
ড. মো. বায়েজিদ মোড়ল: আমাদের খাদ্য উপকরণের মধ্যে সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। সবজিছাড়া তরি-তরকারি বা সালন কল্পনা করা যায় না। আবার আমাদের শরীরের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি বড় অংশ আসে এই সবজি থেকে। এছাড়া সবজির বাণিজ্যিক চাষে লাভবান হতে পারেন অনেকেই, ভাগ্য বদলে যেতে পারে যে কোন বেকার মানুষেরই। এখানে কয়েকটি সবজির চাষাবাদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো। আধূনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারলে কোন কোন সবজির উৎপাদন সারাবছরই সম্ভব।
ফুল কপি
ফুল কপি একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আমাদের দেশের জনপ্রিয় সবজি। আমাদের দেশে চাষকৃত ফুলকপির জাত অধিকাংশই সংকর জাতের এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত, এসব স্থানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করে না।
মাটি
আগাম ফসলের জন্য দো-আঁশ এবং নাবি ফসলের জন্য এঁটেল ধরনের মাটি উত্তম। এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল জন্মানো যায়।
বীজের হার ও চারা উৎপাদন
চারা তৈরির জন্য ৬x২ হাত আকারের বীজতলা তৈরি করতে হবে। একর প্রতি ১২০-১৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। ফুলকপি চাষের জন্য ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। এজন্য লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৬০ সেমি. (২ফুট) এবং লাইনে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫ সেমি. (১১/২ফুট) হবে।
বপনের সময়
ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করতে হয় এবং কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত (মধ্য নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর) জমিতে চারা রোপণ করা যায়।
সারের পরিমাণ
ফুল কপি চাষের জন্য মাঝারি উর্বর জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম সারের পরিমান/ হেক্টর
ইউরিয়া ২৫০-৩০০ কেজি
টিএসপি ১৫০-২০০ কেজি
এমপি ২০০-২৫০ কেজি
গোবর ১৫-২০ টন
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে জমিতে সেচ দিতে হয়। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ৮-১০ দিন পর বাকি সার ১ম কিস্তি এবং চারা রোপণের ৩০ ও ৫০ দিন পর বাকি সার ২য় কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
ফসলের যত্ন যেমন- আগাছা দমন, সার প্রয়োগ, পানি সেচ, নিকাশ পানি ও আস্তরণ ভেঙে দেয়া এবং মাটি ঝুরঝুরে রাখে আবশ্যক। ফুলকপির ফুলের রঙ ধবধবে সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থা থেকে চারদিকের পাতা বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হয়। অন্যথায় সূর্যালোক উন্মোচিত থাকলে ফুলের বর্ণ হলুদাভ হয়ে যায়।
বাঁধাকপি
বাঁধাকপি আমাদের দেশে একটি বহুল ব্যবহৃত শীতকালীন সবজি। বাঁধাকপির অধিকাংশ জাতই সংকর এবং এদের বীজ প্রতিবছর আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের স্থানীয় আবহাওয়া বাঁধাকপির বীজ উৎপাদনের উপযোগী নয়। তবে কোন কোনো জাত অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা অঞ্চলেও বীজ উৎপাদন করতে পারে। বাঁধাকপি রবি মৌসুমের একটি অন্যতম পুষ্টিকর সবজি।
বাঁধাকপির জাত
১। বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী), ২। বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)।
প্রভাতী
জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৮৫ সনে অনুমোদন করা হয়। এ জাত এ দেশে ফুল ও বীজ উৎপাদনের সক্ষম। বীজ বপনের ১০০-১১০ দিন বাঁধাকপি সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হয়। প্রতিটি বাঁধাকপির ওজন ২-২.৫ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ফলন হবে ৫০-৬০ টন। এছাড়া হেক্টর প্রতি বীজ উৎপাদন হয় ৪০০-৫০০ কেজি।
অগ্রদূত
বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে তা সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়। বাঁধাকপি গোলাকার উপর নিচ- চেপ্টা। প্রতি বাঁধাকপির ওজন হবে ২-২.৫ কেজি। বীজ বপন থেকে কপি উৎপাদন পর্যন্ত ১০০-১১০ দিন সময় লাগে এবং হেক্টর প্রতি ফলন ৫৫-৫৬ টন। হেক্টর প্রতি বীজের ফলন পাওয়া যায় ৫৫০-৬৫০ কেজি।
উৎপাদন প্রযুক্তি
জলবায়ু ও মাটি
প্রায় সব ধরণের মাটিতে বাঁধাকপি জন্মানো হয়। তবে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি উত্তম।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ
বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। ভালোভাবে জমি চাষ করার পর ১৫-২০ সে.মি উঁচু এবং মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি. প্রশস্ত নালা রাখতে হবে। বেডের ওপর ৬০ সেমি. দূরত্বে ২টি সারি করে প্রতি সারিতে ৪৫ সেমি. দূরে দূরে চারা লাগাতে হয়।
বপনের সময়
ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য-অক্টোবর) থেকে শুরু করে কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) পর্যন্ত বাঁধাকপির চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
সার প্রয়োগ
বাঁধাকপির জমিতে নিুরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৩০০-৩৫০ কেজি
টিএসপি ২০০-২৫০ কেজি
এমপি ২৫০-৩০০ কেজি
গোবর/ কম্পোস্ট ৫-১০ টন।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি ও ১০০ কেজি এমপি সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ ইউরিয়া ও বাকি এমপি সার ৩ কিস্তিতে চারা রোপণের ১০, ২৫ দিন পর এবং মাথা বাঁধার সময় প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সেচ
বেশি ফলনের জন্য বাঁধাকপি জমিতে চারা রোপণের ২০-৩০ দিন পর পর ২-৩টি সেচ দিতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা রোপণের পর মাটি ঝুরঝুরে রাখতে হবে। এজন্যে পানি সেচ দেয়ার পর জমিতে জোঁ এলে কোদাল দ্বারা হালকা কোপ দিয়ে মাটির উপরের আস্তরণ ভেঙে দিতে হবে।
বেবীকর্ণ
বেবীকর্ন চাষে এখন অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। ব্যপকভাবে শুরু হয়েছে বেবীকর্ণ চাষ। পানি জমে থাকে না এরূপ মাঝারী ও উঁচু জমি, পলিযুক্ত দোয়াশ, বেলে দোয়াশ এবং এটেল দোয়াশ মাটিতে বেবীকর্ণ চাষ ভাল হয় । বীজ বপন থেকে ফলন পেতে গ্রীষ্মে ৫৫ থেকে ৬০ এবং শীতে ৭০ থেকে ৮০ দিন সময় লাগে। সুতরাং বছরে চার/পাঁচ বার বেবীকর্ণের চাষ করা যায় । এটি ঢাকার সাভারস্ত মেইটকা গ্রামের বেবীকর্ণ ক্ষেত।
আগে থাইল্যান্ড থেকে বীজ আসত। এখন বাংলাদেশেই বেবী কর্ণের বীজ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকটা ভুট্টার মত চাষ করতে হয়। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ১ বিঘা জমিতে বেবীকর্ণ চাষ করতে খরচ পড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা । সেই জমিতে থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেবীকর্ণ বিক্রি করা যায়।
গাছ থেকে বেবী কর্ণের মোচা সংগ্রহের পর দুই পাশ কেটে অথবা মোচা ছড়িয়ে বেবীকর্ণ বের করে ১০/২০ টি করে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয় । বেবী কর্নের কোন অংশই ফেলনা নয়। বেবীকর্ণ
সংগ্রহের পর বেবীকর্ণের গাছ সবুজ থাকে বলে উচ্ছিষ্ট গাছ গরুর উৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এই সুস্বাদু সবজিটি অভিজাত হোটেল বা চায়নীজ রেষ্টুরেন্টে মিক্সড ভেজিটেবল ক্যাংলিং স্যুপ ইত্যাদি খাবারে ব্যবহৃত হয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেবীকর্ণের প্রচুর বাজার চাহিদা আছে। তাই বেবীকর্ণ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ফসল।
বেগুন
বেগুন বাংলাদেশের জমিতে চাষকৃত একটি জনপ্রিয় শীর্ষস্থানীয় সবজি। আলুর পরে এর স্থান। প্রায় সারা বছর এটি চাষ করা যায়। তবে শীত মৌসুমে ফলন বেশি হয়।
মাটি
রবি মৌসুমই সব জাতের বেগুন চাষের জন্য অধিকতর উপযোগী। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুন জন্মে। তবে দো-আঁশ, পলি মাটি ও বেলে দো-আঁশ মাটি বেগুনের জন্য সবচেয়ে ভালো।
জাত
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হয়। এ জাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-উত্তরা, তারাপুরী, কাজলা, নয়নতারা, ইসলামপুরী, শিংনাথ, খটখটিয়া, ঝুমকা, কাজী, ভাংগুরা, এসব। উৎকৃষ্ট জাতের বেগুনের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
জাত ফলন (হেক্টরপ্রতি) ক্ষমতা
উত্তরা ৬০-৬৫ টন সহনশীল মাঝারি
তারাপুরী ৭৫-৮৫ টন বেশি নাই
কাজলা ৫৫-৬০ টন সহনশীল মাঝামাঝি
নয়নতারা ৪৫-৫০ টন মাঝামাঝি মাঝারি
ইসলামপুরী ৩৬টন মাঝামাঝি নাই
শিংনাথ ৩০ টন মাঝামাঝি মাঝারি
খটখটিয়া ২৯ টন মাঝামাঝি মাঝারি
ভাংগুরা ৩০ টন মাঝামাঝি নাই
জমি তৈরি
জমি তৈরি করে ৫-৬টি চাষ ও মাই দিয়ে আগাছা বেছে মাটি মোলায়েম করে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন
শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য মধ্য আগস্ট থেকে অক্টোবরের (আশ্বিন) মাঝামাঝি পর্যন্ত এবং বর্ষাকলীন বেগুনের জন্য মধ্য এপ্রিল (চৈত্র) থেকে মধ্য মে এবং গ্রীষ্মকালীন বেগুনের জন্য মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ (মাঘ-ফাল্গুন) পর্যন্ত চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। বীজতলার মাটিতে প্রতি ১ ভাগ ফরমালডিহাইডের সাথে ৫০ ভাগ পানি মিশিয়ে শোধন করে নিলে ভালো হয়। প্রথমে বীজতলায় ঘন করে বীজ ফেলতে হয়। বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করা বাঞ্ছনীয়। বীজতলায় মাটি ও সমপরিমাণ বালি এবং কম্পোস্ট মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। বীজ বপনের জন্য প্রতি বীজতলায় (৩দ্ধ১) বর্গ মি. প্রায় ৮ গ্রাম বীজ দরকার হয়।
চারা রোপণ
৫-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সে.মি দূরত্বে সারি করে ৬০ সে.মি দূরে দূরে রোপণ করতে হয়। বিভিন্ন জাতের বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব ১০-১৫ সে.মি. কম-বেশি করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ
উত্তরা জাতের জন্য নিুরূপ পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম মোট পরিমাণ
(হেক্টর প্রতি) শেষ চাষের সময় পরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
গোবর ৮-১২ টান সব – – –
ইউরিয়া ৩০০ কেজি – ১০০ কেজি ১০০ কেজি ১০০ কেজি
টিএসপি ১৫০ কেজি গব – – –
এমওপি ২৫০ কেজি ৮০-৯০ কেজি – ৪০-৪৫ কেজি ৪০-৪৫ কেজি
জিপসাম ৪০ কেজি সব – – –
* মাটির উর্বরতাভেদে সার ও তার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
দেশী জাতের বেগুন যেমন ইসলামপুরী, খটখটিয়া, শিংনাথ এসবের ক্ষেত্রে সারের পরিমাণ ২৫% কম দিলেও চলবে। প্রথম কিস্তির সার চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তির ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় কিস্তির ফল সংগ্রহের মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
চারা রোপণের মাসখানেক পর থেকে মাঝে মধ্যে গাছের গোড়ার মাটি আলাদা করে দিতে হয়। গাছের সুষ্ঠ বৃদ্ধির জন্য শুষ্ক মৌসুমে সেচের খুবই প্রয়োজন। বেলে মাটিতে ও শীতকালে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর সেচ দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া প্রত্যেক কিস্তি সার প্রয়োগের পরে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়। তবে মাটির ‘জো’ দেখেই সেচের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা বেগুনের প্রধান শত্র“। এ পোকার কীড়া, ডগা ও ফল ছিদ্র করে ভিতরের অংশ খেয়ে ফেলে এবং আক্রান্ত অংশ শেষ পর্যন্ত পচে যায়। এ পোকা দেখা গেলে রিপকর্ড বা সিমবুস ১ মি.লি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে পোকা দমন করা সবচেয়ে উত্তম। এ ব্যবস্থার জন্য নিুলিখিত পদক্ষেপ নিতে হবেঃ
# বেগুন ক্ষেতে প্রতি সপ্তাহে জরিপ করে ডগা ও ফলে মাজরা পোকার উপস্থিতি যাচাই করতে হবে।
# আক্রান্ত ডগা ও ফল কীড়াসহ ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
# পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
# একই জমিতে প্রতিবছর বেগুনের চাষ করা যাবে না।
# স্থানীয়ভাবে পরীক্ষিত যে সব বেগুনের জাতে পোকার আক্রমণ কম হয় সে সব জাতের বেগুনের চাষাবাদ করতে হবে।
বেগুনের বিভিন্ন রোগের মধ্যে গাছের গোড়া পচা, ঢলে পড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগগুলো অন্যতম। গোড়া পচা রোগ দমনের জন্য ভিটাভেক্স-২০০, এক (১) গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলে পড়া রোগও খাটো আকৃতির পাতা রোগের আসলে কোনো দমন ব্যবস্থা নেই। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে। একই জমিতে বেগুন ও টমেটো পর পর লাগানো উচিত নয়। আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বুনার পর জাত বিশেষে ফুল আসতে ৬০-৯০ দিন এবং ফুল ফোটার পর থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু করতে গড়ে ৩০ দিন সময় লাগে। ফল এমন পর্যায়ে সংগ্রহ করতে হবে যখন এটি যথেষ্ট বড় হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না।
ফলন
সাধারণত হেক্টরপ্রতি ৩০-৪০ টন বেগুন উৎপন্ন হয়। তবে উত্তরা (বারি বেগুন-১) জাতটি সর্বোচ্চ ৬০-৬৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে।
ঢেঁড়স
হলুদ শিরা রোগ প্রতিরোধী ঢেঁড়সের নতুন জাত
বারি ঢেঁড়স-১
ঢেঁড়স বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের একটি অন্যতম প্রধান সব্জি। সারা দেশে ঢেঁড়সের জনপ্রিয়তা থাকলেও মূলত শহরের লোকের কাছে অধিক সমাদৃত। ঢেঁড়সে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন বি, সি, এ এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বিশেষ করে আয়োডিন রয়েছে। ইহা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আমাদের দেশে ঢেঁড়স মূলত ভাজি, ভর্তা এবং ব্যঞ্জনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে ঢেঁড়সের দু’একটি অনুমোদিত বিদেশী জাত ব্যতীত বাকী সবই নামবিহীন স্থানীয় জাত। এসব জাতের কোনটিই হলুদ শিরা রোগ মুক্ত নয়। এ রোগের আক্রমণে ঢেঁড়সের ফলন শতকরা ৫০-৬০ ভাগ কমে যায়। কোন কোন সময় এ রোগ সম্পূর্ণ ফসল ধ্বংস করে দেয়। সাদা মাছি নামক এক প্রকার পোকা এ রোগ ছড়ায়। পোকা দমন করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়। কিন্তু ঢেঁড়স ঘন ঘন সংগ্রহ করতে হয় বলে কীটনাশক ব্যবহার করা মোটেও নিরাপদ নয়। তাই রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনই এর প্রকৃত সমাধান।
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সব্জি বিজ্ঞানীরা ঢেঁড়সের হলুদ শিরা রোগ প্রতিরোধী জাত খুঁজে বের করার লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এ উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশ থেকে বহু সংখ্যক জার্মপ্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। প্রচলিত প্রজনন প্রক্রিয়ায় ওকে- ০২৮৫ লাইনটি হলুদ শিরা রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডেও অনুমোদনে উক্ত লাইনটি বারি ঢেঁড়স-১ নামে ১৯৯৬ সালে মুক্তায়ন করা হয়।
বৈশিষ্ট্য
বারি ঢেঁড়স-১ এদেশের আবহাওয়ায় বছরের প্রায় সময় (নভেম্বর-জানুয়ারি মাস ছাড়া) সফলভাবে চাষ করা যায়। পরিপক্ক এবং শুষ্ক বীজে বাদামী লোমশ আবরণ আছে যা এ জাতের একক বিশিষ্ট্য। প্রতিটি গাছে ৩-৪ টি করে পার্শ্ব শাখা বের হয়ে কাণ্ডের মতই ফল দেয়। কাণ্ড অনির্ধারিত ভাবে বাড়তে থাকে এবং প্রায সব পাতার কক্ষেই ফুল ও ফল ধরে। গাছ ২.০-২.৫ মি. লম্বা। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৫ গ্রাম। একটি গাছে ২৫-৩০ টি ঢেঁড়স ধরে। ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা ৪০-৬০টি এবং ১০০০টি বীজের গড় ওজন প্রায় ৬০ গ্রাম।
মাটি ও জলবায়ু
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি ঢেঁড়স চাষের জন্য উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এঁটেল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। ঢেঁড়স উৎপাদনের জন্য উষ্ণ জলবায়ু প্রয়োজন। ইহা শুষ্ক এবং র্আদ্র উভয় অবস্থায় ভাল জন্মাতে পারে। রাত্রিকালীন উচ্চ তাপমাত্রা গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অধিক বৃষ্টিপাত ও আর্দ্র পরিবেশে গাছ রোগ ও পোকার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। বর্ষাকালে কাদা-মাটিতে ঢেঁড়সের চাষ করা উচিত নয়।
উৎপাদন মৌসুম
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সারা বছরই ঢেঁড়স জন্মানো সম্ভব হলেও মূলত খরিপ মৌসুমেই এর ব্যাপক চাষাবাদ করা হয়। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস বীজ বপনের উপয্ক্তু সময়।
জমি তৈরী ও বীজ বপন
৪-৫বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ভাল ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ দেয়া প্রয়োজন। ঢেলা ভেঙ্গে, আগাছা পরিষ্কার করে ভালভাবে জমি তৈরী করে নিতে হবে। তৈরী জমিতে এক মিটার প্রশস্ত ভিটি তৈরী করতে হয়। পাশাপাশি দুটি ভিটির মাঝখানে ৩০ সে.মি. প্রশস্ত নালা রাখতে হয়। সারি করে বীজ বপন করা হয়। উৎপাদন মৌসুমের উপর বপন দূরত্ব নির্ভরশীল। আগাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে গাছ কিছুটা খাটো এবং ডালপালা কম থাকে বিধায় কিছুটা ঘন করে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে। মৌসুমে উৎপাদনের জন্য বপন দূরত্ব সারি থেকে সারি ৬০ সে. মি. এবং সারিতে গাছ ৫০ সে.মি.। ঢেঁড়সের বীজের খোসা শক্ত বলে বীজ অংকুরিত হতে অনেক সময় লাগে। বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে মাঠে বপন করলে অংকুরোদগম সহজতর হয়। প্রতি গর্তে দুটি বীজ দিতে হবে। দুটি বীজই গজালে ৪-৫ পাতা অবস্থায় সুস্থ সবল চারা রেখে অন্যটি তুলে ফেলতে হবে। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সার প্রয়োগ
উচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য সুষম সার প্রয়োগ করতে হয়। সারের মাত্রা জমির উর্বরতা শক্তির উপর নির্ভরশীল। সাধারণত প্রতি হেক্টরে নিুোক্ত পরিমান সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার হেক্টরপ্রতি মোট পরিমান শেষ চাষের সময় দেয় উপরি প্রয়োগ
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
গোবর/কম্পোষ্ট ১৪ টন সব – – –
টিএসপি ১০০ কেজি সব – – –
ইউরিয়া ১৫০ কেজি ৭৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি
এমপি ১৫০কেজি ৭৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি
শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোষ্ট ও টিএসপি এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি সার জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী অর্থেক ইউরিয়া এবং এমপি সার সমান তিন কিস্তিতে বীজ বপনের যথাক্রমে ৩০, ৪৫ ও ৬০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা
গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার ও মাটির উপরিভাগ আলগা করে দিতে হবে। মাঝে মাঝে বিশেষ করে সেচ দেয়ার জমিতে ‘জো’ আসলে কোদালের পাতলা কোপ দিয়ে মাটির উপরের চট ভেঙ্গে দিতে হবে। এতে মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং মাটি অনেকদিন রস ধরে রাখতে পারে ফলে গাছ তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে। আগাম মৌসুমে ঢেঁড়স চাষ করলে পানি সেচ দেয়া বিশেষ প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়ায় মাটির প্রকার ভেদে ১০/১৫ দিন অন্তর সেচ দেয়া প্রয়োজন হতে পারে। বর্ষাকলে গাছের বৃদ্ধি গাছের বৃদ্ধি ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য ২৫-৩০ সে. মি উঁচু করে বেড তৈরী করতে হবে। শুষ্ক আবহাওয়ায় প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
রোগবালাই
হলুদ শিরা বা মোজাইক ভাইরাস রোগ ঢেঁড়সের প্রধান শত্র“। দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃষকদের মাঠে পরীক্ষায় বারি ঢেঁড়শ-১ জাতটি উক্ত রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় কৃষকগণ বারি ঢেঁড়স চাষে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হচ্ছেন।
পোকামাকড়
ফল ও ডগার মাজরা পোকা, জেসিড এবং সাদা মাছি পোকা ঢেঁড়স উৎপাদনের বিশেষ ক্ষতি করে। মাজরা পোকা দমন করতে গাছে ফুল ধরা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রিপকর্ড অথবা সিমবুস প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি মিশিয়ে ছিটাতে হবে। ফল ধরা শুরু হলে ঔষধ ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে পোকার আক্রমণ খুব বেশী হলে স্বল্পস্থায়ী কীটনাশক যেমন ম্যালথিয়ন, নগস, ভ্যাপোনা ইত্যাদি মাত্রা অনুযায়ী ছিটাতে হবে। জেসিড পোকা দমনের জন্য উপরে উল্লিখিত কীটনাশকগুলোই কার্যকরী। সাদা মাছি পোকা দমনে রগর বা রক্সিয়ন প্রতি লিটার পানিতে ২য় মি.লি. মিশিয়ে ছিটাতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
ফাল্গুন চৈত্র মাসের মধ্যে বীজ বপন করলে ৪০-৪৫ দিনে এবং এর পর বপন করলে ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল ফোটার ৫/৬ দিন পর থেকেই ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের বয়স ১০ দিনের বেশী হলে ফল আঁশময় এবং পুষ্টিমানের দিক দিয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যায়। খাওয়ায় উপযোগী হওয়া মাত্রই ফল সংগ্রহ করা উচিত। না হলে কাণ্ডের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং মোট ফলন কমে যায়। গাছের প্রধান কাণ্ডে প্রতি একদিন অন্তর ফুল ফুটে এবং একটি পত্রকক্ষে একটি মাত্র ফুল ধরে। প্রতি একদিন অন্তর ফসল সংগ্রহ করতে হয়। জাতটির মোট জীবনকাল প্রায় পাঁচ মাস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতটির ফলন প্রতি হেক্টরে ১৪-১৬ টান।
মুড়ি ফসল
স্বাভাবিক উৎপাদন মৌসুমের শেষে গাছের প্রধান কাণ্ডের মাথা কেটে ২/৩ টি শাখা রেখে যতœ নিলে মুড়ি ফসল হিসেবে আরও কিছুদিন ঢেঁড়স পাওয়া যায়।
বীজ উৎপাদন
ঢেঁড়সের বীজ উৎপাদন বিশেষ সতর্কতা ও কলাকৌশল প্রয়োজন। কারণ হলুদ শিরা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত গাছের বীজ নিুমানের। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা অবশ্যই বর্জনীয়। ঢেঁড়স স্বপরাগায়িত সব্জি হলেও পর-পরাগায়নের মাত্র খুব বেশী। জাতের বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখতে বীজ ফসলের জন্য নির্ধারিত জমির অন্তত ১০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোন জাতের ঢেঁড়স জন্মাতে দেয়া যাবে না। তবে কীট-পতংগের আনাগোনা বেশী হলে এ দূরত্ব ২০০ মিটার করা প্রয়োজন। জাতের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন গাছ ব্যতীত অন্য সকল গাছ এবং রোগাক্রান্ত সব গাছই জমি থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। বীজ ফসলে সাদা মাছি পোকার আক্রমণ দেখা দিলে দমনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাকা ফল যখন সবুজ এবং হারিয়ে ফেলে এবং শক্ত হয় তখন তুলে এক সপ্তাহ শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সময়মত সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ করলে হেক্টর প্রতি ১.৫- ২.০ টন বীজ হতে পারে।
আলু
আলু সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি সবজি। এর উৎপাদন ও হয় বেশি। আলু চাষের সমস্যা ও সমাধান দেয়া হলো নিম্নে।
আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা রোগ
লক্ষণ
এ রোগের আক্রমনে
১। প্রথমে পাতা, ডগা ও কান্ডে ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ পড়ে। খুব দ্রুত এই দাগ গাঢ় খযেরী রং ধারণ করে। পাতার নিচে দাগের চারদিকে ধুসর সাদা বর্ণের জীবাণুর মাইসেলিয়া ও স্পোর দেখতে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত আক্রমনে পাতা ও কান্ড পুড়ে যাওয়ার ন্যায় দেখা যায় এবং খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন একে মড়ক লাগা বলে।
২। ভোরে দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাইডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে ও পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে।
৩। দীর্ঘ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ৯০% এর বেশি থাকলে এবং তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ১০ ঘন্টার মধ্যে এই রোগের আক্রমন ঘটতে পারে।
৪। ঘন কুয়াশা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা এবং অতিরিক্ত বাতাসের আর্দ্রতা এই রোগের জন্য অনূকুল।
প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। আক্রান্ত জমিতে সেচ যথাসম্ভব বন্ধ কওে দিতে হবে।
৩। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ম্যানকোজেব বা ফেনামেডন জাতীয় ছত্রাক নাশক ( যেমন; সিকিউর ৬০০ ডব্লিউ জি বা রিডোমিল গোল্ড) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ¯েপ্র করতে হবে।
আগাম ধ্বসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ
লক্ষণ
এ রোগের আক্রমনে
১। গাছের নিচের পাতায় ছোট ছোট বাদামি রংয়ের অল্প বসে যাওয়া কোনাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত অংশে সামান্য কালচে বংয়ের চক্রাকার দাগ পড়ে।
২। পাতার বোটা ও কান্ডের দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়।
৩। গাছ হলুদ হয়ে যাওয়া, পাতা ঝরে পড়া এবং অকালে গাছ মওে যাওয়া এ রোগর অন্যতম লক্ষণ।
প্রতিকার
১। সুষম সার ও সময়মতো সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
২। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ম্যানকোজেব বা প্রপ্রিনেব ও ইপ্রোভেলিকার্ব জাতীয় ছত্রাননাশক মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ¯েপ্র করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়।
আলুর পাতা মোড়ানো রোগ
লক্ষণ
ভাইরাসের কারণে এ রোগের আক্রমন হয়। আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায়। আক্রান্ত পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রংয়ের হয়। গাছ খাটো হয়ে যায় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাড়িয়ে থাকে।
প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। কীটনাশক ( এজোড্রিন, নোভাক্রন, মেনোড্রিন ইত্যাদি) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে অথবা ডাইমেক্রন বা ডেল্টামেথ্রিন (যেমন; ডেসিস) জাতীয় কীটনাশক ১ মিলি হাওে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৩। আক্রান্ত গাছ টিউবারসহ তুলে ফেলতে হবে।
মোজাইক রোগ
লক্ষণ
পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়। লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়। জাব পোকা ও অন্যান্য রস শোষণকারী পোকা পাতা ও গাছ থেকে রস চুষে গাছকে দূর্বল কওে দেয়। ভাইরাস ও আলুর জাতের উপর নির্ভর করে লক্ষণ ভিন্নতর হয়।
প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। টমেটো, তামাক এবং কতিপয় সোলানেসি গোত্রভুক্ত আগাছা এই ভাইরাসের বিকল্প পোষক। সুতরাং আশেপাশে এ ধরনের গাছ রাখা যাবে না। আক্রান্ত গাছ আলুসহ তুলে ফেলতে হবে।
৩। ভাইরাস বাহক পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড ( যেমন; এডমায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে অথবা ডাইমেক্রন ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
আলুর কাটুই পোকা
লক্ষণ
১। কাটুই পোকা বীজ আলুর ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে আলু গাছ গজাতে পারে না। অথবা গজালেও খাদ্যাভাবে মারা যায়।
২। রাতের বেলা কচি চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে।
প্রতিকার
ডেল্টামেথ্রিন (যেমন; ডেসিস) জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটারে ০.৫ মিলি হারে অথবা ক্লোরপাইরিফস (যেমন; ডারসবান) জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি হারে মিশিয়ে বিকেল বেলায় গাছের গোড়া ও মাটি ¯েপ্র করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পর ¯েপ্র করতে হবে।
গিমাকলমি
পাতা জাতীয় সবজি হিসেবে এটি একটি লাভজনক জাত। ভিটামিন‘এ’ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু এ সবজির বাজারে চাহিদা আছে। বারি গিমাকলমি-১ জাতটি চাষের জন্য ১৯৮৩ সনে অনুমোদন করা হয়।
এটি একটি পাতাজাতীয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। পাতার বোঁটা ও কাণ্ড সবুজ, নরম ও রসালো। কলমির ফুল সাদা। বীজের আবরণ শক্ত ও বর্ণ ধুসর। একটি ফলে চারটি বীজ থাকে। এ ফসলের হেক্টরপ্রতি ফলন ৪০-৪৫ টন।
উৎপাদন প্রযুক্তি
মাটি
সুবিধাযুক্ত সব ধরণের উর্বর মাটিতে গিমাকলমি চাষ হয়ে থাকে। তবে দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি এ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৬টি চাষ ও মই দেয়া প্রয়োজন এবং জমি গভীর করে চাষ করতে হবে।
বপনের সময়
বছরের যে কোন সময়ই এর চাষ করা যেতে পারে। চৈত্র মাস (মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল) থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত (মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট) বীজ বপন করা যেতে পারে।
সারের নাম পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ১৪০-১৬০ কেজি
টিএসপি ১০০-১২০ কেজি
এমপি ১০০-১২০ কেজি
গোবর / কম্পোস্ট ৮-১০ টন।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির শেষ চাষের সাথে সবটুকু টিএসপি, এমপি এবং গোবর বা কম্পোস্ট প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার ৩ কিস্তিতে যথাক্রমে ১ম, ২য়, ৩য় বার ফসল কাটার পর পর প্রয়োগ করতে হবে।
অন্তর্বতীকালীন পরিচর্যা
বর্ষকালে সাধারণত সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে এক নাগাড়ে বৃষ্টি না হলে ১০-১৫ দিন অন্তর পানি সেচ দেয়া আবশ্যক। এছাড়া জমি আগাছামুক্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন।
লাউ
লাউ সাধারণত শীতকালে বসতবাড়ির আশপাশে চাষ হয়। লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে এবং লাউ তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়।
লাউয়ের জাত
বারি লাউ-১
এ জাতটি বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে ১৯৯৬ সনে সর্বত্র চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। পাতা সবুজ ও নরম। পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল যথাক্রমে চারা রোপণের ৪০-৪৫ দিন এবং ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফুটে।
এর ফল হালকা সবুজ, লম্বা ৪০-৫০ সেমি.। প্রতি ফলের ওজন ১.৫-২.০ কেজি। প্রতি গাছ ১০-১২ টি ফল ধরে। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ করা হয়। এ জাতটি সারা বছরই চাষ করা যায়। জীবনকাল ১২০-১৪০ দিন। এর ফলন শীতকালে ৪২-৪৫ টন/ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালে ২০-২২ টন/ হেঃ।
উৎপাদন প্রযুক্তি
মাটি ও জলবায়ু
লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে প্রধানত দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। লাউ সাধারণত একটি লতানো উদ্ভিদ, ফলে বছরের অধিকাংশ সময় চারা লাগিয়ে এ ফসল উৎপাদন করা যায়।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন
লাউ চাষের জন্য পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করাই উত্তম। এতে বীজের খরচ কম পড়ে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে রোপণ করলে হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
বীজ বপনের সময়
শীতকালীন চাষের জন্য মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা যেতে পারে। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্রের ১ম সপ্তাহে বীজ বুনতে হবে।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ
আমাদের দেশে প্রধানত বসতবাড়ির আশপাশে যেমন গোয়াল ঘরের কিনারায় বা পুকুর পাড়ে ২-৩টি লাউ গাছ লাগানো হয়ে থাকে। বেশি পরিমাণ জমিতে লাউয়ের চাষ করতে হলে প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। লাউ চাষের জন্য ২ী২ মি. দূরত্বে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বোনা উচিত। রবি মৌসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায় চাষ করা যায়। তবে মাচায় ফলন বেশি হয়। এ ছাড়া পানিতে ভাসমান কচুরিপনার ¯তূপে মাটি দিয়ে বীজ বুনেও সেখানে লাউ জন্মানো যেতে পারে।
পরিচর্যা
নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ, মাটির চটা ভাঙা, বাউনি দেয়া ও অন্যান্য পরিচর্যা করা বাঞ্ছনীয়। মাচা শক্ত করে বাঁধতে হবে। দেশীয় সবজিতে খাদ্যের পুষ্টিমান (খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে)
শিম
শিম বাংলাদেশের অন্যতম শীতকালীন সবজি। শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং আমিষের উত্তম ঊৎস। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ আছে।
মাটিও জলবায়ু
দো-আঁশ, এটেল দো-আঁশ মাটিতে শিম চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ মাটিতেই Í উৎপাদন ভালো হয়। শিম ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো ফলন দিয়ে থাকে।
বপনের সময়
আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস (মধ্য-জুন থেকে মধ্য- সেপ্টেম্বর)।
বীজ বপন পদ্ধতি
বাড়ীর উঠানে ২ হাত চওড়া ও ৩-৪ হাত গভীর করে ২-৩টি মাদা তৈরি করতে হয়। মাদা প্রতি ৪-৫টি বীজ বুনতে হবে। মাঠে চাষের জন্য ৪ হাত চওড়া বেড তৈরি করে ৪-৬ হাত দূরত্বে একই ভাবে মাদায় বীজ বুনতে হবে। চারা গজালে মাদা প্রতি ১-২ টি সবল চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতেহবে। হেক্টরপ্রতি বীজের পরিমাণ হবে ৫-৭ কেজি।
সারের পরিমাণ
শিমের জমিতে মাদা প্রতি নিুবর্ণিত হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম মাদা প্রতি সার
গোবর ৯-১২ কেজি
খৈল ১৮০-২০০ গ্রাম
টিএসপি ৯০-১১০ গ্রাম
ছাই ১.৫-২.৫ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
চারা গজানো ২-৩ সপ্তাহ পর পর ২ কিস্তিতে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তর্বর্তী কালীন পরিচর্যা
বীজ বপনকালে বৃষ্টি থাকতে পারে। তাই গাছের গোড়ায় পানি যেন না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
টমেটো
টমোটো ভিটামিনসমৃদ্ধ একটি শীতকালীন সবজি। এতে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। জাতের প্রকারভেদে টমেটোতে সাধারণত ৩৮৫ আই,ইউ ভক্ষণযোগ্য বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার শিশু রাতকারা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ পুষ্টির দিক থেকে টমেটোর গুরুত্ব অনেক।
টমেটোর জাত
বারি টমেটো-১ (মানিক)
বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৮৫ সনে স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। গাছের উচ্চতা ১০০-১১০ সে.মি. এবং ফল কিছুটা লম্বাটে। ফলের ওজন ৮৫-৯৫ গ্রাম। প্রতিটি গাছে ২৫-৩০ টি ফল ধরে ও গাছপ্রতি ফলন হয় ২.৫ -৩০ কেজি।
চারা লাগানোর ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং গাছ থেকে এক মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। এ জাতের টমোটো ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। এ জাতের জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ৮৫-৯০ মে.টন।
বারি টমেটো-২ (রতন)
জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৭৫-৮৫ সে.মি। ফল গোলাকার এবং ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম। প্রতি গাছে ৩০-৩৫টি ফল ধরে। ফলন প্রতিগাছে ২.০-২.৫ কেজি।
চারা গালানোর ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ১ম বার এবং প্রায় ২০ দিন পর্যন্ত ২-৩ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। এ জাত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখে। এর জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন। ফলন হেক্টর প্রতি ৮০-৮৫ টন। এ জাতটি সব এলাকায় চাষ করা যায়।
বারি টমেটো-১০ (অনুপমা)
এটি একটি উচ্চফলনশীল সংকর জাত। গ্রীষ্ম মৌসুমে চাষের উপযোগী করে এ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে এ জাতের অনুমোদন করা হয়। এর ফল ডিম্বাকৃতির হয়। প্রতিটি গাছে ৭৫-৮০ টি ফল ধরে। একটি ফলের ওজন ২৫-৩০ গ্রাম। গাছপ্রতি ফলন ২-২.৫ কেজি। চারা লাগানোর ৬০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং এক মাস হলে ফল সংগ্রহ করা যায়। এ জাত উচ্চতাপমাত্রা সহনশীল এবং ব্যাকটেরিয়জনিত রোগ প্রতিরোধী। জীবনকাল ৯০-১০০দিন। এর ফলন হেক্টরপ্রতি ৪৫-৫৫ টন।
টমেটোর উৎপাদন প্রযুক্তি
মাটি ও জমি তৈরি
দো-আঁশ ধরনের মাটি টমেটো চাষের জন্য উপযোগী। জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। গ্রীষ্মকালে চাষের জন্য ২০-২৫ সেমি. উঁচু এবং ২৩০ সেমি. চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। সেচ দেয়ার সুবিধার্থে ২টি বেডের মাঝে ৩০ সেমি. নালা রাখতে হয়।
চারা রোপণ ও সময়
প্রতি বেডে ২টি করে ৬০ ী ৪০ সেমি. দূরত্বে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।
মধ্য কার্তিক থেকে মাঘের ১ম সপ্তাহ (নভেম্বর থেকে মধ্য -জানুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়।
সারের পরিমান
টমেটো চাষ করার জন্য নিুরূপ সার হেক্টর প্রতি প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম পরিমাণ/ হেক্টর
ইউরিয়া ৫০০-৬০০ কেজি
টিএসপি ৪০০-৫০০ কেজি
এমপি ২০০-৩০০ কেজি
গোবর ৮-১২ টন
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
অর্ধেক গোবর ও টিএসপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। অবশিষ্ট গোবর চারা লাগানোর আগে গর্তে প্রয়োগ করতে হয়।
ইউরিয়া ও এমপি ২ কিস্তিতে পার্শ্বকুশি ছাঁটাই এর পর চারা লাগানোর ৩য় ও ৫ম সপ্তাহে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হয়।
পরিচর্যা
প্রথম ও ২য় কিস্তির সার প্রয়োগের আগে পার্শ্ব কুশিসহ মরা পাতা ছাঁটাই করে দিতে হয়। এতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলের আকার বড় হয়। এতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলের আকার বড় হয়। হরমোন প্রয়োগগের সুবিধার্থে এবং প্রবল বাতাসে গাছ যাতে নুয়ে না পড়ে সেজন্য টমেটো গাছে “অ” আকৃতির ঠেকনা দেওয়ার জন্য বাঁশের তৈরি কাঠি, ধৈঞ্চার কাঠি, বাঁশের কঞ্চি, ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
গ্রীষ্মকালীন টম্যাটো চাষ
টম্যাটো একটি পুষ্টিকর সবজি। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে টম্যাটো চাষ করা হয়। অথচ প্রায় একই রকম আবহাওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ তাইওয়ান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডে সারাবছর টম্যাটো ফলানো হচ্ছে। অধুনা আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাও গ্রীষ্ম ও বর্ষায় চাষ করা যায়, এমন কয়েকটি টম্যাটোর জাত উদ্ভাবন করেছেন। এসব জাত চাষ করে কৃষক ভাইরা দেশবাসীকে গ্রীষ্ম-বর্ষায়ও সুস্বাদু টম্যাটো উপহার দিতে পারেন এবং নিজেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
জাত
গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে চাষোপযোগী কয়েকটি অনুমোদিত জাত রয়েছে, তা হচ্ছে- বারি টম্যাটো-৪, রাবি টম্যাটো-৫, বারি টম্যাটো-৬ (চৈতি), বারি টম্যাটো-১০ (অনুপমা-হাইব্রিড জাত), বারি টম্যাটো-১১ (ঝুমকা), বারি টম্যাটো-১৩ (শ্রাবণী), বিনা টম্যাটো ২ ও বিনা টম্যাটো-৩।
মাটি ও জলবায়ু
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই টম্যাটো চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি টম্যাটো আবাদের জন্য বেশি উপযোগী। ফল ধারণের জন্য দিনে ২০-২৫০ সেলসিয়াস এবং রাতে ১০-১৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রার দরকার হয়। তবে অপেক্ষাকৃত অধিক তাপমাত্রায়ও এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না। গ্রীষ্মকালেও আশানুরূপ ফলন পেতে কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
চারা উৎপাদন
মাটির সাথে বালি ও গোবর সমপরিমাণে ভালোভাবে মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে বীজতলা তৈরি করা দরকার। বীজতলা ৩মিটার (১০ফুট) লম্বা, ১ মিটার (সোয়া ৩ ফুট) চওড়া এবং ১৫ সে. মিটার (৬ ইঞ্চি) উঁচু হলে ভালো হয়। চারা উৎপাদনের জন্য বিঘা প্রতি ২০-২৫ গ্রাম সুস্থ বীজ ঘন করে বীজতলায় বপন করতে হয়। সাধারণত ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে রোপণের উপযোগী হয়।
জমি তৈরী
টম্যাটোর ভালো ফলন পেতে হলে ভালোভাবে জমি তৈরি করা প্রয়োজন। এজন্য কমপক্ষে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। ২০-২৫ সেন্টিমিটার (৮-১০ ইঞ্চি) উঁচু এবং ২৩০ সেন্টিমিটার (৭.৫ ফুট) চওড়া ভিটি বা বেড তৈরি করা যেতে পারে। সেচের সুবিধার জন্য দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) চওড়া নালা রাখা দরকার।
সারের পরিমাণ ব্যবহার ও নিয়ম (শতকে)
সারের নাম মোট পরিমাণ শেষ চাষের সময় দেয় চারা লাগানোর সময় গর্তে দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে
১ম কিস্তি (সারিতে) চারা লাগানোর ৩ সপ্তাহ পর ২য় কিস্তি (সারিতে) চারা লাগানোর ৩ সপ্তাহ পর
গোবর/ কম্পোস্ট ৪০ কেজি অর্ধেক অর্ধেক – –
ইউরিয়া ২.২ কেজি – ৮০০ গ্রাম ৭০০ গ্রাম ৭০০ গ্রাম
টিএসপি ১.৮ কেজি – সব – –
এমওপি ১ কেজি – সব – –
চারা রোপণ
ফাল্গুণের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। প্রতিটি বেডে দু’সারি করে ২৫-৩০ দিনের চারা লাগাতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার বা ১৬ ইঞ্চি রাখা দরকার।
পলিথিন ছাউনি ব্যবহার
এ মৌসুমে বর্ষা বাদলের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টম্যাটো গাছে পলিথিন ছুউনি ব্যবহার করা দরকার। ২৩০ সেন্টিমিটার (৭.৫ ফুট) চওড়া ও প্রয়োজনমত দৈর্ঘ্যের ২টি বেডে একটি করে ছাউনির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নৌকার ছইয়ের আকৃতি করতে হয়। ছাউনির জন্য বাঁশ স্বচ্ছ পলিথিন, নাইলনের দড়ি ও পাটের সুতলির দরকার। পলিথিন যাতে বাতাসে উড়ে না যায় সে জন্য ছাউনির ওপর দিযে উভয় পাশ থেকে আড়াআড়ি ভাবে দড়ি প্যাঁচায়ে রাখা দরকার। পাশাপাশি দুই ছাউনির মাঝে ৭৫ সেমি. চওড়া নালা রাখা দরকার যাতে পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।
হরমোন প্রয়োগ
গ্রীষ্মকালীন টম্যাটো গাছে প্রচুর ফুল ধরে কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিবৃষ্টির কারণে পরাগায়নে বিঘিœত হয়। ফলে ফুল ঝড়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পেতে হলে ‘চম্যাটোটন’ নামক কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করা দরকার। ১ লিটার পানির সাথে ২৫ মিলিলিটার বা চা চামচের ৫ চামচ তরল হরমোন মিশিয়ে হাত স্প্রেয়ারের সাহায্যে ফুটন্ত ফুলে ৮-১০ দিন পর পর দুবার স্প্রে করতে হয়। হরমোন সকাল ৯-১০ টার মধ্যে স্প্রে করলে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
অন্তর্বর্তী পরিচর্যা
বাতাসে গাছ নুয়ে পড়া থেকে রক্ষা করা এবং হরমোন প্রযোগের সুবিধার্থে টম্যাটো গাছে ঠেকনা দেয়া দরকার। চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে ১ম ও ২য় কিস্তি সার প্রয়োগের পার্শ্বকুশিসহ মরা পাতা ছাঁটাই করে দিতে হয়। এতে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং ফুলের আকার বড় হয়। টম্যাটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়াও মাটির ভেতর আলো বাতাস চলাচলের সুবিধার্থে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দেয়া দরকার।
কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই দমন
টম্যাটো গাছে সাদা মাছি পোকার আক্রমণ হতে দেখা যায়। এ পোকা খুবই ছোট এবং পাতার নিচের দিকে থাকে বলে সহজে চোখে পড়ে না। এরা পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এদের দমনের জন্য ফেনিট্রিথিয়ন জাতীয় তরল কীটনাশক ১ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে ¯েপ্র করতে হবে। তাছাড়া গাছে ফুল আসার আগে একবার এবং পরে আর একবার রিডোমিল কিংবা রোভরাল ১লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ¯েপ্র করলে ড্যাম্পিং অফ ও আশুধসা রোগ দমন হয়।
ফল সংগ্রহ ও ফলন
চারা লাগানোর ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফল পাঁকতে শুরু করে। প্রতি গাছ থেকে ৫-৬ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। হরমোন প্রয়োগের ফলে গ্রীষ্মকালীন টম্যাটো বীজবিহীন হয়ে থাকে। তবে টম্যাটোর রঙ স্বাদ ও গন্ধ শীতকালীন টম্যাটোর মতই হয়ে থাকে। জাত ভেদে প্রতি শতকে ফলন ৮০-১০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টমেটো চাষে সমস্যা ও সমাধান
নেতিয়ে পড়া বা ড্যাম্পিং অফ
লক্ষণ
১। বীজতলাতে সদ্য গজানো চারা অথবা মূল জমিতে লাগানো চারা নেতিয়ে বা ঢলে পড়ে।
২। গাছ গোড়া থেকে শুকিয়ে মারা যায়।
প্রতিকার
১। সম্ভব হলে নেতিয়ে পড়া চারা জমি থেকে তুলে ফেলতে হবে।
২। কপার অক্সিক্লোরাইড ( যেমন; কুপ্রাভিট) জাতীয় ছত্রাকনাশক ১০ লিটার পানিতে ৪০ গ্রাম হারে মিশিয়ে চারা ও মাটি ভাল ভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
টমেটোর মড়ক বা নাবী ধ্বসা (লেইট ব্লঅইট)
লক্ষণ
এ রোগের আক্রমনে
১। প্রথমে পাতা, ডগা ও কান্ডে ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ পড়ে। খুব দ্রুত এই দাগ গাঢ় খযেরী রং ধারণ করে। পাতার নিচে দাগের চারদিকে ধুসর সাদা বর্ণের জীবাণুর মাইসেলিয়া ও স্পোর দেখতে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত আক্রমনে পাতা ও কান্ড পুড়ে যাওয়ার ন্যায় দেখা যায় এবং খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন একে মড়ক লাগা বলে।
২। ভোরে দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাইডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে ও পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে।
৩। দীর্ঘ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ৯০% এর বেশি থাকলে এবং তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ১০ ঘন্টার মধ্যে এই রোগের আক্রমন ঘটতে পারে।
৪। ঘন কুয়াশা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা এবং অতিরিক্ত বাতাসের আর্দ্রতা এই রোগের জন্য অনূকুল।
প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। আক্রান্ত জমিতে সেচ যথাসম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে।
৩। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ১০ লিটার পানিতে ৪০ গ্রাম হারে ৭-১০ দিন পর পর ইপ্রোভেলিকার্ব ও প্রপিনেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন; মেলোডি ডু একবার ও পরেরবার এন্ট্রাকল ¯েপ্র করতে হবে
আগাম ধ্বসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ
লক্ষণ
এ রোগের আক্রমনে
১। গাছের নিচের পাতায় ছোট ছোট বাদামি রংয়ের অল্প বসে যাওয়া কোনাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত অংশে সামান্য কালচে বংয়ের চক্রাকার দাগ পড়ে।
২। পাতার বোটা ও কান্ডের দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়।
৩। গাছ হলুদ হয়ে যাওয়া, পাতা ঝরে পড়া এবং অকালে গাছ মওে যাওয়া এ রোগর অন্যতম লক্ষণ।
প্রতিকার
১। সুষম সার ও সময়মতো সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
২। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ম্যানকোজেব বা প্রপ্রিনেব ও ইপ্রোভেলিকার্ব জাতীয় ছত্রাননাশক (মেলোডি ডু, এন্ট্রাকল) মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ¯েপ্র করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়।
ভাইরাস রোগ
লক্ষণ
পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়। লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়। জাব পোকা ও অন্যান্য রস শোষণকারী পোকা পাতা ও গাছ থেকে রস চুষে গাছকে দূর্বল করে দেয়।
প্রতিকার
১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। ভাইরাস আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩। ভাইরাস বাহক পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (যেমন; এডমায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে অথবা ডাইমেক্রন ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
কাটুই পোকা
লক্ষণ
১। রাতের বেলা কচি চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে।
প্রতিকার
ডেল্টামেথ্রিন (যেমন; ডেসিস) জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটারে ০.৫ মিলি হারে অথবা ক্লোরপাইরিফস (যেমন; ডারসবান) জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি হারে মিশিয়ে বিকেল বেলায় গাছের গোড়া ও মাটি ¯েপ্র করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
টমেটোর ফল ছিদ্রকারী পোকা
লক্ষণ
১। ফুল থেকে ফল রুপান্তরিত হওয়ার সময় আক্রান্ত হলে কচি ফল পচে ঝরে যায়।
২। ফল ছিদ্র করে ভেতরের নরম অংশ খায়।
৩। বড় ফল আক্রান্ত হলেও ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
প্রতিকার
ডেল্টামেথ্রিন ( যেমন; ডেসিস) ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা ক্লোরপাইরিফস ( যেমন; ডারসবান) ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলি হারে
মিশিয়ে সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার স্প্রে করতে হবে। ডেসিস ও সেভিন পাউডার একত্রে নির্ধারিত মাত্রায় স্প্রে করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
সূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস