ধান চাষের সমস্যা ও প্রতিকার

Problems and remedies of paddy cultivation

ড. মো. বায়েজিদ মোড়ল: ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল এবং প্রধান খাদ্য শষ্য। দেশের প্রায় ৭৫% জমিতে ধানের চাষ হয়। ধান চাষের যেমন রয়েছে সমস্যা, তেমনি সমস্যার রয়েছে প্রতিকার। এখানে ধান চাষের বেশ কিছু সমস্যা ও তার প্রতিকার তুলে ধরা হলো।

পোকামাকড়

পাতামাছি (হাইড্রেলিয়া ফিলিপিনা)

পাতামাছির কাঁড়া ধানগাছের মাঝখানের পাতা গাছ থেকে পুরোপুরি বের হওয়ার আগেই পাতার পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে, ফলে ঐ অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মাঝখানের পাতা যত বাড়াতে থাকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ততই স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। পাতামাছির এই ধরনের ক্ষতির ফলে গাছের কুশী কম হয় এবং ধান পাকতে পাড়তি সময় লাগতে পারে। চারা থেকে শুরু করে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত প্রায় সব সময়ই দাঁড়ানো পানি থাকে সে সব ক্ষেতেই এই পোকা বেশী আক্রমণ করে।

পূর্ণ বয়স্ক পাতামাছি ২ মিলিমিটার লম্বা হয় । এরা পাতার ওপরে একটা করে ডিম পাড়ে । ডিম ফোটার পর কীড়াগুলো কাণ্ডের মাঝখানে ঢুকে কাণ্ডের ভেতরে অবস্থিত কচি মাঝ পাতার পাশ থেকে খেতে শুরু করে। কীড়াগুলো কাণ্ডের হয়ে থাকে। এরা গাছের বাইরের পাতার খোলে এসে মুত্তলীতে পরিণত হয়। পাতামাছির জীবনচক্র ৪ সপ্তাহে পূর্ণ হয়।

প্রতিকার

*             পাতামাছি দমনের জন্য এই বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

থ্রিপ্স

বাংলাদেশের ছয়টি প্রজাতির থ্রিপ্স পোকা ধানগাছ আক্রমণ করে। পূর্ণ বয়স্ক থ্রিপ্স পোকা এবং তাদের বাচ্চারা পাতার ওপরে ক্ষত সৃষ্টি করে পাতার রস শুষে খায়। ফলে পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে যায়। পাতায় খাওয়ার জায়গাটা হলদে থেকে লাল দেখা যায়। থ্রিপ্স পোকা ধানের চারা অবস্থায়, কুশী ছাড়া অবস্থায় এবং শীষ আসার সময়ও আক্রমণ করতে পারে। শীষ আসার সময় আক্রমণ করলে ধান চিট হয়ে যায়। যে সমস্ত জমিতে সব সময় দাঁড়ানো পানি থাকে না, সাধারণতঃ সে সব ক্ষেতে থ্রিপ্স- এর আক্রমণ বেশী হয়। পূর্ণ বয়স্ক থ্রিপ্স পোকা খুবই ছোট, ১-২ মিলিমিটার লম্বা এবং এদের শুড়ে ৫- ৮ টা ভাগ আছে। এরা পাখা বিশিষ্ট বা পাখা বিহীন হতে পারে। পাখা বিশিষ্ট পোকার পাখাগুলো সরু, পিঠের ওপর লম্বালম্বিভাবে বিছানো থাকে এবং পাখার পাশে কাঁটা আছে । ডিম পাড়ার জন্য স্ত্রী পোকার পেছনে করাতের মত ধারালো একটা অংগ আছে যা দিয়ে এরা পাতার মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে দিতে পারে। ডিমগুলো সব একই সাইজের, খুবই ছোট, এক মিলিমিটারের  চার ভাগের এক ভাগ লম্বা এবং দশ ভাগের এক ভাগ চওড়া। প্রথম অবস্থায় ডিমগুলোর রং স্বচ্ছ থাকে এবং ডিম ফোটার আগে  আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যায়। ডিম থেকে সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ নিশ্চল থাকে, পরে মাঝখানের কচি পাতা, পাতার ভোল এবং নতুন ফোটা ধানের শীষে চলে গিয়ে খাওয়া শুরু করে এবং পূর্ণ বয়স্ক পোকায় পরিণত হওয়ার পরও তাদের জীবনকাল এখানেই কাটায়।

প্রতিকার

*             নাইট্রোজেন জাতীয় সার, যেমন ইউরিয়া কিছু পরিমান উপরি প্রয়োগ করে এই পোকার ক্ষতি কিছুটা রোধ করা যায়।

*             থ্রিপ্স পোকা দমনের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

মাজরা পোকা

হলুদ মাজরা (সিরপোফেগা ইনসারটুলাস), কালো মাথা মাজরা (কাইলো পলিক্রাইসাস) এবং গোলাপী মাজরা (সিসামিয়া ইনফারেন্স)। বাংলাদেশে ধান ফসলের বিশেষ ক্ষতিকর। মাজরা পোকার কীড়াগুলো কাণ্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ক্রমে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। ফলে ডিগ পাতা মারা যায়। একে মরা ডিগ বা ‘ডেডহার্ট’ বলে। গাছে শীষ আসার আগে পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরা ডিগ দেখতে পাওয়া যায়। থোড়া আসার আগে মরা ডিগ দেখা দিলে বাড়তি কিছু কুশী উৎপাদন করে গাছ আংশিকভাবে ক্ষতি পূরণ করতে পারে।

ক্রিসেক রোগের অথবা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনার সাথে মাঝে মাঝে মাজরা পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত মরা ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা ডিগ টান দিলেই সহজে উঠে আসে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কাণ্ডে মাজরা পোকা খাওয়ার দরুণ ছিদ্র এবং খাওয়ার জায়গায় পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়। শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায় । একে সাদা শীষ, মরা শীষ বা হোয়াইট হেড বলে। খরায় বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড- এর মত দেখা যেতে পারে, কীড়া যদি পাতার খোলের  ভেতরে খায় এবং কাণ্ডের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধানগাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।

মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কাণ্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কণ্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে।

গাছের মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে । হলুদ মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে ডিম পাড়ে এবং গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।

মাজরা পোকার কীড়াগুলো ডিম থেকে ফুটে বেরুবার পর আস্তে আস্তে কাণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। কীড়ার প্রথমাবস্থায় এক একটি ধানের গুছির মধ্যে অনেকগুলো করে গোলাপী ও কালোমাথা মাজরার কীড়া জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো কাণ্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায় পাওয়া  যেতে পারে।

আলোর চার পাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মথগুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে।

প্রতিকার

*             নিয়মিত ভাবে ক্ষেত পর্য্যবেক্ষণের সময় মাজরা পোকার মথ ও ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেললে মাজরা পোকার সংখ্যা ক্ষতি অনেক কমে যায়।

*             মাজরা পোকার পূর্ণ বয়স্ক মথের প্রার্দুভাব যখন বেড়ে যায় তখন ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দুরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে মাজরা পোকার মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়।

*             যে সব অঞ্চলে হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশী, সে সব এলাকায় সম্ভব হলে চান্দিনার মত হলুদ মাজরা পোকা প্রতিরোধ সম্পন্ন জাতের ধান চাষ করে আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।

*             এ ছাড়া মাজরা পোকা দমনের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

গলমাছি বা নলিমাছি (অরসিওলিয়া অরাইজি)

এ পোকার আক্রমনের ফলে ধানগাছের মাঝখানের পাতাটা পেঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এ জন্য এ পোকার ক্ষতির নমুনাকে পেঁয়াজ পাতা গল বা নল বলা হয়ে থাকে । এ গলের বা নলের প্রথমাবস্থায় রং হালকা উজ্জ্বল সাদা বলে একে সিলভার শুট বা রুপালী পাতা বলা হয়। পেঁয়াজ পাতা গল বড় বা ছোট হতে পারে। ছোট হলে সনাক্ত করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। গল হলে সে গাছের আর শীষ বের হয় না। তবে গাছে কাইচথোড় এসে গেলে গলমাছি আর গল সৃষ্টি করতে পারে না।

গাছের মাঝখানের যে পাতাটা গল বা পেঁয়াজ পাতার মত হয়ে যায় তারই গোড়ায় বসে গলমাছির কীড়াগুলো খায়। কীড়াগুলো এই গলের মধ্যেই পুত্তলীতে পরিনত হয় এবং এই গলের একেবারে ওপরে ছিদ্র করে পুত্তলী থেকে পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি বেরিয়ে যায়। শুধু পুত্তলীর কোষটা সেখানে লেগে থাকে।

গলমাছি

পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি দেখতে একটা মশার মত। স্ত্রী গলমাছির পেটটা উজ্জ্বল লাল রঙের হয়। এরা রাতে আলোতে আসে, কিন্তু দিনের বেলায় বের হয় না। স্ত্রী গলমাছি সাধারনতঃ পাতার নীচের পাশে ডিম পাড়ে, তবে মাঝে মধ্যে পাতার খোলের ওপরও ডিম পাড়ে।

গলমাছির বাৎসরিক বংশক্রম মৌসুমী আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শুষ্ক মৌসুমে গলমাছি নির্জীব থাকে এবং ঝরা ধান বা ঘাসের মধ্যে পুত্তলীপর্ব অবস্থায় বেঁচে থাকে। বর্ষা মৌসুমে শুরু হলেই পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ঘাস জাতীয় বিকল্প গাছের খাদ্য খেয়ে এক বা একাধিক বংশ অতিক্রম করে।

ঘাস জাতীয় গাছে গলমাছির এক একটি জীবনচক্র সম্পূর্ণ হতে ৯-১৪ দিন এবং ধানের ওপর ৯-২৪ দিন সময় লাগে। ধানের চারা অবস্থা থেকে যদি আক্রমণ শুরু হয়, তাহলে কাইচ থোড় অবস্থা আসা পর্যন্ত সময়ে এ পোকা কয়েকবার জীবনচক্র সম্পূর্ন করতে পারে।

যে সমস্ত অঞ্চলে শুধু শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান, সে সব অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের আগাম ধান ক্ষতি এড়িয়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে রোপন করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতাভুক্ত ধানক্ষেত আক্রান্ত হতে পারে।

প্রতিকার

*             এ পোকা দমনের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

বাদামী গাছফড়িং (নিলাপর্ব্বতা লুজেন্স)

যে সমস্ত ধানের জাতে বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই সে সব জাতের ধানে এরা খুব তাড়াতাড়ি বংশ বৃদ্ধি করে, ফলে এ পোকার সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে আক্রান্ত ক্ষেতে বাজ পড়ার মত হপারবার্ণ- এর সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত গাছগুলো প্রথমে হলদে এবং পরে শুকিয়ে মারা যায়। বাদামী গাছফড়িং  ও উইল্টেডস্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। লম্বা পাখাবিশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক বাদামী ফড়িংগুলো প্রথমে ধানক্ষেত আক্রমণ করে। এরা পাতার খোলে এবং পাতার মধ্য শিরায় ডিম পাড়ে। ডিমগুলোর ওপর পাতলা চওড়া একটা আবরণ থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা (নিম্ফ) বেরুতে ৭-৯ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৫ বার খোলস বদলায় এবং পূর্ণবয়স্ক ফড়িং এ পরিণত হতে ১৩-১৫ দিন সময় নেয়। প্রথম পর্যায়ের (ইন্সটার)বাচ্চাগুলোর রং সাদা এবং পরের পর্যায়ের বাচ্চাগুলো বাদামী। বাচ্চা থেকে পূর্ণবয়স্ক বাদামী গাছফড়িং ছোট পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাই বেশী থাকে এবং স্ত্রী পোকাগুলো গাছের খুব গোড়ার দিকে থাকে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লম্বা পাখা বিশিষ্ট ফড়িং-এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে, এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়ে যেতে পারে।

প্রতিকার

কীটনাশক ছাড়া নিুলিখিত উপায়ে বাদামী গাছফড়িং এর সংখ্যা ও আক্রমণ প্রতিহত করা যায়ঃ

*             যে সব এলাকায় সব সময় বাদামী গাছফড়িং এর উপদ্রব হয় সে সব এলাকায় তাড়াতাড়ি পাকে (যেমন চান্দিনা) এমন জাতের ধান চাষ।

*             ধানের চারা ৩০-৪০ সেমি দূরে দূরে লাগানো।

সাদা-পিঠ গাছফড়িং (সোগাটেলা ফুরসিফেরা)

অধিকাংশ সময় বাদামী গাছফড়িং এর সাথে এদের দেখতে পাওয়া যায় এবং সেজন্যে এ দু’জাতের পোকাকে সনাক্ত করতে ভুল হয়। সাদা-পিঠ গাছফড়িং-এর বাচ্চাগুলো (নিম্বফ্) সাদা থেকে বাদামী কালো ও সাদা মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক ফড়িংগুলো ৫ মিলিমিটার লম্বা এবং তাদের পিঠের ওপর একটা সাদা লম্বা দাগ আছে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ফড়িংগুলোই শুধু ছোট পাখা বিশিষ্ট। সাদা-পিঠ গাছফড়িং কোন ভাইরাস রোগ ছাড়ায় না এবং গাছের রস শুষে খেয়ে কদাচিৎ হপারবার্ণ সৃষ্টি করে। কারণ ধানগাছে শীষ আসার সময় এ পোকার সংখ্যা সাধারণতঃ কমে যায়। পোকার সংখ্যা যদি খুব বেশী বেড়ে যায় তাহলে বাইরের পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মত হতে পারে।

প্রতিকার

*             এ পোকা দমনের জন্য এ বইয়ের শেষে তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

সবুজ পাতাফড়িং ( নেফোটেটিকস্ প্রজাতি)

সবুজ পাতাফড়িং ধান উৎপাদনকারী প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। এরা বেটে ধান, ক্ষণস্থায়ী হলদে রোগ, টুংরো এবং হলুদ বেটে নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। পূর্ণবয়স্ক ফড়িংগুলো ৩-৫ মিলিমিটার লম্বা এবং গায়ে উজ্জ্বল সবুজ রঙের সাথে বিভিন্ন কাল দাগ থাকে। এরা পাতার মধ্য শিরায় বা পাতার খোলে ডিম পাড়ে। এদের বাচ্চাগুলো পাঁচবার খোলস বদলায় এবং এদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের দাগ আছে।

আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং (রেসিলিয়া ডরসালিস্)

এরা বেটে গল, টুংরো এবং কমলা পাতা নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায় এবং পাতার রস শুষে খায়। পূর্ণবয়স্ক ফড়িং- এর পাখায় আঁকাবাঁকা দাগ আছে। বাচ্চগুলো হলদে ধূসর রঙের।

প্রতিকার

*             ধানক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদে সবুজ পাতাফড়িং এবং আঁকাবাঁকা পাতাফড়িং আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেকাংশ কমিয়ে ফেলা যায়।

*             ঔষধ ব্যবহার প্রয়োজন হলে এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখুন।

পাতামোড়ানো পোকা (ন্যাফালোক্রোসিস মেডিনালিস)

এরা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পাতার সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশী ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। ক্ষতিগ্রস্থ পাতার কিনারা দিয়ে বিশেষ করে পাতার লালচে রোখারোগ শুরু হতে পারে।

পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নরের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়।

প্রতিকার

*             এ পোকা দমনের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

চুংগীপোকা (নিম্ফিউলা ডিপাংটালিস)

ধানগাছের কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা আসার আগে কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ লম্বালম্বিভাবে এমন করে কুরে কুরে খায় যে শুধু মাত্র উপরের পর্দাটা বাকী থাকে। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছের পাতা সাদা দেখা যায়। চারা অবস্থায় এ পোকা বেশী ক্ষতি করে।

পূর্ণ বয়স্ক চুংগীপোকা ৬ মিলিমিটার লম্বা এবং ছড়ানো অবস্থায় পাখা ১৫ মিমি চওড়া হয়। চুংগীপোকা রাতের বেলায় তৎপর এবং আলোতে আকর্ষিত হয়। গাছের নীচের দিকের পাতার পিছন পিঠে এরা ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো বড় চারাগাছ এবং নূতন রোয়া ক্ষেতে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা পাতার ওপরের দিকটা কেটে চুংগী তৈরী করে এবং এর মধ্যে থাকে। কাটা পাতা দিয়ে তৈরী করে চুংগীগুলো বাতাসে বা পানিতে ভেসে ক্ষেতের এক পাশে জমা হয় এবং দেখলে মনে হয় যেন কাঁচি দিয়ে পাতাগুলো কুচি করে কেউ কেউ কেটে ফেলেছে। চুংগীপোকা প্রায় ৩৫ দিনে একটা জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে।

প্রতিকার

*             চুংগীপোকার কীড়া পানি ছাড়া শুকনো জমিতে বাঁচতে পারে না। তাই আক্রান্ত ক্ষেতের পানি সরিয়ে দিয়ে সম্ভব হলে কয়েকদিন জমি শুকনো রাখতে পারলে এ পোকার সংখ্যা কমানো এবং ক্ষতি রোধ করা যায়।

*             ঔষধ ব্যবহার করতে হলে এ বইয়ের শেষে তালিকা দেখে নিন।

গান্ধীপোকা ( লেপটোকোরাইজা ওরাটোরিয়াস একিউটা) 

গান্ধীপোকা ধানের দানা আক্রমণ করে। পূর্ণ বয়স্ক এবং বাচ্চা পোকা (নিম্ফ্) উভয়েই ধানের ক্ষতি করে। ধানের দানায় যখন দুধ সৃষ্টি হয় তখন ক্ষতি করলে ধান চিটা হয়ে যায়। এরপরে আক্রমণ করলে ধানের মান খারাপ হয়ে যায় এবং চাল ভেঙ্গে যায়।

পূর্ণবয়স্ক গান্ধীপোকা ধূসর রঙের এবং কিছুটা সরু। পাগুলে ও শূঁড়দুটো লম্বা। এরা ধানের পাতা ও শীষের ওপর সারি করে ডিম পাড়ে। সবুজ রঙের বাচ্চা এবং পূর্ণ বয়স্ক গান্ধীপোকার গা থেকে বিশৗ গন্ধ বের হয়।

প্রতিকার

*             এ পোকার সংখ্যা যখন খুব বেড়ে যায় তখন ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।

*             ঔষধ ব্যবহার করতে হলে এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে নিন।

শীষকাটা লেদাপোকা (মাইথিমনা সেপারেটা)

এ ধরনের পোকার কয়েকটি প্রজাতি আছে এবং এদের স্বভাব অনুযায়ী এরা এক সংগে বহু সংখ্যায় থাকে বলে ইংরেজীতে এদের আরমি ওয়ার্ম বা সৈনিক পোকা বলে। এরা এক ক্ষেত খেয়ে আর এক ক্ষেত আক্রমণ করে। লেদা পোকা বিভিন্ন জাতের খাস খায়। শুধু কীড়াগুলো ক্ষতি করতে পারে। এরা পাতার পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে এবং এমনভাবে খায় যে পাতার মধ্য শিরাগুলো এবং কাণ্ডটা শুধু বাকী থাকে। এ পোকা ধানের শীষের গোড়া থেকে কেটে দেয় এবং এজন্যে এর নাম শীষকাটা লেদা পোকা।

প্রতিকার

*             ধান কাটার পর এ পোকার কীড়া ও পুত্তলী ক্ষেতের নাড়া বা মাটির ফাটলের মধ্যে থাকে। তাই ধান কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে দিয়ে বা ঐ ক্ষেত চাষ করে ফেললে পুত্তলী ও কীড়া মারা যায় এবং পরবর্তী মৌসুমে এ পোকার সংখ্যা সমগ্রভাবে কমানো যায়।

*             এছাড়া আক্রান্ত ক্ষেতে একটু বেশী করে সেচ দিয়ে এবং পাখির খাওয়ার সুবিধার জন্য ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ডালপালা পুতে দিয়ে এ পোকার সংখ্যা কমানো যায়।

*             প্রয়োজন হলে এ বইয়ের শেষে দেয়া তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করুন।

লেদাপোকা (স্পোডপটেরা লিটুরা)

এরা কেটে কেটে খায় বলে ইংরেজীতে এদের কাটওয়ার্ম বলে। এই প্রজাতির পোকার সাধারণতঃ শুকনো ক্ষেতের জন্য বেশী ক্ষতিকর। কারণ এদের জীবনচক্র শেষ করার জন্য শুকনো জমির দরকার হয়। পার্শবর্তী ঘাসের জমি থেকে লেদাপোকার কীড়া নীচু, ভিজা জমির ধানক্ষেত আক্রমণ করে। প্রথমাবস্থায় কীড়াগুলো শুধু পাতাই খায়, কিন্তু বয়স্ক কীড়া সম্পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলতে পারে। এরা চারা গাছের গোড়াও কাটে।

প্রতিকার

*             ধান কাটার পর ক্ষেত্রের নাড়া পুড়িয়ে দিলে বা জমি চাষ করে ফেল্লে এ পোকার সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।

*             আক্রান্ত ক্ষেত সেচ দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে এবং পাখীর খাওয়ার জন্য ক্ষেতে ডালপালা পুতে দিয়েও এদের সংখ্যা কমানো যায়।

*             লেদাপোকা দমনের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া ঔষধের তালিকা দেখুন।

সবুজ-শুঁড়া লেদাপোকা (মেলানিটিস লেদা ইস্মিনি)

পূর্ণবয়স্ক মথ পাতার ওপর ডিম পাড়ে। কীড়া গুলোর মাথার ওপর এবং লেজের দিকে শিং এর মতো এক জোড়া করে শুড় আছে।

সবুজ সেমিলুপার (নারাংগা এনেসেন্স)

এ পোকার কীড়াগুলো সবুজ-শুঁড়া লেদা পোকার মত বড় এবং ধানের পাতা কেটে খায়। এরা চারা অবস্থা থেকে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত বেশি ক্ষতি করে থাকে। কীড়াগুলো পিঠ কুচকে চলে।

প্রতিকার

*             প্রতিকারের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া ঔষধের তালিকা দেখুন।

স্কীপারপোকা (পিলোপিডাস ম্যাথাইয়াস)

এ পোকার কীড়াগুলি ধানের পাতার পাশ থেকে খেতে খেতে মধ্য শিরার দিকে আসে। সবুজ-শুঁড়া লেদাপোকা, সেমিলুপার এবং এ পোকার খাওয়ার ধরন ও ক্ষতির নমুনা একই রকম।

পূর্ণবয়স্ক স্কীপার একটি মথ। এর শুঁড় দুটো দেখতে অনেকটা আংটার মত। এরা বেশ তাড়াতাড়ি আঁকা-বাঁকা ভাবে ওড়ে। এ পোকার পুত্তলী মোড়ানো পাতার সাথে রেশমী সুতার মত আঠা দিয়ে আটকানো থাকে।

প্রতিকার

*             এ পোকা দমনের জন্য পুস্তকের শেষে দেয়া ঔষধের তালিকা দেখুন।

লম্বা-শুঁড় উরচুংগা (ইউসিরটাস্ কন্সিনাস)

এরা ধানের পাতা এমনভাবে খায় যে পাতার কিনারা ও শিরাগুলো শুধু বাকী থাকে। ক্ষতিগ্রস্থ পাতাগুলো জানালার মত ঝাঝরা হয়ে যায়।

ছোট-শুঁড় ঘাসফড়িং (আক্সিয়া প্রজাতি)

এরা ইয়োলো মটল বা হলদে দাগ নামক রোগ ছড়ায় এবং পাতার পাশ থেকে খেয়ে ফেলে। যে সমস্ত ঘাসফড়িং-এর প্রজাতি এক সাথে অনেক সংখ্যায় ক্ষেত আক্রমণ করে তাদেরকে ইংরেজীতে লোকাস্ট এবং বাংলায় পংগপাল বলা হয়।

প্রতিকার

*             প্রতিকারের জন্য এ বইয়ের শেষে দেয়া ঔষধের তালিকা দেখুন।

ছাতরাপোকা (ব্রেভিনিয়া রেহি)

শুকনো আবহাওয়ায় বা খরার সময়ে এবং যে সমস্ত জমিতে বৃষ্টির পানি মোটেই দাঁড়াতে পারে না সে ধরনের অবস্থায় ছাতরা পোকার আক্রমণ বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা গাছের রস শুষে খাওয়ার ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। আক্রমণ বেশী হলে ধানের শীষ বের হয় না। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছগুলো জায়গায় জায়গায় বসে গেছে বলে মনে হয়।

স্ত্রী ছাতরা পোকা খুব ছোট, লালচে সাদা রঙের, নরম দেহবিশিষ্ট, পাখাহীন এবং গায়ে সাদা মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। এরাই গাছের ক্ষতি করে। এক সাথে অনেকগুলো ছাতরা পোকা গাছের কাণ্ড ও খোলা এবং পাতার খোলের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকে। পুরুষ পোকা স্ত্রী পোকার অনুপাতে সংখ্যায় খুবই কম বলে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। এদের দু‘টো পাখা আছে।

প্রতিকার

*             আক্রমণের প্রথম দিকে সনাক্ত করতে পারলে আক্রান্ত গাছগুলো উপড়িয়ে নস্ট করে ফেলে এ পোকার আক্রমণ ও ক্ষতি ফলপ্রসুভাবে কমানো যায়।

*             প্রয়োজন হলে এ বইয়ের শেষে দেয়া ঔষধের তালিকা দেখুন।

পামরীপোকা (ডিক্লাডিসপা আর্মিজেরা)

পূর্ণবয়স্ক পামরীপোকা পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পাতার ওপর লম্বালম্বি কয়েকটি সমান্তরাল দাগ দেখতে পাওয়া যায়। বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের পাতগুলো শুকিয়ে পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়।

পূর্ণবয়স্ক পামরী ও তাদের কীড়াগুলো উভয়েই ধানগাছের ক্ষতি করে। পূর্ণ বয়স্ক পামরীপোকার গায়ের রং কালো এবং পিঠে কাটা আছে। এরা পাতার উপরের সবুজ অংশ এমন ভাবে খায় যে শুধু নীচের পর্দাটা বাকী থাকে। একটি ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতে অনেক পূর্ণ বয়স্ক পামরীপোকা দেখা যেতে পারে। পূর্ণবয়স্ক পোকাগুলো পূর্ববর্তী ধান ফসল থেকে নতুন ক্ষেত আক্রমণ করে। সাধারণতঃ বাড়ন্ত গাছ বেশী আক্রান্ত হয় এবং ধান পাকার সময় পোকা থাকে না।

স্ত্রী পামরীপোকা পাতার নীচের দিকে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার দুই পর্দার মধ্যে সুড়ংগ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অনেকগুলো কীড়া এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা শুকিয়ে যায় কীড়া এবং পূত্তলীগুলো সুড়ংগের মধ্যেই থাকে। পামরী পোকা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে।

প্রতিকার

*             গাছের কুশী ছাড়ার শেষ সময় পর্যন্ত পাতার গোড়ার ২-৩ সেমি (প্রায় ১ ইঞ্চি) উপর থেকে ছেটে দিয়ে শতকরা ৭৫-৯২ টা পামরীপোকার কীড়া মেরে ফেলা যায় এবং পরবর্তী আক্রমণ রোধ করা যায়।

*             কীটনাশকের অভাবে ক্ষেতে সাবানের ইমাল্শন বা তামাকের ক্বাথ্ ছিটিয়ে এ পোকা দমন করা যায়।

*             এ পোকা দমনের জন্য শেষে দেয়া ঔষধের তালিকা দেখে ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।

ধানের লেপ্টিস্পা বিটল ( লেপ্টিস্পা পিগ্মেই)

এদের ক্ষতির নমুনা প্রায় পামরী পোকার মতই। কিন্তু খাওয়ার দাগটা আরও সরু। কীড়ারও পাতা খায়। কীড়াগুলো হলদে রঙের।

পূর্ণবয়স্ক বিটল পোকা আকারে ছোট এবং একটু লম্বা ধরনের। বিটল্ পোকা এবং পামরী পোকা অনেক সময় একই ক্ষেতে দেখতে পাওয়া যায়।

প্রতিকার

*             এ পোকা দমনের জন্য পুস্তকের শেষের দিকে দেয়া ঔষদের তালিকা দেখুন।

উরচুংগা (গ্রাইলোট্যালপা আফ্রিকানা)

উরচুংগা গাছের গোড়া কেটে দেয়, ফলে গাছ মারা যায়। অনেক সময় এদের ক্ষতি মাজরা পোকার ক্ষতির সাথে ভুল হতে পারে। উরচুংগা গাছের নতুন শিকড় এবং মাটির নীচের গাছের গোড়া খেয়ে ফেলে। কিন্তু মাজরা পোকা কাণ্ডের ভেতরটা খায।

পানি আটকিয়ে রাখা যায় না এমন ধানক্ষেতে উরচুংগা একটা সমস্যা। এ পোকা তখনই আক্রমণ করে যখন ক্ষেতে আর পানি থাকে না, অথবা স্থানে স্থানে যখন পানি কমবেশী হয় এবং মাটি দেখা যায়। ক্ষেত ডুবিয়ে দিলে উরচুংগা আইলে বা উচু জায়গায় চলে যায়। সেখানে মাটির নীচে শক্ত স্থলে ডিম পাড়ে।

প্রতিকার

*             সেচ দিয়ে ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়ে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।

*             এ ছাড়া কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করেও এ পোকা দমন করা যায়। পুস্তকের শেষের দিকে দেয়া ঔষদের তালিকা দেখুন।

কালো শোষকপোকা (স্কোটিনোফারা প্রজাতি)

কালো শোষকপোকা গাছের রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে। খাওয়ার জায়গাটা ধূসর দেখায় এবং তার চারপাশে গাঢ় ধূসর রঙের দাগ পড়ে। খাওয়ার ফলে পাতার কিনারা, আগা অথবা সম্পূর্ণ গাছ শুকিয়ে যেতে পারে এবং মাঝখানের পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে যেতে পারে।

কালো শোষকপোকা আদ্রতা পছন্দ করে এবং আবহাওয়া খুব শুকনো হলে বা দেিনর তাপমাত্রা খুব কমে বা বেড়ে গেলে এরা নির্জীব হয়ে পড়ে। আবহাওয়া অনূকুল হলে পূর্ণ বয়েসী গাছের পাতা ও পাতার খোলের রস শুষে খায। বেশী বয়সের গাছে এরা গাছের গোড়ার দিকে পাতার খোলের রস খায়।

ধানের পাতা বা পাতার খোলে এবং কোন কোন ঘাসের উপর ২-৪ সারিতে ডিম পাড়ে। সদ্য পাড়া ডিমের রং হালকা কমলা কিন্তু ফোটার আগে ডিমগুলো গাঢ় কমলা রঙের হয়ে যায়। ছয় দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। সদ্য ফোটা বাচ্চগুলো ডিমপাড়া স্থানের আশেপাশে খায় এবং এর পরে গাছের গোড়ার দিকে খায়।

প্রতিকার

*             এ পোকা দমনের জন্য পুস্তকের শেষের দিকে দেয়া ঔষদের তালিকা দেখে নিন।

ইঁদুর

গাছের যে কোন বয়সেই ইঁদুর ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে গাছে কাইচথোড় আসার সময়। এ সময় তারা গাছ কেটে ফেলে এবং কাইচথোড়ের গোড়ার দিকটা খেয়ে ফেলে। গাছের গোড়ার কাটার নমুনা থেকেই বোঝা যায় যে মাজরা পোকা, না ইঁদুর ক্ষতি করেছে।

ধানক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় এক বিরাট অংশে ইঁদুর বাস করে এবং শুধু ক্ষেতের পাশের দিকটা বাদ দিয়ে মাঝখানের অংশ সম্পূর্ণ ক্ষতি করে ফেলতে পারে। ধানগাছের কুশী ছাড়ার প্রথমাবস্থায় ক্ষতি হলে নতুন কুশী উৎপাদন করে আক্রান্ত গাছগুলো কিছুটা ক্ষতি পূরণ করতে পারে। এ অবস্থায় ক্ষেতের মাঝখানের গাছগুলোতে যখন শীষ কাঁচা থাকে তখন চারিপাশে গাছগুলোর ধান পেকে যায়। যদি গাছের শেষ বয়সের দিকে ক্ষতি হয় তাহলে গাছের ক্ষতি পূরণের আর শক্তি থাকে না।

প্রতিকার

*             যে সমস্ত এলাকায় ইঁদুরের উপদ্রব বেশী, সে সব এলাকার ক্ষেতের চারপাশের আইল পরিস্কার রাখলে ইঁদুরের আস্তানা করতে অসুবিধা হয়, ফলে ইঁদুরের উপদ্রবও কম থাকে।

*             বিভিন্ন ফাঁদের সাহায্যে ইঁদুর মেরে তাদের সংখ্যা কমানো যেতে পারে।

*             এ ছাড়া জিংক ফসফাইডের বিষটোপ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যেতে পারে।

পাখি

ধানগাছের শীষ বেরুবার পরপরই পাখী আক্রমণ করে ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় ধানের দানায় দুধ আসার পর বা দানা শক্ত হওয়ার পর আক্রমণ হলে। ধানের দুধ ঠোট দিয়ে চিপে খেয়ে ফেলে, ফলে ধান চিটা হয়ে যায়। ধান পকার সময় আক্রমণ করলে পাখীরা সম্পূর্ণ দানাগুলোই খেয়ে ফেলে। ধানের দুধ অবস্থায় পাখীর ক্ষতির নমুনা থেকে মাজরা পোকার ক্ষতিজনিত হোয়াইট হেড বা সাদা শীষের পার্থক্য আছে। পাখীর ক্ষতির বেলায় একটা শীষের সমস্ত দানাগুলোই চিটা হয়ে যায় এবং শীষটা টান দিলে সহজেই উঠে আসে।

প্রতিকার

*             বাংলাদেশে অনিস্টকারী পাখী দমনের জন্যে নির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা নেই। পাখীদের ভয় দেখাবার জন্যে ২-৩ সেমি (প্রায় ১ ইঞ্চি) চওড়া কাগজের বা কাপড়ের ফালি ক্ষেতের ৩-৪ হাত উপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশের সাহায্যে টাংগিয়ে দিরে পাখীর উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

*             এ ছাড়া খালি কেরোসিন টিনের সাহায্যে শব্দ করে পাখী তাড়ানো যেতে পারে।

রোগ বালাই

পাতা ঝলসানো রোগ

একে পাতাপোড়া রোগও বলে। জানথোমনাস কেমপিসট্রিস পিভী অরইজী নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগ ঘটায়। প্রথমে পাতার কিনারায় হলদে থেকে সাদা রঙের জলছাপের মত রেখা দেখা যায়। দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত বা উভয় প্রান্ত অথবা ক্ষত পাতার যে কোন জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত পাতাটি আক্রান্ত হয়। আক্রমণ-কাতর জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নীচপ্রান্ত পর্যন্ত যেতে পারে।

বীজতলা থেকে চারা তোলার সময় যদি শিকড় ছিড়ে যায় তখন রোপনের সময় ব্যাকটেরিয়া সেই ক্ষতের মধ্য দিয়ে গাছের ভেতরে প্রবেশ করে। এছাড়া কচি পাতার ক্ষত দিয়েও এ রোগ প্রবেশ করতে পারে।

যখন জীবাণু গাছের শেকড়ের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে তখন গাছটি প্রথমে নুয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। এ অবস্থাকে ক্রিসেক বা নেতিয়ে পড়া রোগ বলা হয়ে থাকে। চারা বা প্রাথমিক কুশী বের হওয়ার সময় গাছের পাতা বা পুরো গাছটি ঢলে পড়ে। মাঝে মাঝে আক্রমন-কাতর ধানের পাতাগুলো ফ্যাকসে হলদে রঙের হয়। গাছের বয়স্ক পাতাগুলো স্বাভাবিক সবুজ থাকে, কিন্তু কচি পাতাগুলোতে হয়তো সমানভাবে ফ্যাকাসে হলদে, নতুবা হলদে বা সবুজ হলদে রঙের ডোরা দাগ পড়ে।

পাতাপোড়া রোগের ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত গাছ বা তার পরিত্যক্ত গোড়া, কুটা ও বীজ এবং আগাছার মধ্যেও থাকতে পারে। শিশির, সেচের পানি, বৃষ্টি, বন্যা এবং ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়ার কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের দিকে হলদে পুতির দানার মত গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে  লেগে থাকে। পরবর্তীকালে পাতার গায়ে থাকা জলকণা গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে এবং জীবাণু অনায়াসে ছড়িয়ে পড়ে।

অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার, বিশেষ করে আক্রমণ-কাতর ধানে এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়।

প্রতিকার

*             এ রোগ দমনের জন্য মালা, চান্দিনা, বিল্পব, ব্রিশাইল ব্রিবালাম, আশা, সুফলা, নাইজারশাইল ইত্যাদি প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধানচাষ করা উচিত।

*             ক্রীসেক-আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পাশ্ববর্তী গাছ থেকে কুশী এনে লাগিয়ে দিলে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

*             ক্ষেতের পানি শুকিয়ে ফেলা ভাল।

*             জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলতে পারলে মাটিবাহিত জীবাণু মারা যায়।

পাতার লালচেরেখা রোগ

এ জাতীয় জীবানুর নাম জানথোমনাস এস কেমপিসট্রিস পিভী অরাইজী ট্রান্সলুসেন্স এফ পি অরাইজীকোলা। এ রোগ সাধারণতঃ পত্র ফলকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রথমে শিরা সমূহের মধ্যবর্তী স্থানে সরু এবং হালকা দাগ পড়ে। আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয়ে বাদামী রং ধারণ করে এবং পাতার পার্শ্ববর্তী বৃহৎ শিরার দিকে ছড়াতে থাকে। আক্রমণ-কাতর ধানের পাতা পুরোটাই বাদামী রঙের হয়ে মরে যেতে পারে। রোগ বিস্তারের অনূকুল অবস্থায় সারা মাঠ হলদে কমলা রঙের হয়ে যায়।

এ ব্যকটেরিয়া গাছে সৃষ্ট ক্ষত বা পাতার কোষের স্বাভাবিক ছিদ্র পথে প্রবেশ করে। পাতাপোড়া রোগের চেয়ে বেশী হলদে দানার মত গুটিকা পাতার উপর সৃষ্ট হয়। বৃষ্টি এবং বাতাস এ রোগ বিস্তারে সাহায্য করে।

প্রতিকার

*             ৫৪০ সে তাপমাত্রার পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখরে বীজ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হয়।

*             ৩:১০০০ দ্রবনের হোমাই নামক ঔষধে বীজ একরাত ভিজিয়ে রাখলেও একই রকম ফল পাওয়া  যেতে পারে।

*             নাড়া শুকিয়ে জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

*             বিপ্লব, ইরি ৮, ব্রিশাইল, আশা, সুফলা, মুক্ত ও প্রগতিতে আক্রমণ কম হয়। এগুলোর চাষ করা ভাল।

*             দেশী আউশ ধানেও আক্রমণ খুব কম হয়।

গুড়িপঁচা রোগ

এ রোগ এরুইনা ক্রাইসানথেমির একটি প্রজাতি দ্বারা হয়ে থাকে। এ রোগে প্রাথমিকভাবে কুশীগুলো গাঢ় বাদামী পঁচা এবং পাতা হলদে হয়ে যায়। শুরুতেই কুশী আক্রান্ত হয়। গাছের প্রাথমিক অবস্থায় পাতার খোল পঁচে যায় এবং বেশ দুর্গন্ধ বের হয়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে প্রায় সবগুলো কুশী পঁচে গিয়ে নুয়ে পড়ে অথবা টান দিলে সহজে উঠে আসে। গুড়িপচা সাধারণতঃ সর্বশেষ কুশী অবস্থা থেকে ফুল হওয়া অবধি দেখা যায়, কিন্তু যদি জমি জলমগ্ন থাকে তবে এ রোগ গাছের জীবনচক্রের যে কোন সময় হতে পারে।

প্রতিকার

*             সেচ নিয়ন্ত্রণ করে জমি মাঝে মধ্যে শুকিয়ে নিরে এ রোগ আয়ত্বে রাখা যায়।

ব্লাস্ট রোগ

সংঘটক ছত্রকের নাম পাইরিকুলারিয়া অরাইজী (ছবি-৬৫)। এই ছত্রক গাছের যে কোন অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে। এ রোগে প্রথমে পত্র ফলকে অতি ছোট বর্তুলাকার দাগ পড়ে। এ দাগের মাঝামাঝি অংশ প্রশস্ত হয় এবং দু’প্রান্ত সরু থাকে যাতে দাগটাকে মনে হয় অনেকটা চোখের মত। বড় দাগ (১.০ – ১.৫, ০.৩ – ০.৫ সেমি) গুলোর কেন্দ্রভাগ ধূসর বর্ণের হয়। আক্রমণ-কাতর ধানের পাতা মরে যেতে পারে। কিন্তু প্রতিরোধক জাতের ধানের পাতার মধ্যে আলপিনের মাথার মত ছোট বাদামী দাগকে পাতার দাগ রোগ বলে ভুল হতে পারে।

ধানগাছের ব্লাস্ট রোগ কাণ্ডের গীটেও আক্রমণ করতে পারে। পূর্বসন্ধির কাছে খোলের গোড়ার দিকে ফুলা পালভিনাস নামক অংশ পঁচে গিয়ে কালচে হয় এবং সহজেই ভেংগে যায়। এ রোগ ছড়া বা শীষের গোড়ার দিকেও হতে পারে। আক্রান্ত শীষ কালচে হয়ে ভেংগে যেতে পারে। শীষের গোড়ায় ব্লাস্ট হলে সম্পূর্ণ শীষটি চিট হয়ে যায়।। অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার এবং বাতাসের আদ্রতা এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়।

প্রতিকার

দমনের জন্য নিম্ন লিখিত উপায় অবলম্বন করা উচিতঃ

*             বীজ ৫৪০ সে তাপমাত্রায় পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।

*             হোমাই নামক ঔষধের ৩:১০০০ দ্রবনে বীজ এক রাত ভিজিয়ে রেখে শোধন করুন।

*             অতিরিক্ত ব্যবহার না করে সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করুন।

*             জমি শুকাতে দেবেন না।

*             ব্লাস্ট প্রতিরোধক জাতের ধান- যেমন বিপ্লব, দুলাভোগ, ব্রিবালাম, আশা, সুফলা, প্রগতি, মুক্তা ও কটকাতারা চাষ করুন।

*             ধারিয়াল, নাইজারশাইল, পাজাম ইত্যাদি আক্রমণ-কাতর জাতের ধান চাষ করবেন না।

খোলপোড়া রোগ

রোগ সংঘটক ছত্রকের নাম রাইজোকটোনিয়া সোনালী (থানাটেফোরাস কিউকিউমেরিস)। এ রোগে প্রাথমিক অবস্থায় পানির উপরিভাগে খোলের উপর সবুজ ধূসর রঙের দাগ পড়ে। ডিম্বাকৃতিবা বর্তুলাকার এ সমস্ত দাগগুলো প্রায় ১ সে. মি. লম্বা হয় এবং বড় হয়ে এগুলো ২-৩ সে মি পর্যন্ত হতে পারে। কতকগুলো দাগ পড়ে একত্রে মিশে যায়। প্রত্যেকটি দাগের সীমারেখা এবং রঙের বৈচিত্র একটা আক্রান্ত এলাকার বৈশিষ্টকে ফুটিয়ে তোলে। তখন আক্রান্ত খোলটার উপর ছোপছোপ দাগ মনে হয়। অনূকুল এবং আদ্র পরিবেশে আক্রান্ত কাণ্ডের নিকটবর্তী  পাতাগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণতঃ ফুল হওয়া থেকে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ স্পষ্ট দেখা যায়।

প্রতিকার

এ রোগ দমনের জন্য নীচের উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারেঃ

*       পরিচ্ছন্ন চাষবাস।

*             লাংগল দিয়ে জমি চাষ করে জমি শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পোড়াতে হয়।

*             সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ ব্যবহার করতে হবে।

*             ধানের জাত অনুসারে রোপনের দুরত্ব বাড়াতে-কমাতে হবে। তবে ২৫ – ২০ সেঃমিঃ দূরত্বই ভাল।

ভুয়াঝুল বা লক্ষ্মীরগু

সংঘটক ছত্রাকের নাম আসটিলাজিনইডীয়া ভাইরেন্স। লক্ষ্মীরগু বা ভূয়াঝুল রোগ ধান পাকার সময় দেখা যায়। ছত্রক ধানে চাল হওয়ার শুরুতেই আক্রমণ করে এবং বাড়ন্ত চালকে নষ্ট করে বড় গুটিকা সৃষ্টি করে। গুটিকার ভেতরের অংশ হলদে কমলা রং এবং বহিরাবরণ সবুজ হয়। কচি গুটিকাগুলো ১ সেঃমিঃ এবং পরিপক্ক অবস্থায় আরও বড় আকারের হতে পারে। এক রকমের আঠা জাতীয় পদার্থ থাকার জন্যে গুটিকা থেকে ক্ল্যামাইডোস্পোর জাতীয় অনুবীজ সহজে বের হয় না। সাধারণতঃ কোন শীষে কয়েকটা ধানের বেশী আক্রান্ত হতে দেখা যায় না।

প্রতিকার

*             আক্রান্ত গাছ বা শীষ তুলে ফেলা এ রোগ দমনের সবচেয়ে ভাল উপায়।

*             পূর্বের ন্যায় বীজ শোধন দ্বারাও এ রোগ দমন করা যায়।

বাদামীদাগ রোগ

সংঘটক ছত্রকঃ হেলমিনথোস্পোরিয়াম ড্রোসলেরা অরাইজী কক-লিওবলাস মিয়াবিয়ানাস। এ রোগের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ পাতায় এবং বীজের খোসায় দেখা যায়। প্রথমে পাতার বৈশিষ্ট্যগত দাগগুলো ডিম্বাকৃতি এবং আকারে ও আকৃতিতে তিল বীজের মত হয়। দাগগুলো আকৃতিতে প্রায় অনেকটা একই রকমের এবং পাতার সমস্ত অংশ জুড়েই সমানভাবে দেখা যায়। নতুন দাগগুলো ছোট ০.০৫ থেকে ০.১ সেঃমিঃ পরিধি বিশিষ্ট গোলাকার এবং সাধারণতঃ গাঢ় বাদামী রঙের হয়। বয়স্ক দাগ ০.৪-১ সেমি  ০.১-০.২ সে মি আকারের এবং বাদামী রঙের দাগের কেন্দ্র ধূসর অথবা সাদা। অধিকাংশ দাগের কিনারা হালকা রং এর হয়। দাগগুলো বড় হয় এবং সরু বাদামী দাগের মত লম্বা হয় না। ব্লাষ্টের দাগের যেমন কেন্দ্র বেশীর ভাগ ধূসর বা সাদা হয় বাদামী দাগরোগের কেন্দ্র ভাগের অধিকাংশই থাকে বাদামী রঙের।

প্রতিকার

দমনের জন্য নীচের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেঃ

*             জমিতে পটাশ,দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা।

*             সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার ।

*             ব্লাস্ট রোগের মত বীজ শোধন।

সরু বাদামীদাগ রোগ

সংঘটক ছত্রকের নামঃ ছারকোছপোরা অরাইজী স্ফেরুলিনা অরাইজীনা।

পাতার মধ্যে ছোট, সরু ও চিকন লম্বা-লম্বী বাদামী দাগ খোলে, বীজরে বোটায় এবং ধানের তুষের উপর হতে পারে। লম্বা দাগগুলো পাতার শিরার সমান্তরালে থাকে। এ দাগগুলো সাধারণতঃ ২-১০ মি মি লম্বা এবং ১ মি. মি. চওড়া হয়। কিন্তু আক্রমণ-কাতর জাতের ধানে দাগগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা হালকা বাদামী রঙের হয়। দাগের কেন্দ্রটা হালকা রঙের এবং সরু। সাধারণতঃ এই সরু বাদামী দাগ লাল বাদামী এবং দাগের কিনারা হালকা রঙের হয়ে থাকে।

প্রতিকার

*             পরিমিতভাবে সার ব্যবহারে এ রোগ আয়ত্বে রাখা যায়।

কাণ্ডপঁচা রোগ

এ রোগের সংঘটক ছত্রকের নামঃ হেলমিনথোস্পোরিয়াম সিগময়ডিয়াম (লেপ্টাস্ফরিয়া সলভিনীয়াই অথবা মাগনাপর্থি সলভিনীয়াই)। ছত্রক সাধারণতঃ জমির পানির উপরের তল বরাবর কোন ক্ষতের মাধমে গাছের ভেতর ঢুকে রোগ সৃষ্টি করে। প্রথমে গাছের বাইরের খোলে কালচে গাঢ়, অনিয়মিত দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে বড় হয়। পরে ছত্রক গাছের কাণ্ডের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং তাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে গাছ হেলে ভেংগে পড়ে।

প্রতিকার

এ রোগ দমনের জন্য নীচের ব্যবস্থাসমূহ নেয়া যেতে পারেঃ

*             জমি শুকিয়ে নাড়া পোড়ানো।

*             মাঝে মাঝে রোপা জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি শুকানো।

*             ঘন করে চারা না লাগানো।

*             সুষম সারের ব্যবহার।

*             কিছুটা সহনশীল জাতের ধান- যেমন দুধসর, বিপ্লব, ব্রিশাইল, আশা ইত্যাদির চাষ।

*             হেকটর প্রতি ২.২৫ কিঃগ্রাম হোমাই বা বেনলেট ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়া।

খোলপঁচা রোগ

সংঘটক ছত্রকঃ স্যারোক্লাডিয়াম অরাইজী। এ রোগ ধানগাছে থোড় হওয়ার শেষ পর্যায়ে এবং সর্বোপরি খোল অর্থাৎ যে খোল ছড়াকে আবৃত করে রাখে সেই খোলে হয়। দাগটা প্রথমতঃ গোলাকার বা অনিয়মিত এবং আকারে ০.৫-১.৫ সেঃমিঃ লম্বা হয়। কেন্দ্র ধূসর এবং কিনারা বাদামী  রঙের হতে পারে। দাগগুলো একত্র হয়ে বড় হয় এবং সম্পূর্ণ খোলেই ছড়াতে পারে। আক্রমণ বেশী হলে শীষ বা ছড়া আংশিক বের হয়।

থোড়মুখ শীষ পঁচে যায় এবং গুড়া ছত্রকাংশ খোরে ভেতর প্রচুর দেখা যায়।আংশিক বের হওয়া শীষে খুব কম সংখ্যক ধান পুষ্ট হয়। সাধারণতঃ আক্রান্ত গাছের নীচের দিকে মাজরা পোকার আক্রমন বা অন্য কোন আঘাত বা ক্ষত দেখা যায় না। এ রোগ ভাইরাস আক্রান্ত গাছের সংগে জড়িত থাকে।

প্রতিকার

এ রোগ দমনের জন্য নীচের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারেঃ

*             সুস্থ বীজ ব্যবহার।

*             খড়কুটা জমিতে পুড়িয়ে ফেলা।

*             ইউরিয়া সারের ব্যবহার পরিমিত রাখা।

*             ব্লাস্টের মত বীজ শোষণ।

পাতার ফোস্কাপড়া রোগ

পাতার ফোস্কাপড়া একটি বীজবাহিত রোগ। এর সংঘটক ছত্রকের নামঃ রিংকোছপরিয়াম অরাইজী (মেটাস্ফেরিয়া এ্যালবেসেন্স) (ফনথুমেন) ওয়ি। এ রোগের লক্ষণ সাধারণতঃ বয়স্ক পাতার আগায় দেখা যায়। মাঝে মাঝে পাতার মাঝখানে বা কিনারেও হতে পারে। দাগ অনেকটা আয়তাকার বা হীরকের আকৃতির মত লম্বায় ১-৫ সে.মি. এবং চওড়ায় ০.৫ সে.মি.। দেখতে জলছাপের মত মনে হয়। দাগ বড় হয়ে অনেকটা ডিম্বাকৃতি বা আয়তাকার এবং জলপাই রঙের মত মনে হয়। দাগের ভেতরে গাঢ় বাদামী চওড়া রেখা এবং হালকা বাদামী রেখা পর পর বেস্টন করে থাকে। তাতে কিছুটা ডোরাকাটা দাগের মত মনে হয়। বেশি আক্রান্ত পাতাশুকিয়ে খড়ের রঙের মত হয় এবং দাগের কিনারা হালকা বাদামী এলাকার মত দেখা যায়।

দাগের ক্রমাগত বৃদ্ধি পুরো পাতাতেই ছড়াতে পারে। পাতার ফোস্কাপড়া রোগ চেনার সহজ উপায় হলো আক্রান্ত পাতা কেটে স্বচ্ছ পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে যদি পুঁজ বা দুধ জাতীয় পদার্থ কাটা অংশ থেকে বের হয় তবে বুঝতে হবে এটা ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতাপোড়া রোগ। আর যদি কোন কিছু বের না হয় তবে সেটা পাতার ফোস্কা রোগ।

প্রতিকার

এ রোগ দমনের জন্য নীচের ব্যবস্থাগুলো নেয়া যেতে পারে:

*             সুস্থ বীজ ব্যবহার।

*             ইউরিয়া সারের পরিমিত ব্যবহার।

*             বীজ শোধন করা।

*             নাড়া জমিতে পুড়িয়ে ফেলা।

বাকানী বা গোড়াপঁচা রোগ

এটিও একটি বীজবাহিত রোগ এবং ফিউজারিয়াম মনিলিফরমি (জিবেরেলা ফুজিকুড়ই) নামক ছত্রক দ্বারা ইহা ঘটে থাকে। এ রোগের সবচেয়ে আক্রমনীয় লক্ষণ হলো আক্রান্ত চারা স্বাভাবিক চারার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা হয় এবং আক্রান্ত চারার পাতা হলদে সবুজ হয়। আক্রান্ত চারাগুলো বেশী দিন বাঁচে না। এ ছাড়াও গাছ খাটো হওয়া, গোড়া পঁড়া এবং চারার মৃত্যু আরও আনুসাংগিক লক্ষণ।

আক্রান্ত গাছের কুশী লিকলিকে হয়। এদের ফ্যাকাশে সবুজ পাতা অন্যান্য গাছের উপর দিয়ে দেখা যায় এবং নীচের দিকে গীটে অস্থানিক শিকড়ও দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত গাছ যদি কোন রকমে বাঁচে তবে সেগুলো থেকে চিটা ধান হয়। অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার এবং ৩০-৩৫০ সে তাপমাত্রা এ রোগের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

প্রতিকার

রোগ আয়ত্বে রাখতে হলে নীচের ব্যবস্থাগুলো নিতে হবেঃ

*             হোমাই নামক ওষুধের ৩ ঃ ১০০০ দ্রবনে বীজ এক রাত ভিজিয়ে রেখে অথবা ৫০০ সে তাপমাত্রার পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে শোধন করা।

*             একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।

*             আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।

*             কিছুটা প্রতিরোধ সম্পন্ন ধানের জাত যেমন, ইরিশাইল, বিপ্লব, আশা, সুফলা ও মুক্তার চাষ করা।

ঘাসীবেঁটে রোগ

আক্রান্ত গাছ অত্যন্ত খাটো এবং তাতে অসংখ্য কুশী হয়। দেখতে ঘাসের মত এবং এক জায়গা থেকে অনেক গাছ বের হয়েছে বলে মনে হয়। পাতা সরু খাটো এবং শক্ত হয়। পাতার রং হালকা সবুজ হয় এবং মাঝে মাঝে মরিচা দাগের মত দাগ পরে। আক্রান্ত গাছ ধান পাকা অবধি বাঁচে, কিন্তু ছড়া অত্যন্ত কম হয়। ছড়া ছোট এবং গাঢ় বাদামী রঙের চিটা হয়।

এ রোগের আক্রমণ যদি বয়স্ক গাছে হয় তবে হয়তো ধান কাটার আগে লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে, কিন্তু কাটা গাছের গোড়া থেকে গজানো ধানে লক্ষণ দেখা যায়।

বাদামী গাছফড়িং এ ভাইরাস রোগের বাহক। যতদিন জীবিত থাকে বাহক পোকা এ ভাইরাসকে শরীরে ধারণ করতে পারে এবং সুস্থ গাছ খেয়ে খেয়ে ছড়াতে পারে। কিন্তু বাহক পোকা বংশ পরস্পরায় এ রোগ ছড়ায় না। আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত এ রোগ দেখা যায় নাই।

প্রতিকার

*             এ  রোগ দমনের জন্য আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ইরি ৩৬, ইরি ৪২, ইরি ৫২ও ইরি ৫৬ চাষ করা যেতে পারে।

*             তাছাড়া বাদামী পাতাফড়িং বীজতলা থেকে শুরু করে দমন রাখলেও এ রোগের প্রকোপ কম হতে পারে।

টুংরো রোগ

এ রোগ হলে ধানগাছের বাড়তি কমে যায় এবং কুশীও সংখ্যায় কিচু কম হয়। পাতার খোল এবং পাতা উভয়ই খাটো হয়। কচি এবং প্রসারিত পাতা পাতার খোলের মধ্যে আটকে যায় এবং পাতা কিছুটা মোচড় খেয়ে উঠে। বয়স্ক পাতার আগার দিকে থেকে পাতার রং সবুজ থেকে হালকা হলুদ এবং কমলা হলুদ থেকে বাদামী হলদে হয়ে যায়। কচি পাতা প্রাই নানা বর্ণে হয় অথবা পাতার মিরা বরাবর ফ্যাকাশে সবুজ থেকে সাদা লম্বা রেখা দেখা যায়। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে পাতার হলদে রং বদলায়।

রোগাক্রান্ত গাছ সাধারণতঃ ধান পাকা অবধি বাঁচতে পারে। ফুল দেরীতে আসার জন্যে ধানও  দেরীতে পাকে। ধানের ছড়া সম্পূর্ণ বের হয় না,  ছোট হয় এবং ধান চিটা হয়। বীজের উপর গাঢ় বাদামী রঙের দাগ পড়ে এবং সেসব ধানের ওজন সুস্থ গাছের ধানের চেয়ে কম হয়। দেরীতে আক্রান্ত গাছে ধান পাকা পর্যন্ত লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। কিন্তু ঐ ফসলের গোড়া থেকে উদ্ভুত ধানগাছে রোগের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

টুংরোঃ গাছের বয়স কম ও আক্রমণকাতর হলে রোগের প্রকোপ খুব বেশী হয়।এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চলে টুংরোই ধানের সবচেয়ে প্রধান ভাইরাস রোগ। ব্যাপক আক্রমণ হলে অল্প সময়ের মধ্যে বিরাট এলাকার ফসল নষ্ট হতে পারে।

নেফোটেটিকস মালায়ানুস, নে নিগ্রোপিকটাস, নে পারভাস, নে ভাইরেসেন্স নামে পাতাফড়িং ও আঁকাবাঁকা পাতাফড়িং টুংরো রোগ ছড়ায়। ভাইরাস এবং বাহক পোকার মধ্যে সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী এবং বাহক পোকা রোগ বংশ পরস্পরায় ছড়ায় না।

প্রতিকার

টুংরো দমনের ব্যবস্থাদির মধ্যে নীচের ব্যবস্থাগুলো সবচেয়ে উপকারী:

*             টুংরো প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত, যেমন লতিশাইল, ইরিশাইল, ব্রিশাইল, গাজী, মোহিনী ইত্যাদি জাতের চাষ করা।

*             ডিডিভিপি বা নগস ইত্যাদি তাৎক্ষনিক স্পর্শ বিষ জাতীয় ঔষধ হেক্টরপ্রতি ২.২৫ মি গ্রাম ৫৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে সবুজ পাতাফড়িং দমন।

*             বিকল্প পোষক জাতীয় আগাছা দমন।

হলদে বামুণ

আক্রান্ত গাছে নতুন প্রসারিত পাতা হলদে বা পাংশু রঙের হয়। পাতার রং হলদে সবুজ থেকে সাদাটে সবুজ অথবা ফ্যাকাশে হলদে হতে পারে। রোগ বাড়তির সাথে সাথে আক্রান্ত গাছ বিবর্ণ হয়। খুব খাটো এবং অত্যাধিক কুশী হয়। পাতগুলো নরম হয়ে ঝুলে পড়ে। আক্রান্ত গাছ মরে যেতে পারে অথবা ধান পাকা পর্যন্ত বাঁচতেও পারে।

রোগাক্রান্ত গাছে খুব কম ছড়া হয়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে খুব শীঘ্র রোগের লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে, কিন্তু পরবর্তীতে কাটার পর গোড়া থেকে গজানো গাছে লক্ষণ ভালভাবে প্রকাশ পায়।

হলুদ বামন সংঘটক মাইকোপ্লাজমা নেফোটেটিক্স সিল্কটিসেপস, নে মালয়ানুস, নে নিগ্রোপিকটাস, নে পারভাস এবং নে ভাইরেসেন্স নামক সবুজ পাতাফড়িং দ্বারা ছড়ায়। যতদিন জীবিত থাকে বাহক পোকা এ ভাইরাসকে শরীরে ধারন করতে এবং সুস্থ গাছে খেয়ে রোগ ছড়াতে পারে, কিন্তু বাহক পোকা এ রোগ বংশ পরস্পরায় ছড়ায় না।

প্রতিকার

*             এ রোগের দমন ব্যবস্থা হিসাবেও টুংরো রোগের অনুরূপ সবুজ পাতাফড়িং দমন করা উচিত।

কৃমিজনিত উফরারোগ

সংঘটক কৃমির নামঃ ডিটাইলেংকাছ এংগুছটাছ। মাটি দ্বারা পরিবাহিত এ কৃমি গাছের উপরের অংশ আক্রমণ করে। আবদ্ধ অস্ফুটিত পাতা এবং বৃদ্ধিমান শীষের কলা অংশে এরা পরজীবি হিসেবে খেয়ে থাকে। যে পাতা সবে মাত্র বের হচ্ছে সে পাতায় প্রথমে সাদাছিটকা দাগ পড়ে। তারপর আস্তে আস্তে কচি পাতাটি ভেংগে পড়ে। পাতা বের হওয়ার সময় মুচড়িয়ে যায় এবং অধিকাংশ ছড়াই মোচড় খেয়ে যায় ও ধান চিটা হয়। কোন কোন ছড়া মোটেই বের হয় না। এ রোগের জীবাণু পানির স্রোতের সাথে এক জমি থেকে অন্য জমিতে যায়। বিশেষতঃ জলী আমন ধানে এরূপ হয়ে থাকে।

প্রতিকার

উফরা রোগ দমনের জন্য নীচের ব্যবস্থাগুলো নেয়া যেতে পারেঃ

*             মৌসুম শেষে চাষ দিয়ে জমি ও নাড়া শুকাতে হবে।

*             এ নাড়া জমিতেই পোড়াতে হবে।

*             জলী আমন ধান দেরীতে বুনলে এ  রোগ কম হয়।

*             শস্য পর্যায়ে ধান ছাড়া অন্য ফসল করা উচিত।

*             প্রাথমিক অবস্থায় আক্রমণ শুরু হলে আগা ছেটে দেয়া যেতে পারে।

শেকড়গিট

এ রোগের সংঘটক কৃমির নামঃ মেলোইডোগাইনী গ্রামনিকোলা। কৃমি ধানগাছের প্রাথমিক শুকনো মাটিতে গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত গাছের পাতা কমলাটে হলদে হয়, শুকয়ি যায় এবং আক্রান্ত জমি মাঝে মাঝে গিট গিট দেখা যায়।

অন্যান্য কৃমিও এ ধরণের ক্ষতি করতে পারে। এক ধরণের শেকড় বাদামী রঙের হয়। গাছ বাড়তে পারে না এবং দুর্বল হয় আর এক ধরণের শেকড়ে দাগ কৃমির আক্রমণ হলে গাছ হলদে হয়ে যায়। বাড়তি রোধ হয়, কুশীর সংখ্যা কমে যায় এবং মরা চারায় দাগ পড়ে। এক ধরণের খোলস কৃমিতে পাতা বিবর্ণ করে দিতে পারে। জমির স্থানে স্থানে গাছ খাটো হয়, কুশী কম হয় এবং শেকড় বাদামী রঙের হয়। বীজবাহিত সাদা আগা কৃমি পাতা এবং ছড়ায় ক্ষতি করে।

প্রতিকার

আক্রান্ত বীজতলা বা জমি পানিতে ডুবিয়ে রাখলে আক্রমণের প্রকোপ কম হতে পারে। আমাদের দেশে শেকড় গিট কৃমি এবং সাদা-আগা কৃমি ব্যতিত অন্যগুলো তেমন দেখা যায় না।

আগাছা

হলদে মুথা (সাইপেরাস ডাইফরমিস এল)

ইহা একটি ২০-৭০ সে মি লম্বা, মসৃণ, ঘন গুচ্ছযুক্ত এবং এক বর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। কাণ্ড মসৃণ, উপরের দিকে ত্রিকোণাকার এবং ১-৪ মিমি পুরু। পাতার খোল নলের মত এবং গোড়ার দিকে যুক্ত থাকে। নীচের দিকের খোলগুলো খড় থেকে বাদামী রঙের হয়। গোড়ার দিকে খোল গুলো খড় থেকে বাদামী রঙের হয়। গোড়ার দিকে ৩-৪টি ঢলঢলে এবং সারি সারি পাতা ১০-৪০ সে.মি. লম্বা ও ২-৩ মি. মি. চওড়া হয়ে থাকে।

পুষ্পবিন্যাস ঘন, গোলাকার সরল বা যৌগিক আম্বেল জাতীয় (ছাতাকৃতি) যা ৫-১৫ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট। তার সংগে ২-৪ টি, সচরাচর ৩টি ১৫-৩৫ সেমি লম্বা ও ৬ মিমি চওড়া পাতার মত বৃতি বিপরীত দিকে অবস্থান করে। পুষ্পবিন্যাসের প্রাথমিক পুষ্পপ্রান্তগুলো ১ সে মি লম্বা। কতকগুলো বোঁটা ছাড়া এবং কতকগুলোর লম্বা বোঁটা আছে। পুষ্পপ্রান্তগুলো গুচ্ছভুতও ৬ মিমি ব্যাসযুক্ত ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার। গুচ্ছগুলো ১০-৩০টি ফুল সম্বলিত ২-৫ মিমি লম্বা ও ১.০-১.৫ মিমি চওড়া সবুজ রঙের রৈখিক বা চক্র কীলক মঞ্জরী দ্বারা গঠিত।

ফল ০.৬ মি মি লম্বা ও কিছুটা চ্যাপটা বৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকৃতি বাদামী রঙের ‘একিন’। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।

প্রতিকার

*             জৈবসার ও ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির সাথে আগাছার বংশ বিস্তারে সক্ষম বীজ ও কন্দ যেন মিশে বা রেগে না থাকে সেদিকে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।

*             আগাছা পরিস্কারের সময় কন্দসহ হাত, নিড়ানী বা কাঁচি দিয়ে তুলে হলদে মুথা দমন করা যায়।

*             কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এ আগাছা দমন করা যায়।

*             একই জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল পর্যায়ক্রমে উৎপন্ন করেও এ আগাছা দমন করা যায়।

*             বীজ পাকার আগেই এ আগাছা তুলে ফেলা উচিৎ।

বড়চুচা (সাইপেরাস ইরিয়া এল)

এটা মসৃণ, গুচ্ছযুক্ত, ত্রিকোণাকৃতির কাণ্ড বিশিষ্ট, ২০-৬০ সিমি লম্বা একবর্ষ জীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। শিকড়গুলো হলদে লাল এবং আঁশযুক্ত। পাতার খোল পাতলা এবং কাণ্ডের গোড়ার দিকে আবৃত রাখে। পাতার ফলক সোজা তলোয়ারের মত, পুষ্পকাণ্ড থেকে খাটো এবং প্রায় ৫মি মি চওড়া।

পুষ্পবিন্যাসটি যৌগিক আম্বেল (ছাতাকৃতি)। প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পুষ্পপ্রান্তগুলো যথাক্রমে প্রায় ১০ সে.মি. ও ২ সেমি লম্বা। বিপরীতভাবে অবস্থানরত ৩-৫টি, কখনো কখনো ৭টি মঞ্জুরী পত্র সংযুক্ত থাকে। সবচেয়ে নীচের মঞ্জুরীর পত্রটি পুষ্পবিন্যাস অপেক্ষা লম্বা। ২-৩ সেমি লম্বা শস্য মঞ্জুরীর (স্পাইক) শাখার অগ্রভাগ লম্বা ও ছড়ানো। হলদে বাদামী থেকে সবুজ রঙের অষংখ্য কলীক মঞ্জরী (স্পাইকলেট) খাড়াভাবে ছড়ানো। ইহা দৈর্ঘ্যে ৩-১০ মিমি এবং প্রস্থে ১.৫-২.০ মিমি। গোলাকার বর্ম পত্রিকা ১-২ মি মি লম্বা হয়।

প্রতিকার

*             বড়চুঁচ দমনের নিয়মাবলী মোটামুটি হলদে মুথার মতনই, যেমন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও একই জমিতে পর্য্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা ইত্যাদি।

*             অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যার মধ্যে উঁচু জমিতে হালকা লাঙল ও আঁচড়া দিয়ে মাটি আলোড়িত করেও এ আগাছা দমন করা যায়। এছাড়া কাণ্ডসহ হাত বা নিড়ানী দিয়ে তুলেও উহার দমন করা হয়।

*             বীজ পাকার আগেই আগাছা দমন করা উচিৎ।

ভাদাইল

ভাদাইল বা মুতা (সাইপেরাস রটানডাস এল)।

একটি খাড়া, মূল ভুগর্ভস্থ কাণ্ড (রাইজোম), কন্দে (টিউবার) রূপান্তরিত এবং ২০ সে.মি. উঁচ বহুবর্ষ জীব বিরুৎ (সেজ)। গোড়ার স্ফীত কন্দসহ কাণ্ড গুলো খাড়া , শাখাবিহীন, মসৃণ ও ত্রিকোণাকৃতি। মূল শায়িত কাণ্ড ছড়ানো, লম্বাটে, সাদা এবং শাসালো। কচি অবস্থায় সেগুলো পাতলা খোসা দ্বারা আবৃত থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁশযুক্ত হয়। কন্দের আকৃতি অনিয়মিত এবং দৈর্ঘ্য ১.০-২.৫ সে.মি.। কচি অবস্থায় কন্দ সাদা ও রসালো থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁশযুক্ত হয়ে বাদামী বা প্রায় কালো বর্ণের হয়। পাতা ঘন সবুজ সোজা ও কিছুটা মোড়ানো, ৫-১৫ সেমি লম্বা ও ৫ মি.মি. চওড়া।

পুষ্পবিন্যাস সরল বা যৌগিক আম্বেল (ছাতাকৃতি) যার বিপরীত দিকে ২-৪ টি মঞ্জুরীপত্র রয়েছে। লালচে বাদামী রঙের ফলের কীলক মঞ্জুরী আম্বেরের শেষ প্রান্তে সাজানো থাকে। সংখ্যায় ৩-৮টি প্রাথমিক পুষ্প প্রান্তের দৈর্ঘ্য ২-৫ সে.মি. যার অগ্রভাগে ছোট ছড়ায় ৩-১০ টি কীলক মঞ্জুরী রয়েছে। এগুলো কখনো কখনো ছোট শাখায়, আবার কখনো কখনো ছড়ার গোড়ায় ১-২টি খাট দ্বিতীয় পর্য্যায়ের পুষ্প প্রান্তে অবস্থান করে কীলক মঞ্জুরী ১.০-২.৫ সে.মি. লম্বা ও ১.৫-২.০ মি মি চওড়া, অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ও সুঁচালো। পরিণত অবস্থায় সেগুলোতে ১০-৪০ টি লালচে বাদামী রঙের ফল একের পর এক ঘন ভাবে সাজানো থাকে। বাইরের থোকাগুলো ৩-৪ মি মি লম্বা ও এদের অগ্রভাগ ভোঁতা হয়।

ফল ডিম্বাকৃতি ১.৫ মি মি লম্বা। পাকা ফরের রঙ কালো। ভূমিজ কাণ্ড, কন্দ ও বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।

প্রতিকার

*             কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও একই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের চাষ ।

*             হালকা লাংগল ও আঁচড়া দেয়া এবং মূল কন্দসহ সম্পূর্ণ গাছ হাত, নিড়ানী বা খুরপির সাহায্যে উপড়িয়ে ফেলা।

আংগুলী ঘাস

ডিজিটারিয়া কিলাইরিস (রেটজ) কোল (প্রতিশব্দ ডি এ্যাডশেনডেনস্ (এইচ বি কে)  হেনর।

ইহা ২০-৬০ সে মি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ভুমিতে শায়িত একবর্ষী বা অল্প জীবনকালের বহুবর্ষী আগাছা। ইহা মুক্তভাবে শাখা-প্রশাখা দেয় এবং নীচের গীরা থেকে শেকড় ছাড়ে। পাতার খোল সাধারণতঃ লোমযুক্ত। পাতার ফলকগুলো চওড়া চওড়া এবং সরল, ৫-১৫ সে.মি. লম্বা এবং ৩-৪ মি.মি. চওড়া। পাতাগুলো সাধারণতঃ লোমবিহীন এবং অমসৃণ কিনার ঢেউ খোলানো। লিগিউল পাতলা ঝিল্লির মত, ১-৩ মি.মি. লম্বা এবং প্রান্ত ভাগে ছেটে ফেলার মত দেখায়।

পুষ্পবিন্যাসটি ৩-৮টা রেসিম বিশিষ্ট একটি ছড়া। ইহা ৫-১৫ সে.মি. লম্বা। ছড়াগুলো প্রায়ই মাঝের বোটার উপরের চারিদিকে চক্রাকারে অবস্থান করে, কিন্তু কখনো কখনো ২ সে.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ক্ষুদ্র সাধারণ দণ্ড বরাবর সাজানোও থাকে। রেসিম লম্বা পাখাযুক্ত ও লোমবিহীন। প্রায় ৩ মি.মি. লম্বা তীলক মুঞ্জুরীগুলো দণ্ডের একধার বরাবর দুই সারিতে ঠাসা অবস্থায় থাকে। নীচের ত্রিকোণাকৃতির তুষ (গ্লুম) প্রায় ৩ মিমি লম্বা, তলোয়ারাকৃতির উপরের বর্মপত্রিকা কীলক মঞ্জুরীর অর্ধেক থেকে পাঁচ ভাগের চার ভাগ অংশের সমান। নীচের বড় তুষ (লেমা) মোটামুটি তলোয়ারাকৃতির ৫-৭ টি শিরা এবং বিভিন্ন পরিমাণ লোমযুক্ত। ফল বিভিন্ন পরিমাণ লোমযুক্ত। ফল বিভিন্ন প্রকার ডিম্বাকৃতির ক্যারিওপ্সিস্। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।

প্রতিকার

*             নিড়ানী, কোদাল, হালকা লাংগল ও আঁচড়া দিয়ে চারা অবস্থায় আংগুলী ঘাস দমন করা সহজ।

*             গাছ বড় হয়ে গেলেও ফুল আসা বা ফল পাকার আগেই তুলে ফেলা উচিৎ।

ডি সেটিজেরা রুথ ইক্স আর এবং এস

ইহা মোটামুটি আংগুলী ঘাস-এর মত, কিন্তু সাধারণতঃ আরো বেশী লম্বা (১মি. বা বেশী) হয়। পাতার খোল সাধারণতঃ লোমবিহীন একটি সাধারণ দণ্ডের ৬ সে.মি. পর্যন্ত ৫-৬টি রেসিম (অনিয়ত) চক্রাকারে সাজানো থাকে। নীচের বর্মপত্রিকা নেই বা থাকরেও অতি ক্ষুদ্র শিরাবিহীন পাতলা ঝিল্লীর মত।

প্রতিকার

*             ইহার দমনের নিয়মাবলী আংগুলী ঘাসের মত।

ক্ষুদে শ্যামাঘাস বা ইকাইনাক্লোয়া কোলোনা (এল) লিংক

মসৃণ, ৭০-৭৫ সে মি লম্বা গুচ্ছযুক্ত এক বর্ষজীবি ঘাস। ইহা সাধারণতঃ মাটির উপর ছড়িয়ে থাকে এবং নীচের গীটে শেকড় গজায়। কাণ্ড চ্যাপ্টা, গোড়ার দিকে সচরাচর লাল বেগুনী রঙের এবং গীট সাধারণতঃ মোটা থাকে। পাতার খোল মসৃণ এবং মাঝে মধ্যে চ্যাপ্টা হয়। পাতার খোলের কিনারগুলোর উপরিভাগ মুক্ত থাকে এবং গোড়ার অংশ কখনো লালচে হয়। পাতার ফলক মসৃণ, চওড়া, সরল তলোয়ারাকৃতি এবং নরম। ইহা ২৫ সে মি পর্যন্ত লম্বা এবং ৩-৭ মি মি চওড়া হয়। ইহাতে কখনো কখনো বেগুনী রঙের তীর্যক ডোরা রেখা থাকে।

সবুজ  থেকে বেগুনী রঙের পুষ্পবিন্যাস ৬-১২ সে.মি. লম্বা এবং ৪-৮ টা খাটো, ১-৩ সে.মি. লম্বা ও ৩-৪ মি.মি. চওড়া ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট উর্ধমুখী ছড়া। শাখাগুলো বড় থেকে ক্রমশঃ ছোট ছড়াগুলো প্রধান শাখায় একটির পর আরেকটি সাজানো থাকে। কীলক মঞ্জুরীগুলো গোলাকার থেকে ডিম্বাকৃতি সুঁচালো ২-৩ মি মি লম্বা এবং শাখার এক প্রান্ত বরাবর চার সারিতে ঘনভাবে সাজানো থাকে। এরা প্রায় বোঁটাহীন, কখনো কখনো প্রায় ১ মি মি লম্বা শুংযুক্ত। ফল গোলাকৃতির ক্যারিওপ্সিস্ । বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে।

প্রতিকার

*             বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতির সাথে এ আগাছা যেন না মিশে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

*             কাঁচি বা নিড়ানীর সাহায্যে উপড়িয়ে দমন করা দরকার।

*             ধানের জমিতে পানি জমা রাখা এবং ধান পাকার আগেই ক্ষুদে শ্যামা দমন করা যায়।

শ্যামাঘাস-১

শ্যামা ঘাস বা ইকাইনোক্লোয়া ক্রাসগেলি (এল) বেভ এস এস পি হিসপিডুলা (রেটজ) হোণ্ডা।

একটি খাড়া ২ মি পর্যন্ত লম্বা এক বর্ষজীবী ঘাস যার শিকড় ঘন এবং কাণ্ড শক্ত ও ছিদ্র বহুল। কাণ্ডের গোড়ার দিকে কখনো কখনো চাপা থাকে। পাতা সরল ৪০ সে.মি. লম্বা এবং ৫-১৫ মি.মি. চওড়া।

পাটল থেকে বেগুনী, মাঝে মধ্যে সবুজ বর্ণের পুষ্পবিন্যাস ১০-২৫ সে.মি. নরম এবং ঘন কীলক মঞ্জুরী বিশিষ্ট হেলে পড়া ছড়া। সর্বনিু শাখা-প্রশাখাগুলো সবচেয়ে বড়, মাঝে মধ্যে ১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকার সময় ছড়াগুলো পুনরায় শাখা ছাড়ে এবং ছড়িয়ে থাকে। সাধারণতঃ প্রধান শাখার গীটগুলো লোমযুক্ত হয়। কীলক মঞ্জুরীগুলো ডিম্বাকৃতি এবং সুঁচালো, ৩.০-৩.৫ মি মি লম্বা এবং প্রায়শই কিছুটা লোমশ। পাকার সময় তারা সহজেই ঝরে পড়ে। নীচের বর্ম পত্রিকা কীলক মঞ্জুরীর তিন ভাগের এক থেকে পাঁচ ভাগের তিন ভাগ অংশের সমান। শুংগুলো প্রধানতঃ লাল বা বেগুনী রঙের এবং ২.৫ সে মি লম্বা। প্রথম ক্ষুদ্র পুষ্পিকার বড় তুষ বা ‘লেম’ সমতল বা কিছুটা উত্তল ও বিবর্ণ। ফল ২ মি মি লম্বা একটি ক্যারিওপ্সিস্। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।

প্রতিকার

*             শ্যামা ঘাস দমনের নিয়মাবলী ক্ষুদে শ্যামার মতনই, তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিৎ। যেমন আউশ ধান ও শ্যামা ঘাসের বীজ একই সময়ে পাকে বলে বীজধানের সাথে শ্যামার বীজ মিশে পুনরায় জমিতে জন্মানোর সুযোগ পায়। সেজন্য শ্যামার বীজ পাকার আগেই দমন করা গেলে উহার বংশ বিস্তার রোধ করা যায়।

শ্যামাঘাস-২

শ্যামাঘাস বা ই গ্লাব্রিসেনস্ মুনরো এক্স হুক এফ। ইহা ই ক্রাসগেলির মত, তবে কেবল ০.৫-১ মি উঁচু হয়। পাতার ফলক সুঁচালো। পাতার খোলগুলো প্রায় বন্ধ এবং মাঝে মধ্যে ছড়ানো থাকে। কীলক মঞ্জুরীগুলো ডিম্বাকৃতি এবং প্রায় ৩ মি মি লম্বা হয়। প্রথম ক্ষুদ্র পুষ্পিকার বড় তুষ ব ‘লেমা’ বাহিরের দিকে বাঁকা এবং উজ্জ্বল। শুং থাকলে প্রায় ১ সে.মি. লম্বা হয়।

প্রতিকার

*             শ্যামাঘাস দমনের জন্য শ্যামা বা ক্ষুদে শ্যামার মত প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা ছাড়াও হাত, নিড়ানী বা কাঁচির সাহয্যে তুলে দমন করা যায়।

চাপড়াঘাস

চাপড়া বা ইলিউসাইন ইনডিকা (এল) গেয়ারটন

একটি মসৃণ, বা কিছুটা লোমশ গুচ্ছযুক্ত ঘাস। ভুমিতে শায়িত থেকে খাড়া, ৩০-৯০ সে মি লম্বা এক বর্ষজীবি ঘাস। সাদা বা ধূসর বর্ণের কাণ্ডটি পার্শ্বে চওড়া, মসৃণ বা ধার বরাবর কিছু লম্বা লোমযুক্ত। পাতার খোল ৬ – ৯ সে মি লম্বা, পার্শ্বে চওড়া, এবং ফলক সন্ধিতে কয়েকটি লম্বা লোম আছে। পাতার ফলক সমতল বা ভাজ করা রৈখিক তলোয়ারকৃতি ১০-৩০ সেমি লম্বা এবং ৩-৬ মি মি চওড়া। কিনার সমান্তরাল প্রায় এবং অগ্রভাগ অপেক্ষাকৃত ভোতা। ইহার উপরিভাগে কিছু ছড়ানো লোম আছে। লিগিউল পাতলা ঝিল্লির মত, অগ্রভাগ খাজকাটা পাতার খোল ও ফলকের সন্ধিস্থলের ধার বরাবর লম্বা লোম আছে।

পুষ্পবিন্যাসের গোড়ার দিকে বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত থাকে। মাঝে মাঝে নীচের গীটগুলো থেকে শিকড় গজায়। আগার দিকের ৩-৬ টি ছড়া ৪-৮ সে মি লম্বা এবং ৩-৬ মি মি চওড়া হয়। মাঝে মাঝে এগুলোর ঠিক নীচে ১-২ টি অতিরিক্ত ছড়াও থাকে। অসংখ্য কীলক মঞ্জুরী বোঁটাশূন্য, শূংবিহীন, ৪-৫ মি মি লম্বা, পার্শ্বে চাপা এবং চওড়া যা প্রধান শাখার নীচ বরাবর দু’সারিতে ঘন ভাবে সাজানো থাকে।

প্রতিকার

*             আউশ ও চাপড়ার বীজ এক সংগে গজায়। সেজন্য আউশ ধানের বীজের সাথে চাপড়ার বীজ থাকরে তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বপন করা উচিৎ।

*             নিড়ানী বা কাঁচির সাহায্যে শিকড় সহ চারাগাছ ভাল করে তুলে দিলে পরবর্তী মৌসুমে চাপড়ার আক্রমন কমে যায়।

*             এছাড়া চাপড়া ঘাস দমনের জন্য গাছ ফুল বা ফল আসার আগেই চাষ ও মই দিয়ে অথবা হালকা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে দমন করা যায়।

ফিমব্রিসটাইলিস মিলিয়েসি (এল) ভাল (প্রতিশব্দ এফ লিট্টোরারিস)

খাড়া, গুচ্ছভুক্ত, ২০-৭০ সে.মি. লম্বা একবর্ষজীবী বিরুৎ (সেজ)। কাণ্ড নরম , গোড়ার দিকে চ্যাপটা এবং উপরে ৪-৫টা শক্ত কোনা আছে। পুষ্পকাণ্ড ০.৫-১.৫ মি.মি. মোটা এবং পুষ্পবিন্যাসের চেয়ে খঅটো ২-৪টি অসমান মঞ্জুরীপত্র রয়েছে। গোড়ার পাতাগুলো ৩৫ মিমি লম্বা, ১.০-২.৫ মি.মি. চওড়া এবং পাতার খোল মোটামুটিভাবে একে অপরের উপর অবস্থান করে। কাণ্ডের পাতাগুলোর ফলক খুবই ছোট।

পুষ্পবিন্যাস শিথিলভাবে ছাড়ানো পূর্ণযৌগিক আম্বেল (ছাতাকৃতি), ৬-১০ সে.মি. লম্বা এবং ২.৫-৪.০ সে.মি. চওড়া। ইহার অসংখ্য একক কীলক মঞ্জুরী গোলাকার, বাগামী বা খড় বর্ণের এবং ২.০-২.৫ মি মি চওড়া ব্যাস বিশিষ্ট।

ফ্যাকাশে সাদা থেকে বাদামী বর্ণের ফল ত্রিকোনী একিন যা ০.৫-১.০ মি.মি. লম্বা এবং ০.৭৫ মি.মি. চওড়া হয় এবং প্রত্যক ধারে তিনটি শিরা রয়েছে। বীজদ্বারা বংশ বিস্তার করে।

প্রতিকার

*             নিড়ানী বা কাঁচি দিয়ে চারাগাছ তুলে ইহা দমন করা যায়।

*             বীজ পাকার আগেই দমন করলে উহার বংশ বিস্তার রোধ করা যায়।

*             আগাছায় বীজ নেই এমন ধানের বীজ বপন করা দরকার।

কলমিলতা

কলমিলতা বা আইপোমোয়ি আকুয়াটিকা ফরস্ক

একটি মসৃণ, ব্যাপকভাবে ছড়ানো বহুবর্ষজীবি লতা। ইহার কাণ্ডগুলো লতিয়ে চলে অথবা কখনো কখনো কাদার উপর কুণ্ডলী  পাকিয়ে থাকে, কিন্তু যখন পানিতে ভাসে তখন ফাপা নলের মত। কলমিলতার গীটসমূহ থেকে শেকড় গজায়। পাতাগুলো সরল ৭-১৫ সে মি লম্বা ও প্রায় ৩.৫ সে মি চওড়া এবং সূচালো আগাসহ আয়তাকার থেকে গোলাকার। পাতার কিনারগুলো সমান বা কিছুটা খাছকাটা। বোঁটাগুলো ২.৫-১৫.০ সে মি লম্বা। সাদা থেকে ঘিয়া বা বেগুনী বর্ণে মাত্র একটি ফুল পাতার গোড়ায় জন্মে এবং ফুলটি ৫-১৫ সে মি লম্বা বোটাযুক্ত হয়।

ফুল গোলাকার, খোসা দিয়ে ঢাকা এবং প্রায় ১ সে.মি. লম্বা হয়। ইহার দুটা কক্ষে চারটা বীজ থাকে। হালকা বাদামী বর্ণের বীজ প্রায় ৪ মি মি লম্বা এবং ৫-৭ মি মি চওড়া, মসৃণ অথবা খাটো, ঘন ও ধূসর বর্ণের লোমযুক্ত হয়। বীজ বা গাছ থেকে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।

প্রতিকার

*             কলমিলতা দমনের জন্য সাধারণতঃ হাত দিয়ে ছিড়ে বা কাঁচি দিয়ে কেটে গাছ তুলে ফেলা হয়।

*             প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে কলমিলতা পরিস্কারের সময় উহার কাটা খণ্ড টুকরা যাতে জমিতে না পড়ে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

*             বীজ পাকার আগেই কলমিলতা দমন করা উচিৎ।

ইসকায়েমাম রুগোসাম সেলিস

ইহা একটি আগ্রাসী খাড়া বা ছড়ানো গুচ্ছভুক্ত এক বর্ষজীবী ঘাস। ইহা ০.৬-১.২ মি লম্বা এবং ইহার দুটি লম্বা শুংযুক্ত রেসিম ও শিরাযুক্ত কীলক মঞ্জুরী রয়েছে। লোমযুক্ত গীটসহ কাণ্ডগুলো বেগুনী বর্ণের। ফুল হওয়া কাণ্ডগুলোর গীটে লম্বা লোম আছে। পাতার ফলকগুলো সরল তলোয়ারাকৃতি ১০-৩০ সে.মি. লম্বা ও ৫-১৩ মি.মি. চওড়া এবং উভয় পার্শ্বে ছড়ানো লোম আছে। লোমশ কিনারসহ সবুজ বা বেগুনী রঙের পাতার খোল টিলা থাকে।

পাকার সময় পুষ্পবিন্যাস ৫-১০ সে মি লম্বা দুটি রেসিমে বিভক্ত হয়। হলদে সবুজ কীলক মঞ্জরীগুলো ৬ মি.মি. লম্বা জোড় হিসেবে থাকে যার একটি বোঁটাবিহীন ও অন্যটি ৬ মি.মি. লম্বা বোঁটাযুক্ত হয়। শুংগুলো ১.৫-২.৫ সে.মি লম্বা, সরু এবং গোড়ার দিকে কোঁকড়ানো। নীচের বর্মপত্রিকাগুলোর ৩-৬ টা সুস্পষ্ট শিরা রয়েছে।

ফল লালচে বাদামী বর্ণের কেরিওপ্সিস্, আয়ত তলোয়ারাকৃতি, আগা সুঁচালো এবং ১.৫-২.৫মি.মি. লম্বা। বীজ দ্বারা বিস্তার করে।

প্রতিকার

*             কাঁচি বা নিড়ানী দিয়ে উপড়িয়ে এ ঘাস দমন করা যায়।

*             বীজ পাকার আগেই দমন করতে পারলে উহার বংশ বিস্তার রোধ করা যায।

*             আগাছার বীজশূণ্য উন্নত জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করেও উহার দমন করা যায়।

লিপ্টোক্লোয়া চাইনেন্সিস এল নিচ

ইহা একটি দৃঢ়ভাবে গুচ্ছভুত জলজ বা আধাজলজ একবর্ষ বা স্বল্পজীবী ৩০ সে.মি. ১.০ মি উচু ঘাস। ইহা সাধারণতঃ পূর্ব দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। দুর্বল থেকে শক্ত কাণ্ডগুলো কখনো কখনো লালচে থেকে বেগুনী বর্ণের হয়। পাতার ফলক চওড়া এবং আগার দিকে সূচালো সরল, ১০-৩০ সে.মি. লম্বা এবং ০.৩-১.০ সে.মি. চওড়া। লিগিউল ১-২ মি.মি. লম্বা এবং অগভীরভাবে লোমের মত অংশে বিভক্ত। পুষ্পবিন্যাসটি একটি ছড়া যার প্রধান শাখা ১০-৪০ সে.মি. লম্বা হয়। ইহার ৫-১৫ সে.মি. লম্বা অসংখ্য শাখা-প্রশাখাগুলো সোজা এবং ছড়ানো। কীলক মঞ্জুরীগুলো ২.৫-৩.৫ মি.মি. লম্বা যার ৪-৬টি, সচরাচর ৫টি ফুল এবং ০.৫-০.৭ মি.মি. লম্বা ছোট বোঁটা আছে। মঞ্জুরী ধূসর সবুজ বা লাল বর্ণের হয়ে থাকে।

ফুল প্রায় ০.৮ মি.মি. লম্বা গোলাকৃতির কেরিওপ্সিস। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে।

প্রতিকার

*             লিপ্টোক্লোয়া চাইনেন্সিস দমনের জন্য গাছে ফুল বা ফল আসার আগেই চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

*             বীজ পাকার আগেই দমন করতে পারলে উহার বংশ বিস্তার রোধ সম্ভব হয়।

পানিকচু বা মনোকোরিয়া ভেজাইনালিস (বার্ম এফ) প্রেসল্

পানিকচু বা নখা একটি এক বর্ষজীবি, আধাজলজ ৪০-৫০ সে মি লম্বা এবং চওড়া পাতা বিশিষ্ট আগাছা। এই এক বীজপত্রী আগাছার খাটো, মাংসল কাণ্ড এবং খুবই ছোট শেকড় আছে। পাতাগুলো উজ্জ্বল গাঢ় সবুজ, আয়তাকার থেকে ডিম্বাকৃতি এবং ইহার আগা খুবই তীক্ষè। গোলাকৃতি গোড়ার দিক ১০-১৫ সে মি লম্বা এবং ৩.৫ সে মি চওড়া। বোটাগুলো ১০-১২ সেমি লম্বা নরম, ফাঁপা এবং লম্বালম্বি শিরা-উপশিরাযুক্ত। পুষ্পবিন্যাসটি ১ সে.মি. লম্বা ফুল থাকে যা পাতার মত একটা আবরণী থেকে বের হয়। ফুলের বোঁটাগুলো লম্বায় ১ সে.মি এর চেয়েও কম।

খোসাযুক্ত ঢাকা ফল প্রায় ১ সেমি লম্বা এবং তিন ভাগ বিস্তার করে থাকে।

প্রতিকার

*             হাত দিয়ে তুলে বা হাল চাষ দিয়ে পানিকচু দমন করা যায়।

*             বীজ পাকার আগেই আগাছা দমন করলে বংশ বিস্তার রোধ করা যায়।

ঝরাধান বা লালধান (অরাইজা সেটাইভা এল)

ঝরা বা লালধানকে জংলী ধানও বলা হয়।  এ ধান চাষাবাদ যোগ্য ধানের মতই এবং এর সংগে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন ঘটে থাকে। কিন্তু চাষযোগ্য ধানের সংগে বৈসাদৃশ্য এই যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধানগুলো পুরোপুরি পাকার আগেই ঝরে পড়ে এবং ছড়া খাড়া থাকে। অবশ্য যেগুলোতে ধান ঝরে পড়ে না সেগুলোর ছড়া নুয়ে পড়ে। কীলক মঞ্জুরীগুলো শুংযুক্ত বা শুংবিহীন হতে পারে এবং শুংয়ের দৈর্ঘ্যের ব্যাপক হেরফের ঘটে। পাকা ধানে খোসাগুলো খড়ের রং কালচে হয়। চালের বহিরাবরন রঙীন। ইহা পাকার সময় ও বীজের বয়স অনুযায়ী ধুসর থেকে লাল বর্ণে রূপান্তরিত হয়। বীজগুলো মাটিতে বহুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে, কিন্তু যদি চাষাবাদযোগ্য ধানের মত কাটা ও ব্যবহার করা যায় তাহলে সুপ্ত অবস্থা ভেংগে দেয়া সম্ভব।

প্রতিকার

*             কোদলানো, নিড়ানো বা হাল চাষ দিয়ে ঝরাধান দমন করা যায়।

স্ফীনোক্লিয়া জিলেনিকা গেয়ারটন

ইহা মসৃণ, শক্ত, মাংসল, বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ও ০.৩-১.৫ মি উঁচু কাণ্ডসহ একটি খাড়া ও এক বর্ষজীবি চওড়া পাতা আগাছা। পাকমেরে সাজানো পাতাগুলো সাধারণ গোলাকার থেকে তলোয়ারকৃতির, ১০ সেমি লম্বা এবং ৩ সে মি চওড়া। পাতাগুলোর আগা চিকন থেকে সূচাকৃতির। তাদের ছোট বোঁটা এবং নিখাঁজ কিনার রয়েছে।

সবুজ রঙের পুষ্পবিন্যাস ৮ সে.মি. লম্বা বোঁটার উপর অবস্থিত। ইহা ৭.৫ সে.মি. লম্বা এবং ১২ মি.মি. চওড়া একটি গিজানো ছড়া। গাঢ় সাদা থেকে সবুজ বর্ণের ফুলগুলো প্রায় ২.৫ মি.মি. লম্বা এবং  ২.৫ মি.মি. চওড়া হয়ে থাকে।

ফল একটি গোলাকার বীজকোষ, ৪-৫মি.মি চওড়া ও খাড়াভাবে বিভক্ত। ইহার হলদে বাদামী বর্ণের অসংখ্য বীজগুলো ০.৫ মি.মি. লম্বা। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে।

প্রতিকার

*             হাত বা কাঁচি দিয়ে উপড়ে এ আগাছা দমন করা যায়।

*             বীজ পাকার আগে দমন করলে বংশ বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়।

নাইট্রোজেনের অভাবজনিত লক্ষণ

ধানগাছের বাড়-বাড়তির বিভিন্ন ধাপে যখন জমিতে নাইট্রোজেন সীমিত হয়ে পড়ে তখন তার পার্থক্য চোখে ধরা পড়ে। গাছের প্রথম বয়সে নাইট্রোজেনের অভাব হলে পাতা হলুদ বা হলদে সবুজ রং ধারণ করে এবং গাছের বাড়-বাড়তি ও কুশীর সংখ্যা কম হয়। এ অভাব যদি শেষ সময় পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে, তবে প্রতি ছড়ায় ধানের সংখ্যা কমে যায়। গাছ প্রথম বয়সে যদি পর্যাপ্ত কিন্তু শেষ বয়সে কম নাইট্রোজেন পায়, তবে পুরাতন পাতা প্রথমে হলদে হয়ে যায় এবং নতুন পাতা স্বাভাবিক রঙের হয়ে থাকে। অবশেষে সম্পূর্ণ মাঠের ফসল সমানভাবে হলদে দেখা দেখায়।

অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের দরুন গাছ নুয়ে পড়ে এবং রোগবালাই আক্রমণের প্রবণতা বাড়ে।.

প্রতিকার

*             অভাবের তীব্রতা লক্ষ্য করে এবং ধানের জাত ভেদে বিঘা প্রতি  ১৫-৩০ সের ইউরিয়া সার দুই-তিন কিস্তিতে ব্যবহার করুন।

*             জমিতে রোপা লাগানো ১৫-২০ দিন পূর্বে প্রচুর পরিমাণ  গোবর সার বা সবুজ সার প্রয়োগ করুন।

ফসফরাসের অভাবজনিত লক্ষণ

এ উপাদানের অভাবে ধানগাছে কুশীর সংখ্যা কম ও গাছ খাটো হয় এবং ধান কম পুষ্ট হয়। ফসফরাসের অভাবে পাতা খাড়া হয় এবং গাঢ় সবুজ বর্ণের রং ধারণ করে যা গাছের স্বাভাবিক পাতা হতে সম্পূর্ণ আলাদা। কোন কোন জাতের ধানগাছের পুরাতন পাতা কমলা রং ধারণ করে।

ফসফরাসের অভাবে সচরাচর অত্যাধিক অম্ল, অম্লগন্ধক, জৈব (পিট) এবং ক্ষার জাতীয় মাটিতে দেখা যায়। এ উপাদান সাধারণতঃ শুকনো মাটি থেকে ভেজা বা প্লাবিত মাটিতে সহজলভ্য।

প্রতিকার

*             জমি শেষ চাষের সময় বা গাছের প্রথম অবস্থায় বিঘা প্রতি ২০-২৫ কেজি টিএসপি সার ব্যবহার করুন।

*             মাটি বেশী অম্লময় বা ক্ষার জাতীয় হলে সারের পরিমাণ কিছু বাড়িয়ে দিন এবং সার গাছের গোড়ার কাছে ব্যবহার করুন।

পটাশিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ

পটাশিয়ামের সামান্য অভাবে ধানগাছের পাতার রং গাঢ় সবুজ, কুশীর সংখ্যা কম এবং গাছ খাটো হয়। অভাব খুব প্রকট হলে প্রথমে বয়স্ক পাতার আগার দিকে হলদে কমলা বা হলদে বাদামী বিবর্ণ রং ধারণ করে। পরে এই রং আস্তে আস্তে পাতার গোড়ার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পটাশিয়ামের অভাবে পাতার ওপর মরা দাগ পড়ে, ধানের আকার ছোট হয় এবং ওজন কমে যায়।

পটাশিয়ামের অভাবে সাধারণতঃ হালকা বেলে বা জৈব মাটিতে বেশী দেখা দেয়। তাছাড়া যে সব মাটির পটাশ শোষণ ক্ষমতা খুব বেশী, সে সব মাটিতেও পটাশিয়ামের অভাব হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

প্রতিকার

*             বিঘাপ্রতি ১০-১২ সের পটাশ সার অর্থাৎ এমপি ব্যবহার করে এ অভাব দুর করা যায়।

*             হালকা মাটিতে পটাশ সার দুই কিস্তিতে ব্যবহার করুন।

*             চুলার ছাই এবং কচুরীপানা ব্যবহার করে পটাশিয়ামের অভাব অনেকাংশে মেটানো যায়।

গন্ধকের অভাবজনিত লক্ষণ

গন্ধকের অভাবে ধানগাছের নতুন পাতা হলদে বা ফ্যাকাশে বিবর্ণ রং ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে পুরাতন পাতাও হলদে হয়ে যায়। কালক্রমে সম্পূর্ণ গাছই হলদে রং ধারন করে। অপরপক্ষে নাইট্রোজেনের অভাবে প্রাথমিকভাবে শুধু পুরাতন পাতা হলদে বিবর্ণ হয়ে যায়। গন্ধকের অভাবে গাছ খাটো এবং কুশীর সংখ্যা কম হয়।

যে সব মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম সে সব মাটিতেই সাধারণতঃ গন্ধকের অভাব হয়ে থাকে। জমি অনেকদিন ডুবে থাকলে দ্রবীভুত গন্ধক অদ্রাব্য গন্ধকে পরিবর্তিত হয়ে গন্ধকের অভাবকে আরো তীব্রতর করে তোলে।

প্রতিকার

*             প্লাবিত বা ভেজা মাটি মাঝে মধ্যে ভালভাবে শুকিয়ে দিন।

*             প্রচুর পরিমণ গোবর ও সবুজ সার ব্যবহার করুন।

*             বিঘাপ্রতি ২০-২৫ কেজি জিপসাম বা ১০-১২ কেজি এ্যামোনিয়াম সলফেট সার ব্যবহার করুন।

সিলিকনের অভাবজনিত লক্ষণ

এ উপাদানের অভাবে ধানগাছের পাতা সাধারণতঃ নুয়ে পড়ে। এতে পাতা কম পরিমাণ সূর্যের আলো গ্রহণ করতে পারে এবং ফলন কম হয়। গাছ অধিক পরিমাণ সিলিকা গ্রহণ করলে পাতা অধিকতর সোজা ও খাড়া হয়ে থাকে এবং এতে সূর্যের আলো বেশী পায়। পরিমিত সিলিকা থাকলে গাছে কোন কোন রোগ ও পোকার উপদ্রব কম হয়। গড়ে শতকরা ৫ ভাগের কম সিলিকা হলেই এ উপাদানের অভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে।

প্রতিকার

*             পর্যাপ্ত পরিমাণ তুষ, খড় ও কমপোস্ট সার ব্যবহার করে সিলিকনের অভাব দুর করা যায়।

দস্তার অভাবজনিত লক্ষণ

ধান বোনা বা রোপণের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যেই এ উপাদানের অভাব জনিত লক্ষণ দেখা যায়। এ সময় কচি পাতার মধ্য শিরা বিশেষ করে গোড়ার দিকে সাদা হয়ে যায়। পুরাতন পাতায় মরিচা পড়ার মত ছোট ছোট দাগ দেখা দেয়। দাগগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে এক সাথে মিশে সম্পূর্ণ পাতাকে বাদামী রঙের করে তোলে। এ উপাদানের অভাবে গাছ খাটো এবং কুশীর সংখ্যা কম হয়। অভাব খুব বেশী হলে সম্পূর্ণ গাছই মারা যায়। অভাব মাঝারি ধরণের হলে ধান পাকতে সময় বেশী নেয় এবং ফলন কম হয়।

সে সব মাটিতে ক্যালশিযাম কার্বনেট এবং ক্ষারের পরিমাণ বেশী সে সব মাটিতেই সাধারণতঃ দস্তার অভাব হয়ে থাকে। জৈব (পিট) ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতজনিত মাটি এবং যে সব মাটি বৎসরের সব সময়ই ভেজা থাকে সে সব মাটিতেও দস্তার অভাব হতে পারে। অত্যাধিক নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস সার ব্যবহারে দস্তার অভাব তীব্রতর হয়।

প্রতিকার

*             জমি সাময়িকভাবে শুকিয়ে নিন।

*             বিঘাপ্রতি ২-৩ কেজি দস্তা (জিংক) সালফেট সার ব্যবহার করুন।

*             রোপণের পূর্বে জিংক অক্সাইড পাউডার মিশ্রিত পানিতে চারার গোড়া ৫ মিনিটের জন্য চুবিয়ে নিন। প্রতিসের পানিতে আধা ছটাক পাউডার মিশ্রণ তৈয়ার করুন।

*             ক্ষার জাতীয় মাটিতে জিংক সালফেট পানির সাথে মিশিয়ে ¯েপ্র- মেশিনের সাহায্যে রোপা লাগানোর ১০-১১ দিনের মধ্যে প্রথম বার এবং ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার ধানগাছের পাতার উপর ছিটিয়ে দিন। বিঘাপ্রতি দেড় পোয়া পরিমাণ জিংক সালফেট ১৫-২০ গ্যালন পরিস্কার পানির সাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈয়ার করুন।

লবণাক্ততাজনিত লক্ষণ

বেশি লোনার জন্য উপরের অর্র্থাৎ নূতন পাতা সাদাটে বিবর্ণ হয় এবং মুড়িয়ে যায়। পুরাতন পাতা বাদামী রং ধারণ করে এবং গাছের বাড়-বাড়তি অসমান, গাছ খাটো ও কুশী কম হয়। লবনাক্ততাজনিত সমস্যা সাধারণতঃ শুষ্ক অঞ্চলীয় জমিতেই বেশী দেখা যায়। সেখানে পানি নিষ্কাশন খুব কম হয় এবং বৃষ্টির চেয়ে বাষ্পীয়-ভবন বেশী হয়ে থাকে। আদ্র অঞ্চলের উপকুলবর্তী এলাকার পলিমাটি যা সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হয় সেখানেও এ সমস্যা দেখা যায়।

প্রতিকার

*             ধান চাষের সময় জমিতে সব সময় কিছু পানি ধরে রাখুন।

*             বৃষ্টি বা মিষ্টি পানির সাহায্যে সেচ দিন।

*             অধিক লবণ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান রোপন করুন।

ক্ষারত্বজনিত লক্ষণ

অধিক ক্ষারত্বের জন্যে পাতার রং সাদা বা লালচে বাদামী বিবর্ণ হয়। এ লক্ষণ প্রথমে পাতার অগ্রভাগ হতে শুরু হয়। যে সব জাত অতি সহজে আক্রান্ত হয় তাদের বিবর্ণতা গোড়ার দিকে ছড়িয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে সম্পূর্ণ গাছকে পড়ে যাওয়ার মত দেখায় (ছবি ১৩৫)। গাছ খাটো ও কুশী কম হয়। ক্ষারত্বজনিত সমস্যা সাধারণতঃ আধা-শুষ্ক অঞ্চলীয় মাটিতে দেখা যায় এবং লবণাক্ততার সাথে জড়িত থাকে। খুব বেশী ক্ষার জাতীয় মাটিতে দস্তা, তামা এবং ফসফরাসের অভাবও হতে পারে।

প্রতিকার

*             পর্যাপ্ত জিপসাম এবং সেচ-নিষ্কাষণ ব্যবহার করে ক্ষারত্বের পরিমাণ কমিয়ে নিন।

*             অধিক ক্ষার প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করুন।

লোহার আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া

অধিক লোহার জন্য নীচের অর্থাৎ পুরাতন পাতার আগার দিকে বাগামী রঙের ছোট ছোট দাগ হয়। পরবর্তীকালে সমস্ত পাতা বাদামী হলদে বা কমলা লেবুর রং ধারণ করে। বিষক্রিয়া প্রকট হলে পাতা বাদামী রঙের দেখায় এবং নীচের পাতা মরে যায়। গাছের বাড়-বাড়তি ও কুশী কম হয়। এ উপাদানের বিষক্রিয়ার দরুন শেকড় কম, মোটা ও গাঢ় বাদামী রঙের হয়।

অম্লজাতীয় মাটিতে বেশী পরিমাণে লোহা থাকলে এ বিষক্রিয়া হতে পারে। লোহার বিষক্রিয়ার দরুন অক্সিছল, আলটিছল, কিছু হিসটোছল এবং অম্লগন্ধক জাতীয় মাটিতে ফলন কম হয়।

প্রতিকার

*             প্রচুর পরিমাণ চুন ব্যবহার করে অম্লত্বের পরিমাণকমিয়ে ফেললে লোহার আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া কমে যাবে।

*             লোহার বিষক্রিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের ধান চাষ করুন।

জৈব (পিট) মাটি

জৈব মাটিতে গাছ খাটো এবং কুশী কম হয়, পাতা হলদে বা বাদামী রঙের হয়ে থাকে এবং ধানের সংখ্যা ও পুষ্টিতা কমে যায়।

পিট মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব বেশী এবং সামান্য অম্লতা থাকে। এ ধরনের মাটিতে দস্তা ও তামার অভাব হয়ে থাকে।

প্রতিকার

*             এই জাতীয় মাটিতে দস্তা ও তামা ¯েপ্র হিসাবে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

*             সম্ভব হলে মাঝে মধ্যে মাটি ভাল করে শুকিয়ে নিন।

বোরণের আধক্যজনিত বিষক্রিয়া

এ উপাদানের বিষক্রিয়ায় প্রথমে পাতার আগার দিকে হলদে বিবর্ণ দেখায় এবং পরে তা পাতার কিনারা ঘিরে নীচের দিকে ছড়াতে থাকে। তাছাড়া চোখের মত বাদামী রঙের বড় দাগও পাতার কিনারায় দেখা যায়। আক্রান্ত অংশ বাদামী রঙের হয়ে শুকিয়ে যায়। বিষক্রিয়া খুব প্রকট না হলে গাছের বাড়-বাড়তি স্বাভাবিকই হয়ে থাকে।

বোরণের বিষক্রিয়া সাধারণতঃ উপকূলবর্তী এবং শুষ্ক অঞ্চলের মাটিতে দেখা যায়। তাছাড়া সেচের পানিতে অধিক পরিমাণ বোরন থাকলে এ উপাদানের বিষক্রিয়া দেখা দিয়ে থাকে।

 প্রতিকার

*             বোরনমুক্ত সেচের পানি ব্যবহার করুন।

*             বোরন বিষক্রিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করুন।

এ্যালুমিনিয়ামের আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া

এ উপাদানের বিষক্রিয়ার দরুন পাতার দু’শিরার মাঝখানে সাদা বা হলুদ রঙের দাগ হয়। পাতা প্রথমে শুকিয়ে পড়ে এবং মরে যায়। গাছ খাটো, শেকড় কম ও ছোট হয়।

পানিতে দ্রবীভুত এর্ব বিনিময়যোগ্য অতিরিক্ত এ্যাণুমিনিয়াম থাকলে এর বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। এ বিষক্রিয়া অম্লগন্ধক জাতীয় মাটিতে রোপা ধানের এবং খুব বেশী অম্লজাতীয় মাটিতে বোনা ধানের বাড়-বাড়তি ও ফলনকে কমিয়ে দেয়।

ম্যাংগানিজের আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া

পুরাতন পাতার উপর বাদামী রঙের দাগ, পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে যাওয়া এবং ধানে খুব বেশী চিট হওয়া এ বিষক্রিয়ার প্রধান লক্ষণ। এ বিষক্রিয়ার দরুন গাছের বাড়-বাড়তির তেমন উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতি হয় না। অম্লজাতীয় মাটিতে বোনা ধানে সাধারণতঃ এ উপাদানের বিষক্রিয়া দেখা যায়।

প্রতিকার

*             পর্যাপ্ত চুন ব্যবহার করে মাটির অম্লতা কমিয়ে ফেলুন। এতে উভযের বিষক্রিয়া অনেক  কমে যাবে।

*             অধিক প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করুন।

ধানের প্রধান প্রধান পোক-মাকড় দমনের জন্য কীটনাশকের নাম ও প্রয়োগ মাত্রা।

মাজরাপোকা গলমাছি

কীটনাশকের সাধারণ নাম  -কীটনাশকের বাণিজ্যিক নাম-  প্রযোগমাত্রা প্রতি হেক্টর

ডাইক্রোটোফস  বাইড্রিন ৮৫ তরল            ৮৪০ মি লি

ফসফামিডন       ডাইমেক্রন ১০০ তরল    ৮৪০ মি লি

ডায়াজিনন          ডায়াজিনন ৬০ তরল

ডায়াজিনন ১৪ দানাদার

বাসুডিন ১০ দানাদার       ১.৬৮ লিটার

১৩.৫ কেজি

১৬.৮ কেজি

 ফেনথোয়েট        এলসান ৫০ তরল             ১.৬৮ লিটার

 ফেনথিয়ন           লিবেসিড ৫০ তরল          ১.১২ লিটার

 ফেনিট্রোথিয়ন   সুমিথিয়ন ৫০ তরল         ১.১২ লিটার

কারট্যাপ              পাদান ৫০ গুড়া

পাদান ১০ দানাদার           ১.৪ কেজি

১৬.৮ কেজি

মনোক্রটোফস    এজেড্রিন ৪০ তরল          ১.৬৮ কেজি

কারবোফুরান      ফুরাডান ৩ দানাদার

কিউরেটার ৩ দানাদার     ১৬.৮ কেজি

১৬.৮ কেজি

 কুইনালফস       ইকালাক্স ৫ দানাদার        ১৬.৮ কেজি

বাদামী গাছফড়িং সাদা-পিঠ গাছফড়িং

কীটনাশকের সাধারণ নাম            কীটনাশকের বাণিজ্যিক নাম       প্রয়োগ মাত্রা প্রতি হেক্টর

ডায়াজিনন          ডায়াজিনন ১৪ দানাদার

বাসুডিন ১০ দানাদার

ডায়াজিনন ৬০ তরল       ১৫ কেজি

২০ কেজি

২ লিটার

কারবোফুরান      ফুরাডান ৩ দানাদার         ২০ কেজি

ফসফামিডন       ডাইমেক্রন ১০০ তরল    ১ লিটার

ফেনথিয়ন            লিবেসিড ৫০ তরল          ২ লিটার

ফেনিট্রোথিয়ন    সুমিথিয়ন ৫০ তরল         ২ লিটার

ডাইক্লোরভস      নাগোস ১০০ তরল           ১ লিটার

ডাইক্রোটফস     বাইড্রিন ২৪ তরল

কারবিক্রন ৫০ তরল       ১.২ লিটার

১.৬৮ লিটার

মনোক্রটোফস    এজোড্রিন ৪০ তরল         ১.৬৮ লিটার

সাইপারমেথ্রিন  রিপকর্ড ১০ তরল             ৫৬০ মি লি

আইসোপ্রকার্ব    মিপসিন ৭৫ পাউডার      ১.৬৮ কেজি

শীষকাটা লেদা লেদাপোকা

ডাইক্লোরভস      ডিডিভিপি ১০০ তরল ডাইক্লোরভস ১০০ তরল

নগোস ১০০ তরল

ভেপোনা ১০০ তরল         ৫৬০ মি লি

৫৬০ মি লি

৫৬০ মি লি

৫৬০ মি লি

পাতামাছি, পামরী, পাতা মোড়ান, চুংগী, সবুজ পাতফড়িং, ঘাষফড়িং, স্কীপার, গান্ধী এবং অন্যান্য পোকা

ম্যালাথিয়ন          ম্যালাথিয়ন ৫৭ তরল

যিথিয়ল ৫৭ তরল

ফাইফেনন ৫৭ তরল

এরুমেল ৫৭ তরল            ১.১২ লিটার

১.১২ লিটার

১.১২ লিটার

১.১২ লিটার

ফেনিট্রোথিয়ন    সুমিথিয়ন ৫০ তরল         ১.১২ লিটার

অক্সিডিমিটন মিথাইল     রগোর ৪০ তরল

পারফেকথিয়ন ৪০ তরল

রকসিয়ন ৪০ তরল          ১.১২ লিটার

১.১২ লিটার

১.১২ লিটার

ব্রমোফস                নেকসিয়ন ২৫ তরল       ১.৬৮ কেজি

কারবারিল           সেভিন ৮৫ পাউডার

নাফটিল ৮৫ পাউডার      ১.৬৮ কেজি

১.৬৮ কেজি

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ তরল ও পাউডার জাতীয় কীটনাশকগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী ৬০০ থেকে ১২০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ভালভাবে স্পে মেশিন দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। বাদামী গাছফড়িং এর জন্য গাছের গোড়ার দিকে স্প্রে করতে হবে। দানাদার কীটনাশক সারের মত ছিটিয়ে দিতে হবে। দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করতে হলে জমিতে ২-৪ ইঞ্চি পানি ৫-৭ দিন আটকে রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ক্ষেতের পানি যেন উপচে চলে না যায়।

*             এক হেকটর- প্রায় ৭.৫ বিঘা (২৪৭ শতাংশ)। এক পূর্ণ চা চামচ= ৫ মিলি লিটার (মিলি)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *