clips, this site could undeniably be one of the very best in its niche. Very good blog!

  21. Hi, I do believe this is an excellent website. I stumbledupon it 😉 I am going to return once again since I book marked it. Money and freedom is the best way to change, may you be rich and continue to help other people.

  22. Thank you, I have recently been searching for information approximately this topic for ages and yours is the best I have came upon so far. However, what concerning the conclusion? Are you positive concerning the source?

  23. Woah! I’m really enjoying the template/theme of this site. It’s simple, yet effective. A lot of times it’s very difficult to get that “perfect balance” between user friendliness and visual appeal. I must say you have done a very good job with this. In addition, the blog loads extremely fast for me on Chrome. Exceptional Blog!

  24. With havin so much content and articles do you ever run into any problems of plagorism or copyright violation? My website has a lot of exclusive content I’ve either created myself or outsourced but it looks like a lot of it is popping it up all over the web without my authorization. Do you know any solutions to help protect against content from being ripped off? I’d definitely appreciate it.

  25. I do agree with all the ideas you have presented for your post. They are very convincing and will definitely work. Still, the posts are too brief for novices. May just you please prolong them a bit from next time? Thank you for the post.

  26. Hey there just wanted to give you a quick heads up. The text in your post seem to be running off the screen in Firefox. I’m not sure if this is a format issue or something to do with web browser compatibility but I thought I’d post to let you know. The style and design look great though! Hope you get the problem solved soon. Many thanks

  27. Thank you for some other informative blog. Where else may just I am getting that kind of info written in such a perfect means? I have a project that I am simply now operating on, and I have been at the glance out for such information.

  28. It’s really a nice and helpful piece of information. I’m glad that you shared this helpful info with us. Please stay us informed like this. Thanks for sharing.

  29. Howdy just wanted to give you a quick heads up. The text in your post seem to be running off the screen in Safari. I’m not sure if this is a format issue or something to do with internet browser compatibility but I thought I’d post to let you know. The design and style look great though! Hope you get the problem resolved soon. Many thanks

  30. First off I want to say wonderful blog! I had a quick question that I’d like to ask if you don’t mind. I was curious to know how you center yourself and clear your thoughts before writing. I have had a tough time clearing my mind in getting my thoughts out. I do enjoy writing but it just seems like the first 10 to 15 minutes are wasted just trying to figure out how to begin. Any suggestions or tips? Cheers!

  31. Hello would you mind stating which blog platform you’re working with? I’m looking to start my own blog in the near future but I’m having a difficult time making a decision between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal. The reason I ask is because your design and style seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique. P.S My apologies for getting off-topic but I had to ask!

  32. What i do not realize is in reality how you’re now not really a lot more well-appreciated than you may be right now. You are so intelligent. You realize therefore significantly in relation to this topic, produced me individually consider it from so many various angles. Its like men and women don’t seem to be interested unless it’s something to accomplish with Lady gaga! Your own stuffs excellent. All the time maintain it up!

  33. Simply wish to say your article is as surprising. The clearness in your post is simply nice and i can assume you are a professional in this subject. Well with your permission allow me to grasp your RSS feed to stay up to date with forthcoming post. Thank you a million and please keep up the gratifying work.

  34. hey there and thank you for your information I’ve definitely picked up anything new from right here. I did however expertise some technical issues using this web site, since I experienced to reload the site a lot of times previous to I could get it to load properly. I had been wondering if your web hosting is OK? Not that I am complaining, but sluggish loading instances times will very frequently affect your placement in google and can damage your quality score if advertising and marketing with Adwords. Anyway I’m adding this RSS to my e-mail and can look out for a lot more of your respective fascinating content. Make sure you update this again soon.

  35. I believe what you postedtypedsaidbelieve what you postedtypedsaidthink what you postedwrotebelieve what you postedwroteWhat you postedwrotesaid was very logicala bunch of sense. But, what about this?consider this, what if you were to write a killer headlinetitle?content?wrote a catchier title? I ain’t saying your content isn’t good.ain’t saying your content isn’t gooddon’t want to tell you how to run your blog, but what if you added a titlesomethingheadlinetitle that grabbed people’s attention?maybe get people’s attention?want more? I mean %BLOG_TITLE% is a little vanilla. You could peek at Yahoo’s home page and watch how they createwrite news headlines to get viewers interested. You might add a video or a related picture or two to get readers interested about what you’ve written. Just my opinion, it could bring your postsblog a little livelier.

  36. Thank you, I have recently been searching for information approximately this topic for ages and yours is the best I have found out so far. However, what about the conclusion? Are you positive concerning the source?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *