আলু চাষে সমস্যা ও সমাধান

  • আলু চাষে সমস্যা ও সমাধান

 

আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা (লেইট ব্লাইট)

লক্ষণ
এ রোগের আক্রমনে
১। প্রথমে পাতা, ডগা ও কান্ডে ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ পড়ে। খুব দ্রুত এই দাগ গাঢ় খযেরী রং ধারণ করে। পাতার নিচে দাগের চারদিকে ধুসর সাদা বর্ণের জীবাণুর মাইসেলিয়া ও স্পোর দেখতে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত আক্রমনে পাতা ও কান্ড পুড়ে যাওয়ার ন্যায় দেখা যায় এবং খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন একে মড়ক লাগা বলে।
২। ভোরে দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাইডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে ও পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে।
৩। দীর্ঘ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ৯০% এর বেশি থাকলে এবং তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ১০ ঘন্টার মধ্যে এই রোগের আক্রমন ঘটতে পারে।
৪। ঘন কুয়াশা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা এবং অতিরিক্ত বাতাসের আর্দ্রতা এই রোগের জন্য অনূকুল।

প্রতিকার:
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। আক্রান্ত জমিতে সেচ যথাসম্ভব বন্ধ কওে দিতে হবে।
৩। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ম্যানকোজেব বা ফেনামেডন জাতীয় ছত্রাক নাশক ( যেমন; সিকিউর ৬০০ ডব্লিউ জি বা রিডোমিল গোল্ড) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ¯েপ্র করতে হবে।

আগাম ধ্বসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ

লক্ষণ:
এ রোগের আক্রমনে
১। গাছের নিচের পাতায় ছোট ছোট বাদামি রংয়ের অল্প বসে যাওয়া কোনাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত অংশে সামান্য কালচে বংয়ের চক্রাকার দাগ পড়ে।
২। পাতার বোটা ও কান্ডের দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়।
৩। গাছ হলুদ হয়ে যাওয়া, পাতা ঝরে পড়া এবং অকালে গাছ মওে যাওয়া এ রোগর অন্যতম লক্ষণ।
প্রতিকার:
১। সুষম সার ও সময়মতো সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
২। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ম্যানকোজেব বা প্রপ্রিনেব ও ইপ্রোভেলিকার্ব জাতীয় ছত্রাননাশক মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ¯েপ্র করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়।

আলুর পাতা মোড়ানো রোগ

লক্ষণ
ভাইরাসের কারণে এ রোগের আক্রমন হয়। আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায়। আক্রান্ত পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রংয়ের হয়। গাছ খাটো হয়ে যায় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাড়িয়ে থাকে।

প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। কীটনাশক ( এজোড্রিন, নোভাক্রন, মেনোড্রিন ইত্যাদি) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে অথবা ডাইমেক্রন বা ডেল্টামেথ্রিন (যেমন; ডেসিস) জাতীয় কীটনাশক ১ মিলি হাওে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে ¯েপ্র করতে হবে। ু
৩। আক্রান্ত গাছ টিউবারসহ তুলে ফেলতে হবে।

মোজাইক রোগ

লক্ষণ
পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়। লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়। জাব পোকা ও অন্যান্য রস শোষণকারী পোকা পাতা ও গাছ থেকে রস চুষে গাছকে দূর্বল কওে দেয়। ভাইরাস ও আলুর জাতের উপর নির্ভর করে লক্ষণ ভিন্নতর হয়।

প্রতিকার

১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। টমেটো, তামাক এবং কতিপয় সোলানেসি গোত্রভুক্ত আগাছা এই ভাইরাসের বিকল্প পোষক। সুতরাং আশেপাশে এ ধরনের গাছ রাখা যাবে না। আক্রান্ত গাছ আলুসহ তুলে ফেলতে হবে।
৩। ভাইরাস বাহক পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড ( যেমন; এডমায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হার্ েঅথবা ডাইমেক্রন ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর জমিতে ¯েপ্র করতে হবে।

আলুর কাটুই পোকা

লক্ষণ
১। কাটুই পোকা বীজ আলুর ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে আলু গাছ গজাতে পারে না। অথবা গজালেও খাদ্যাভাবে মারা যায়।
২। রাতের বেলা কচি চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে।

প্রতিকার

ডেল্টামেথ্রিন (যেমন; ডেসিস) জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটারে ০.৫ মিলি হারে অথবা ক্লোরপাইরিফস (যেমন; ডারসবান) জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি হারে মিশিয়ে বিকেল বেলায় গাছের গোড়া ও মাটি ¯েপ্র করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পর ¯েপ্র করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *